ETV Bharat / state

চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন প্রতিমার সাজ গয়না প্রস্তুতকারক কারিগররা - Kolkata kumartuli

চার মাস লকডাউন থাকার ফলে এমনি কাজ বন্ধ ছিল কুমোরটুলিতে । অন্নপূর্ণা পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, গণেশ পুজোতেও আর্থিক মন্দাতেই কেটেছে । আশা ছিল দুর্গাপুজোতে হয়তো ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে । কিন্তু তা হলো না ।

_jewellery_kumartuli_
কলকাতা কুমোরটুলি
author img

By

Published : Oct 21, 2020, 1:34 PM IST

কলকাতা, 21 অক্টোবর : কোরোনা সংক্রমণের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দুর্গাপুজোতে । এবছর অন্যবারের থেকে একেবারে ভিন্নভাবে হচ্ছে দুর্গার আরাধনা । সংক্রমনের জেরে দুর্গাপুজোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল । পরে সরকারি অনুমোদন মিললে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি । তবে, প্রত্যেকবার যে পরিমাণে প্রতিমা তৈরি হয় তার থেকে অনেক কম পরিমাণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলিতে । বড় প্রতিমার চাহিদা নেই । কুমোরটুলিতে বড় প্রতিমা সংখ্যা এবারে হাতে গোনা যায় । মূলত ছোট প্রতিমাই তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা । প্রতিমার চাহিদা ব্যাপক কমে যাওয়ায় ও বড় প্রতিমা তৈরি না হওয়াতেই আর্থিক মন্দা তৈরি হয়েছে । আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেবীর সাজ গয়না প্রস্তুতকারক শিল্পী ও কারিগররা ।

কুমোরটুলিতে শুধু প্রতিমা তৈরি হয়না তৈরি হয় দেবীর সাজ ও গয়নাও । কুমোরটুলির প্রতিমার সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে এই অলংকার । বহু বছর ধরে কুমারটুলির জরির গয়না শিল্পীরা তাঁদের হাতের নিখুঁত দক্ষতায় তৈরি করেছেন নজরকাড়া দেবীর গয়না । জরি চুমকি ও বাহারি রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি হয় দেবীর গয়না । নিখুঁত হাতের দক্ষতায় কলকা ও নকশার উপরে জরি চুমকি পাথর বসিয়ে তৈরি করা হয় দেবীর সাজ ।

কী বলছেন শিল্পীরা, দেখুন ভিডিয়ো

প্রায় তিন পুরুষ ধরে কুমোরটুলিতে প্রতিমার গয়না তৈরি করছেন প্রদীপ দে । কোরোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি । এবিষয়ে প্রদীপ বাবু বলেন, "জন্ম থেকেই এই ব্যবসা দেখে বড় হয়েছি ৷ পরবর্তী সময় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি । কিন্তু এইরকম বাজারে মন্দা আগে দেখেনি । প্রত্যেক বছর এই সময় থাকে চরম ব্যস্ততা । সাত থেকে আটজন কারিগর নিয়ে দিন রাত কাজ চলে । লেটেস্ট গয়নার নকশা তৈরি করে জরির কাজ চলে । খাওয়া দাওয়ার সময় থাকে না । কিন্তু, এবছর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ৷ বড় প্রতিমার সংখ্যা খুবই কম । সামান্য টুকটাক কাজ হচ্ছে এবছর । ছোট প্রতিমার সামান্য কিছু গয়না তৈরি হলেও চাহিদা ভীষণ কম । বিদেশের প্রতিমার চাহিদা কমেছে ৷ তাই বিদেশের প্রতিমার জন্য স্পেশাল অর্ডারের গয়নাও তৈরি হয়নি এবছর । ট্রেন বন্ধ থাকায় ভিন রাজ্য বা ভিন জেলা থেকে যে গয়না ও সাজ তৈরির অর্ডার আসে এবছর সেগুলোও আসেনি । সবমিলিয়ে অবস্থা সঙ্কটজনক ।"

