ETV Bharat / state

সুদীপের 'ছাগলের তৃতীয় সন্তান' তুলনা! হতবাক কুণাল বললেন 'অন্ধ আনুগত্য'

Sudip Banerjee: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভালো তালিকায় থাকার প্রতিযোগিতা, না কি নিজেদের স্থান ধরে রাখার তাগিদ। তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কি মন্তব্য থেকে কুণালের বিরোধিতা। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস যেন ঘটনাবহুল ।

Sudip Banerjee
Sudip Banerjee
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 1, 2024, 10:57 PM IST

Updated : Jan 2, 2024, 7:38 AM IST

কলকাতা,1 জানুয়ারি: প্রতিষ্ঠা দিবস যেন দলীয় নেতাদের লড়াইয়ের মঞ্চ হয়ে উঠল। কথা হচ্ছে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে । যেখানে বিতর্কিত মন্তব্যের জোরদার পেরেক বিঁধলেন সুদীপ। আর জবাব দিলেন কুণাল। বছরের শুরুতেই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস হয়ে উঠল দলীয় কাজিয়ার মঞ্চ। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন,"মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না সেদিন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে"। এই মন্তব্যের পর বিতর্কের উপর আর লাগাম আর টানা গেল না । কারণ, সুদীপের বিরুদ্ধে ময়দানে নামলেন সেই কুণাল ঘোষই । যিনি স্পষ্ট বললেন, "অন্ধ আনুগত্য ঠিক না, এটা কী বললেন সুদীপ দা?"

সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই এই মন্তব্য করেন বর্ষিয়ান সাংসদ। তিনি বলেন, " এই যে এত বড় ভারতবর্ষ। 29 টা রাজ্য,140 কোটির দেশ। এই দেশে যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে আলোচনায় বাংলাকে সবসময় প্রথম সারিতে রাখতে হয় তার কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আছেন বলেই এত আলোচনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না সেদিন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে।"

তাৎপর্যপূর্ণ হল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের সমালোচনায় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষে। তিনি বলেন, " হঠাৎ এই ধরনের কথা কেন বলছেন তৃণমূল সাংসদ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান? সুদীপ দা তো দেখলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ নিয়ে দিল্লিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেন তার কী পরিমান ঝাঁজ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে বলার কী প্রয়োজন। উনি তো সবটাই দেখলেন, এমনটা বলা তো ওনার সাজেনা।"

এখানেই থেমে থাকেননি কুণাল। তিনি জানান , সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সামনে থাকলে তাঁকে সামনে বসে ভাব সম্প্রসারণটা তিনি শোনাতেন। কুণাল বলেন, "এই ধরনের কথা যত প্রকাশ্যে আসবে তত ওনারা একটা অন্ধ আনুগত্য দেখাবেন। তাতে আসলে একটা ডিভিশনের লাইন তৈরি হচ্ছে। আমরা বলছি সিনিয়ররা মাথার উপর থাকবেন, জুনিয়ররা থাকবেন, মিলেমিশে কাজ হবে। যেটা মমতাদি চান সেভাবেই দলটা চলবে।" পাশপাশি স্পষ্ট ভাষায় কুণাল ঘোষ জানান, অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে বিভাজন নীতি তৈরি হচ্ছে যা উচিত নয়।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই দ্বন্দ্বের আবহে প্রতিক্রিয়া আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির থেকেও। যেমন এই নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এই বিষয়ে আমার বিন্দু বিসর্গ বলার আগ্রহ নেই। মানুষের জীবন জীবিকার লড়াই থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই এই প্রচেষ্টা। তৃণমূল যে আসলে একটা সার্কাস পার্টি পরস্পর বিরোধী বক্তব্য তা প্রমাণ করে দিচ্ছে।" অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন," তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের এ ধরনের পরস্পর বিরোধী কথা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন আগ্রহ নেই। বরং সাধারণ মানুষের আগ্রহ রয়েছে কবে এই সরকারের বিসর্জন হবে সেদিকে। সামনে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে, এটা দেশের নির্বাচন হলেও, তৃণমূলের বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে।" একইভাবে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, " 12 বছরে পশ্চিমবঙ্গকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।এতে আর যাই হোক বাংলার মানুষের কোনো উপকার হবে না।"

প্রশ্নটা তারপরেও থেকে যাচ্ছে সেই ক্ষমতা ঘিরেই। প্রবীণ বনাম নবীন তবে কি তৃণমূল কংগ্রেসের ভীতকে দুর্বল করছে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ তবে কি দলের অন্দরেই আলাদা করে সমর্থনের দাবি রাখে? চব্বিশের ভোটের আগে তৃণমূলের ঘরোয়া-জট খুলবে কি না, প্রশ্ন এবার রাজনৈতিক মহলেই ।

