কলকাতা, 19 এপ্রিল : ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যে কোনও শাখা বা কোর্সের ক্ষেত্রেই ইন্টার্নশিপ গুরুত্বপূর্ণ । যা আগামীতে চাকরির ক্ষেত্রেও পড়ুয়াদের সহায়তা করে । কিন্তু, কোরোনা মোকাবিলায় রাজ্যজুড়ে চলা লকডাউনে সশরীরে কোথাও গিয়ে হাতে কলমে কাজ শেখা তথা ইন্টার্নশিপ করা এখন অসম্ভব । তাই পড়ুয়াদের জন্য অনলাইনে ইন-হাউজ় ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করেছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (MAKAUT) তথা রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ।
অনলাইনে ইন্টার্নশিপ নিয়ে রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, "আমরা অনলাইন ইন্টার্নশিপ করাচ্ছি । ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব কোর্সের জন্যই অনলাইন ইন্টার্নশিপ ফ্রম হোম চলছে । আমাদের অনেক আগেই এই বিষয়ে আলোচনা হয়ে গিয়েছিল । আমরা আগেই সব বিষয়ের সিনিয়র, এক্সপার্ট টিচারদের বলে দিয়েছিলাম । তাঁরা সব প্রবলেম ডিজ়াইন করে দিচ্ছেন । সেই প্রবলেম আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিচ্ছি । টিচারদের গাইডেন্সে পড়ুয়ারা ঘরে বসে এগুলোর সমাধান করছেন । আমাদের AICTE গাইডলাইন আছে যে বাড়িতে বসেই সব করতে হবে । এখন পড়ুয়ারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা ইন্ডাস্ট্রিতে যেতে পারবেন না । তাই আমরা প্রবলেমগুলো এমনভাবে ডিজ়াইন করছি যাতে সেগুলো বাড়িতে বসে করা যায় ।" সাধারণত, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ হয় । দীর্ঘমেয়াদি ইন্টার্নশিপ ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত ও স্বল্পমেয়াদি এক সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে । অনলাইন ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের ইন্টার্নশিপ রাখা হয়েছে ।
শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সমাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন প্রবলেম তৈরি করছেন এক্সপার্টরা ও সিনিয়র টিচাররা । মূলত, যে ধরনের সমস্যার সমাধান করলে পড়ুয়াদের অভিজ্ঞতা ও প্র্যাকটিক্যাল নলেজ বৃদ্ধি হতে পারে এবং আগামীদিনে আন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ অর্থাৎ ব্যাবসা শুরুর ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে, সেই ধরনের প্রবলেম চিহ্নিত করে ডিজ়াইন করা হচ্ছে । সৈকত মৈত্র বলেন, "পড়ুয়াদের পার্সোনাল ডেভলপমেন্টের জন্য বা বিজ়নেস করার জন্য বা সে নিজে যদি কোনও ইন্ডাস্ট্রিতে জয়েন করতে চায়, সবকিছুতেই যাতে কাজে লাগতে পারে সেভাবেই প্রবলেমগুলো ডিজ়াইন করা হচ্ছে ৷" MAKAUT-এর অধীনে 200-র বেশি কলেজ আছে । বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ পড়ুয়া আছে । এই অনলাইন ইন-হাউজ় ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে কমিউনিটি অ্যাপ্রোচ ও মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচের দিকে জোর দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । উপাচার্য সৈকত মৈত্র বলেন, "আমরা প্রবলেম ডিজ়াইন করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিচ্ছি । পড়ুয়ারা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক করে সেই প্রবলেমগুলোর উপর কাজ করবে । প্রবলেম একটা দেওয়া থাকবে । স্টুডেন্টরা কমিউনিটি অ্যাপ্রোচ অর্থাৎ চার-পাঁচজন মিলে তার সমাধান করার চেষ্টা করবে । মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ করবে । যেটা আগামীদিনে বেশি করে দরকার হবে । গ্রুপে কাজ করা এবং ডিফারেন্ট ডিসিপ্লিনকে জয়েন করা । এভাবেই আমরা চেষ্টা করছি ।"
রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে শিল্পগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে । উদ্দেশ্য, কোম্পানিগুলির থেকে এই ধরনের প্রবলেম আউটসোর্সিং করা । এতে একদিকে যেমন শিল্পগুলি ছাত্রসমাজকে ব্যবহার করে অভিনব সমাধান পেতে পারে, তেমনই সেগুলো সমাধান করে পড়ুয়ারাও প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে । এ বিষয়ে সৈকত মৈত্র বলেন, "আমরা ইন্ড্রাস্ট্রিতেও অ্যাপ্রোচ করছি যে, যদি তাঁরা প্রবলেম দেয় । বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে প্রবলেম যদি তাঁরা আউটসোর্স করে তাহলে অনেক সুবিধা হবে । এখন সব জায়গাতেই ম্যান পাওয়ার কমে গেছে । সেক্ষেত্রে স্টুডেন্ট কমিউনিটির উপর নির্ভরতা বেশি হবে । তাঁদেরকে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে তাঁরা অনেক প্রবলেমের ইনোভেটিভ সমাধান করতে পারবে । আমরা অ্যাপ্রোচ করছি । কারণ, স্টুডেন্টরা অনেক ইনোভেটিভ সমাধান দিতে পারে । এদেরকে কাজে লাগাতে পারলে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ওভারহেড কস্ট অনেক কমে যাবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদেরও অনেক প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা হয়ে যায় । তবে, যেহেতু এটাতে সময় লাগবে তাই আমরা অপেক্ষা না করে প্রবলেম দেওয়া শুরু করে দিয়েছি । ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রবলেম দিলে সেগুলো আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে হাইলাইট করে দেব ।"