একই সুর শোনা গেল অপর এক ব্যবসায়ী পঞ্চনাথ মাইতির গলায় ৷ পঞ্চনাথ মাইতি দীর্ঘ বহু বছর ধরে প্রতিমার সাজ তৈরি করছেন । তিনি বলেন, " এবছর বাজার অত্যন্ত খারাপ ৷ গয়নার সাজের অর্ডার নেই বললেই চলে । সামান্য যেটুকু অর্ডার পেয়েছি সেই টুকুই টুকটাক কাজ হচ্ছে । 4 ফুট থেকে 5 ফুটের প্রতিমা গয়না সাজের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা । কিন্তু সেই টুকুও দাম পাওয়া যাচ্ছে না এ বছর । সঙ্গে জরি, চুমকি, বাহারি পাথরের দাম বেড়ে গেছে অনেকটাই । গুজরাত, সুরাট থেকে সামান্য জরি, চুমকি পাথর এসে পৌঁছেছে বড় বাজারে ৷ তাও চড়া মূল্যে কিনে তৈরি করতে হচ্ছে দেবীর গয়না ও সাজ । জিনিসের দাম যতটা বেড়েছে সেই তুলনায় বিক্রি-বাট্টা নেই । কিছু সাজ তৈরি করে রাখা ছিল সেগুলো বিক্রি হয়নি । ট্রেন বন্ধ থাকাতেই বাইরে থেকে কোনও অর্ডার আসেনি এ বছর । ফলে তৈরি হয়েছে চরম আর্থিক মন্দা ৷"

চার মাস লকডাউন থাকার ফলে এমনি কাজ বন্ধ ছিল কুমোরটুলিতে । অন্নপূর্ণা পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, গণেশ পুজোতেও আর্থিক মন্দাতেই কেটেছে । আশা ছিল দুর্গাপুজোতে হয়তো ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে । কিন্তু তা হলোনা । প্রতিমার চাহিদা কমে যাওয়াতেই পাল্লা দিয়ে কমে গেছে প্রতিমার সাজ ও গয়নার চাহিদাও । সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাঁচামালের দাম । বেশি মূল্যে জরি চুমকি কিনে গয়না তৈরি করে মুনাফার মুখ দেখতে পাচ্ছেন না প্রতিমার গয়না প্রস্তুতকারক কারিগররা । কত দিনে এই দুর্ভোগ কাটবে সেই আশঙ্কাতেই দিন কাটাচ্ছেন প্রতিমার সাজ প্রস্তুতকারকরা ।

কলকাতা, 21 অক্টোবর : কোরোনা সংক্রমণের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দুর্গাপুজোতে । এবছর অন্যবারের থেকে একেবারে ভিন্নভাবে হচ্ছে দুর্গার আরাধনা । সংক্রমনের জেরে দুর্গাপুজোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল । পরে সরকারি অনুমোদন মিললে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি । তবে, প্রত্যেকবার যে পরিমাণে প্রতিমা তৈরি হয় তার থেকে অনেক কম পরিমাণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে কুমোরটুলিতে । বড় প্রতিমার চাহিদা নেই । কুমোরটুলিতে বড় প্রতিমা সংখ্যা এবারে হাতে গোনা যায় । মূলত ছোট প্রতিমাই তৈরি করছেন মৃৎশিল্পীরা । প্রতিমার চাহিদা ব্যাপক কমে যাওয়ায় ও বড় প্রতিমা তৈরি না হওয়াতেই আর্থিক মন্দা তৈরি হয়েছে । আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেবীর সাজ গয়না প্রস্তুতকারক শিল্পী ও কারিগররা ।

কুমোরটুলিতে শুধু প্রতিমা তৈরি হয়না তৈরি হয় দেবীর সাজ ও গয়নাও । কুমোরটুলির প্রতিমার সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে এই অলংকার । বহু বছর ধরে কুমারটুলির জরির গয়না শিল্পীরা তাঁদের হাতের নিখুঁত দক্ষতায় তৈরি করেছেন নজরকাড়া দেবীর গয়না । জরি চুমকি ও বাহারি রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি হয় দেবীর গয়না । নিখুঁত হাতের দক্ষতায় কলকা ও নকশার উপরে জরি চুমকি পাথর বসিয়ে তৈরি করা হয় দেবীর সাজ ।

