কলকাতা, 6 এপ্রিল : কোরোনার জেরে 21 দিন ধরে লকডাউন দেশ । অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ব্যতীত বন্ধ সমস্ত পরিবহন পরিষেবা । নানা পার্কিংয়ে কোটি কোটি টাকার মাল নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাকগুলি । বন্ধ লোডিং পয়েন্টও । আর এর জেরে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন ট্রাক মালিকরা ।
বর্তমানে গোটা রাজ্যের সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি ট্রাকের ব্যবসা বন্ধ । এবিষয়ে, ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুভাষ বসু বলেন, "লকডাউনের জেরে ছোটো ও বড় ট্রাক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি ট্রাকের ব্যবসা এখন বন্ধ । আমদানি-রপ্তানির কাজও বন্ধ । ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে ইতিমধ্যেই। চালক, খালাসি, মুটেদের পাশাপাশি ট্রাক মালিকরাও চূড়ান্ত আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।"
তিনি আরও বলেন যে, "কর্পোরেট সেক্টরের জন্য বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হলেও আমাদের সুবিধার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। গাড়িগুলি কেনার জন্য বেশিরভাগ মালিকরা ব্যাঙ্ক থেকে একটি মোটা অঙ্কের টাকা ধার করেছেন। এখন কাজ না থাকলেও ড্রাইভার -চালক-খালাসি সকলকে প্রতিদিন 600 -700 টাকা খোরাকি দিতে হচ্ছে ।"
অন্যদিকে, কিস্তির টাকা সময়মতো জমা করা যায়নি বলে ব্যাঙ্কের তরফে বহু গাড়ির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। শাকসবজি ও অন্য জরুরি পরিষেবার কাজের জন্য এই মুহূর্তে সারা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় 50-60 হাজার ট্রাক চলছে । জরুরি পরিষেবায় যে ট্রাকগুলি চলাচল করছে, সেগুলির চালক ও শ্রমিকদের 300 টাকা করে খোরাকি দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন। এছাড়াও তেলের খরচ দেওয়া হচ্ছে সরকারের তরফে। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, দক্ষিণবঙ্গ, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব বর্ধমানে খাদ্য সরবরাহের কাজে বহু ট্রাক চলছে । বিভিন্ন খাতে ছোট ট্রাকের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় 10-15 হাজার টাকা এবং বড় ট্রাকের ক্ষেত্রে খরচ প্রায় 23 হাজার টাকা। এখন ট্রাকগুলি বসে থাকলেও খচর বহন করতে হচ্ছে মালিকদের।
এবিষয়ে ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, "ব্যবসা বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোনওরকম উপার্জন নেই । আমাদের পক্ষে এখন এই কিস্তির টাকা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বেসরকারি ব্যাঙ্কের তরফে আমাদের অনবরত হুমকি দেওয়া হচ্ছে । বলা হচ্ছে, গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া হবে । লকডাউন তুলে নেওয়া হলেও কবে যে পরিস্তিতি স্বাভাবিক হবে সেটা এখন কেউ বলতে পারছে না। আবার যদি লকডাউন ঘোষণা করা হয় তাহলে আমরা সংসার নিয়ে অতল অন্ধকারে পড়ব । কবে আবার কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারব জানি না।"
এখনও নানা জায়গায় সার দিয়ে একের পর এক ট্রাকগুলি পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে । কোটি কোটি টাকার জিনিস পড়ে রয়েছে। আটকে গাড়ির খালাসি ও চালকরাও। ধুলাগড়ে, ডানকুনিতে, কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে, বামুনডাঙা সহ নানা জায়গায় পড়ে আছে গাড়ি । মুম্বই, নাসিক, গুজরাত, কেরল ও হায়দরাবাদের মতো লোডিং পয়েন্টগুলিও বন্ধ ।
অনিশ্চিত ভবিষ্যত । আপাতত লকডাউন ওঠা আর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় ট্রাক মালিকরা ।