কলকাতা, 26 জুন: "আমরা দিল্লিতে চেষ্টা করছি বিজেপিকে হারাতে মহাজোট করার জন্য । এরা কালও আমাকে গালাগাল করেছে । এরা এখানে মহাঘোঁট করবে । মহাঘোঁট আমি ভেঙে দেব ।" সোমবার কোচবিহারে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে গিয়ে এই ভাষাতেই এ রাজ্যের বাম-বিজেপি ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন মমতা বনন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সুপ্রিমোর মতে, মহাজোট হবে দিল্লিতে । তবে বাংলাতে তৃণমূলই প্রধান ৷ এদিন কোচবিহারে দাঁড়িয়ে একইসঙ্গে রাজ্যের বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্বকে তোপ দেগেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে জোরদার আলোচনা চলছে । 2024 লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশের 17টি বিরোধী রাজনৈতিক দল জোট বেঁধেছে ৷ সদ্যসমাপ্ত পটনার বৈঠক থেকে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে এমন অনেক দলকে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে যারা বিভিন্ন রাজ্যে পরস্পর পরস্পরের বিরোধী, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে তারা জাতীয় ক্ষেত্রে একসঙ্গে আসতে রাজি হয়েছে ৷
আর এই জোট আলোচনায় এই রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী কংগ্রেস এবং সিপিএম উপস্থিত থাকলেও, এ রাজ্যে যে জোটের রাশ তৃণমূল কংগ্রেসের হাতেই থাকবে, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । গোটা দেশে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থীতে লড়াই এর যে ফর্মুলা তিনি বিরোধী শিবিরের সামনে এনেছেন, সেই সূত্রে তাঁর দাবি এই রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধান শক্তি হতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেসই । এদিন সেই বার্তাই দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।
সোমবার কোচবিহারের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা দিল্লিতে চেষ্টা করছি বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোট করার জন্য । এরা কালও আমাকে গালাগাল দিয়েছে । মহাঘোঁট করবে । মহাজোটই হবে দিল্লিতে । আর বাংলাটা আমরা করব ।" রাজনৈতিক মহল মনে করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের মাধ্যমে আসলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সিপিএম বা কংগ্রেস নয় তারাই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী । কারণ পঞ্চায়েতে যে কংগ্রেস বা সিপিএম বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে তারা কীভাবে লোকসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই দেবে ? এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তৃণ মূল শিবির থেকে ৷ কাজেই এরাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতাই প্রধান মুখ ।
আরও পড়ুন: সীমান্তে যারা গুলি চালাবে তাদের বিরুদ্ধেও এফআইআর হবে, নিশীথকে ঠুকে আক্রমণ মমতার
প্রসঙ্গত এদিন বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপির যে মহাঘোঁটের কথা তৃণমূল সুপ্রিয় বলেছেন তা নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ । তিনি বলেন, "সবাই জানে কে কার সঙ্গে বসে চা খাচ্ছে, কার সঙ্গে কে জোট করছে । পটনায় কারা কারা ছিল! সিপিএম, কংগ্রেস, টিএমসি । বাংলায় আবার সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফের জোট ঘোষিত রয়েছে । বিজেপিকে কেউ নিচ্ছে না বিজেপির কাউকে দরকারও নেই । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হতাশা থেকে দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আর মানুষকে ভয় দেখাচ্ছেন। ওনার সরকারের আসল চেহারা সবাই জেনে গিয়েছে । উনি মানুষকে ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে আবার জেতার চেষ্টা করছেন কিন্তু এবার আর সেটা সম্ভব হবে না ।"
একইভাবে এরই জবাব দিতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য শমিক লাহিড়ির মত, কারা বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করে নিজের পরিবারের লোকেদের গ্রেফতার হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে সেটা গোটা বাংলার মানুষ জানে । বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া করেই যে উনি নারদা এবং সারদা তদন্ত ধামাচাপা দিয়েছেন সেটা বোঝে না এমন কেউ নেই । বিনিময়ে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে আরএসএসের শাখা এবং স্কুল তৈরি করতে দিয়েছেন সেই তথ্য কারও অজানা নয় । ফলে তৃণমূল আর বিজেপি দু'টো দোকান তবে গুদামটা একই । সেটা আরএসএসের নাগপুরের গোডাউন । দেশের মানুষও এখন বুঝে গিয়েছে আরএসএসের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই উনি চলেন । গোয়া বা ত্রিপুরায় প্রার্থী দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিয়েছেন উনি । বিজেপির সঙ্গে ওনার বোঝাপড়া দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তাই বাংলার মানুষ এবার বিজেপি এবং তৃণমূল দুই শক্তিকেই প্রতিহত করবে ।
আরও পড়ুন: টাকা নষ্ট করে মোদিবাবু আমেরিকায় নেতা হতে গিয়েছেন, কটাক্ষ মমতার
এদিন এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচীও । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন তাঁর পায়ের তলা থেকে মাটি সরছে । বাংলার মানুষ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গিয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ধরনের কথাই বলতে হবে । মানুষ ঠিক করে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা থেকে উপড়ে ফেলতে হবে । শেষের সেই দিন ঘনিয়ে আসছে বুঝতে পেরেই উলটোপালটা কথা বলছেন তৃণমূল নেত্রী ।