কী বলছেন শিল্পীরা, দেখুন ভিডিয়ো

প্রায় তিন পুরুষ ধরে কুমোরটুলিতে প্রতিমার গয়না তৈরি করছেন প্রদীপ দে । কোরোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি । এবিষয়ে প্রদীপ বাবু বলেন, "জন্ম থেকেই এই ব্যবসা দেখে বড় হয়েছি ৷ পরবর্তী সময় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি । কিন্তু এইরকম বাজারে মন্দা আগে দেখেনি । প্রত্যেক বছর এই সময় থাকে চরম ব্যস্ততা । সাত থেকে আটজন কারিগর নিয়ে দিন রাত কাজ চলে । লেটেস্ট গয়নার নকশা তৈরি করে জরির কাজ চলে । খাওয়া দাওয়ার সময় থাকে না । কিন্তু, এবছর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ৷ বড় প্রতিমার সংখ্যা খুবই কম । সামান্য টুকটাক কাজ হচ্ছে এবছর । ছোট প্রতিমার সামান্য কিছু গয়না তৈরি হলেও চাহিদা ভীষণ কম । বিদেশের প্রতিমার চাহিদা কমেছে ৷ তাই বিদেশের প্রতিমার জন্য স্পেশাল অর্ডারের গয়নাও তৈরি হয়নি এবছর । ট্রেন বন্ধ থাকায় ভিন রাজ্য বা ভিন জেলা থেকে যে গয়না ও সাজ তৈরির অর্ডার আসে এবছর সেগুলোও আসেনি । সবমিলিয়ে অবস্থা সঙ্কটজনক ।"

একই সুর শোনা গেল অপর এক ব্যবসায়ী পঞ্চনাথ মাইতির গলায় ৷ পঞ্চনাথ মাইতি দীর্ঘ বহু বছর ধরে প্রতিমার সাজ তৈরি করছেন । তিনি বলেন, " এবছর বাজার অত্যন্ত খারাপ ৷ গয়নার সাজের অর্ডার নেই বললেই চলে । সামান্য যেটুকু অর্ডার পেয়েছি সেই টুকুই টুকটাক কাজ হচ্ছে । 4 ফুট থেকে 5 ফুটের প্রতিমা গয়না সাজের দাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা । কিন্তু সেই টুকুও দাম পাওয়া যাচ্ছে না এ বছর । সঙ্গে জরি, চুমকি, বাহারি পাথরের দাম বেড়ে গেছে অনেকটাই । গুজরাত, সুরাট থেকে সামান্য জরি, চুমকি পাথর এসে পৌঁছেছে বড় বাজারে ৷ তাও চড়া মূল্যে কিনে তৈরি করতে হচ্ছে দেবীর গয়না ও সাজ । জিনিসের দাম যতটা বেড়েছে সেই তুলনায় বিক্রি-বাট্টা নেই । কিছু সাজ তৈরি করে রাখা ছিল সেগুলো বিক্রি হয়নি । ট্রেন বন্ধ থাকাতেই বাইরে থেকে কোনও অর্ডার আসেনি এ বছর । ফলে তৈরি হয়েছে চরম আর্থিক মন্দা ৷"

চার মাস লকডাউন থাকার ফলে এমনি কাজ বন্ধ ছিল কুমোরটুলিতে । অন্নপূর্ণা পুজো, বিশ্বকর্মা পুজো, গণেশ পুজোতেও আর্থিক মন্দাতেই কেটেছে । আশা ছিল দুর্গাপুজোতে হয়তো ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে । কিন্তু তা হলোনা । প্রতিমার চাহিদা কমে যাওয়াতেই পাল্লা দিয়ে কমে গেছে প্রতিমার সাজ ও গয়নার চাহিদাও । সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাঁচামালের দাম । বেশি মূল্যে জরি চুমকি কিনে গয়না তৈরি করে মুনাফার মুখ দেখতে পাচ্ছেন না প্রতিমার গয়না প্রস্তুতকারক কারিগররা । কত দিনে এই দুর্ভোগ কাটবে সেই আশঙ্কাতেই দিন কাটাচ্ছেন প্রতিমার সাজ প্রস্তুতকারকরা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.