কলকাতা, 3 জানুয়ারি: নতুন বছরের প্রথম দিনে উৎসবে মেতে ওঠেন সাধারণ মানুষ । হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া, ঘুরতে ভালোবাসেন অনেকে ৷ ঠিক যেমন গত রবিবার 1 জানুয়ারি শহর কলকাতা-সহ শহরের বহু মানুষ তিলোত্তমায় জমা হয়েছিলেন । আর সেই সুযোগের সদ্ব্যাবহারে জনসংযোগের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ নেমে পড়ে বঙ্গ সিপিএম (CPIM) । বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Basu), সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim)-সহ একাধিক সিপিএম নেতা-কর্মীকে বালতি, কৌটো হাতে ধর্মতলার প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটে দেখা যায় গত রবিবার । যা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের (Trinamool Congress) কুণাল ঘোষ ৷
প্রসঙ্গত, সেদিন ভিড় ঠেলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দোকানিদের কাছে পার্টি ফান্ডের জন্য অনুদান দাবি করেন তাঁরা । কেউ মুখ ঘুরিয়ে চলে যান, তো কেউ 5, 10, 20 টাকা হাসিমুখে বালতিতে ফেলেন । তবে সকলকে দলীয় কর্মসূচি, সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির যে অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিতেও দেখা যায় সেলিম-বিমানকে ।
সিপিএম সূত্রে খবর, তাদের এই কর্মসূচি ঘোষিত এবং পরিকল্পিত, যা গত 10 ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে । সিপিএম কলকাতা জেলা কমিটির 50টি এরিয়া কমিটি ও 1200 মতো ইউনিটের সদস্যরা সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছাচ্ছে । মানুষের জীবন যন্ত্রণা সমস্যা বর্তমান পরিস্থিতিও তা মোকাবিলায় পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েও অনুদান সংগ্রহ করছেন । এতে নতুন বছর বা পুরনো বছরের কোনও ব্যাপার নেই বলেই জানিয়েছেন সিপিএম কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ।
তিনি ইটিভি ভারতকে বলেন, "এটা ঘোষিত কর্মসূচি । প্রতি মাসেই বিভিন্ন জেলা কমিটি অর্থ সংগ্রহ করে থাকে । নতুন বছরের শুরুতে বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে মানুষ উৎসবে মেতে থাকেন । সেই উৎসবের মাধ্যমে জনসংযোগ করা হয় । এতে কটাক্ষ বা সমালোচনার কোনও বিষয় নয় । কারণ, আমাদের পার্টি প্রথম থেকেই সাধারণ মানুষের টাকায় চলে ৷ কোনও কর্পোরেট সেক্টর বা চুরি দুর্নীতির টাকায় আমাদের পার্টি চলে না । আমাদের এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ যেমন খুশি হয়ে অনুদান দিচ্ছেন ঠিক তেমনি বলছেন খুব দ্রুত আপনারা ফিরে আসুন । এই চুরি দুর্নীতিকে মোকাবিলা করা প্রয়োজন ।"
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সিপিএমের এই দলীয় কর্মসূচির বিষয়ে কিছু বলতে না চাইলেও তাঁর দাবি, "শূন্য হয়ে যাওয়া পার্টির সঙ্গে সাধারণ মানুষ নেই । সাধারণ মানুষকে মরিয়া চেষ্টা করছে। ওসব করে কিছু লাভ হবে না ।"
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে রাজ্য জুড়ে প্রায় কোটি টাকা অর্থ সংগ্রহ করেছিল বঙ্গ সিপিএম । অর্থ সংগ্রহ করতে বেরিয়ে সিপিএম কর্মীরা যেখানেই গিয়েছেন, কেউই তাঁদের ফেরাননি বলেই দাবি করা হয় ৷ 5, 10, 15 ও 20 টাকা করে প্রায় প্রত্যেকেই দিয়েছেন । সবমিলিয়ে রাজ্যজুড়ে কৌটো নেড়ে কয়েক সিপিএম কয়েক কোটি টাকা অর্থ সংগ্রহ মুজাফফর আহমেদ ভবন সূত্রে খবর। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ইটিভি ভারতকে সেই সময় বলেছিলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন জেলা কমিটিগুলি গণ-অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে ৷ হুগলি আর বর্ধমান মিলিয়ে কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ বাকি জেলাগুলিও নিজেদের মতো গণ-অর্থ সংগ্রহ করছে ৷’’
সিপিএম সূত্রে খবর, জনসংযোগ বৃদ্ধিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Elections 2023) আগে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে সিপিএমের হুগলি, দক্ষিণ 24 পরগনা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার নেতৃত্ব ৷ তার মধ্যে হুগলি জেলায় প্রায় 50 লক্ষ টাকা উঠেছে ৷ বর্ধমানে তার থেকেও বেশি টাকা তুলেছে সিপিএম নেতারা ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত মোট কত টাকা সংগ্রহ করা গেছে তার হিসেব রাজ্য সিপিএমের কাছে পৌঁছায়নি ৷ এছাড়াও, সারা বছরই জেলা সিপিএমের কমিটিগুলি টাকা তোলে সাধারণ মানুষের থেকে ৷
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষের থেকে সংগ্রহ করা এই বিপুল পরিমাণ টাকা কিসে খরচ করবে সিপিএম নেতৃত্ব ? এ নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছিলেন, ‘‘বিভিন্ন মিটিং মিছিল থেকে শুরু করে, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে এই টাকা খরচ করা হবে ৷ তার পর যে টাকা অবশিষ্ট থাকবে তা জেলা কমিটির নেতৃত্বের কাছে হস্তান্তর করব ৷ একইভাবে জেলা কমিটিও জেলাস্তরে বড় মিটিং মিছিল থেকে শুরু করে আন্দোলন করবে ওই টাকায় ৷ এই ভাবেই প্রতিটি জেলা থেকে আসা অর্থ রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বাঁচবে, তা বিভিন্ন কাজে খরচ করা হবে ৷ সেখান থেকেই কিছু টাকা কেন্দ্রীয় সিপিআইএম নেতৃত্বের কাছে আমরা পাঠাবো ৷’’
আরও পড়ুন: নন্দকুমারের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি সেলিমের