আরও পড়ুন

  1. নিয়ম মেনে বছরের প্রথম সন্ধ্যায় মমতা সাক্ষাতে অভিষেক, তবু জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে
  2. অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না, প্রতিষ্ঠা দিবসে সুব্রতের বক্তব্যে বিভাজন দেখছেন কুণাল
  3. টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া আর মায়ের মাংস খাওয়া একই জিনিস: ফিরহাদ

কলকাতা,1 জানুয়ারি: প্রতিষ্ঠা দিবস যেন দলীয় নেতাদের লড়াইয়ের মঞ্চ হয়ে উঠল। কথা হচ্ছে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস নিয়ে । যেখানে বিতর্কিত মন্তব্যের জোরদার পেরেক বিঁধলেন সুদীপ। আর জবাব দিলেন কুণাল। বছরের শুরুতেই তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস হয়ে উঠল দলীয় কাজিয়ার মঞ্চ। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন,"মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না সেদিন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে"। এই মন্তব্যের পর বিতর্কের উপর আর লাগাম আর টানা গেল না । কারণ, সুদীপের বিরুদ্ধে ময়দানে নামলেন সেই কুণাল ঘোষই । যিনি স্পষ্ট বললেন, "অন্ধ আনুগত্য ঠিক না, এটা কী বললেন সুদীপ দা?"

সোমবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই এই মন্তব্য করেন বর্ষিয়ান সাংসদ। তিনি বলেন, " এই যে এত বড় ভারতবর্ষ। 29 টা রাজ্য,140 কোটির দেশ। এই দেশে যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে আলোচনায় বাংলাকে সবসময় প্রথম সারিতে রাখতে হয় তার কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে আছেন বলেই এত আলোচনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেদিন থাকবেন না সেদিন আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দেশের রাজনীতির যা গতিপ্রকৃতি তাতে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে।"

তাৎপর্যপূর্ণ হল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের সমালোচনায় রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষে। তিনি বলেন, " হঠাৎ এই ধরনের কথা কেন বলছেন তৃণমূল সাংসদ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান? সুদীপ দা তো দেখলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ নিয়ে দিল্লিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেন তার কী পরিমান ঝাঁজ! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে বলার কী প্রয়োজন। উনি তো সবটাই দেখলেন, এমনটা বলা তো ওনার সাজেনা।"

এখানেই থেমে থাকেননি কুণাল। তিনি জানান , সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সামনে থাকলে তাঁকে সামনে বসে ভাব সম্প্রসারণটা তিনি শোনাতেন। কুণাল বলেন, "এই ধরনের কথা যত প্রকাশ্যে আসবে তত ওনারা একটা অন্ধ আনুগত্য দেখাবেন। তাতে আসলে একটা ডিভিশনের লাইন তৈরি হচ্ছে। আমরা বলছি সিনিয়ররা মাথার উপর থাকবেন, জুনিয়ররা থাকবেন, মিলেমিশে কাজ হবে। যেটা মমতাদি চান সেভাবেই দলটা চলবে।" পাশপাশি স্পষ্ট ভাষায় কুণাল ঘোষ জানান, অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে বিভাজন নীতি তৈরি হচ্ছে যা উচিত নয়।

তৃণমূল কংগ্রেসের এই দ্বন্দ্বের আবহে প্রতিক্রিয়া আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির থেকেও। যেমন এই নিয়ে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "এই বিষয়ে আমার বিন্দু বিসর্গ বলার আগ্রহ নেই। মানুষের জীবন জীবিকার লড়াই থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই এই প্রচেষ্টা। তৃণমূল যে আসলে একটা সার্কাস পার্টি পরস্পর বিরোধী বক্তব্য তা প্রমাণ করে দিচ্ছে।" অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন," তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের এ ধরনের পরস্পর বিরোধী কথা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন আগ্রহ নেই। বরং সাধারণ মানুষের আগ্রহ রয়েছে কবে এই সরকারের বিসর্জন হবে সেদিকে। সামনে লোকসভা নির্বাচন রয়েছে, এটা দেশের নির্বাচন হলেও, তৃণমূলের বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে।" একইভাবে কংগ্রেস নেতা সৌম্য আইচ রায় বলেন, " 12 বছরে পশ্চিমবঙ্গকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।এতে আর যাই হোক বাংলার মানুষের কোনো উপকার হবে না।"

প্রশ্নটা তারপরেও থেকে যাচ্ছে সেই ক্ষমতা ঘিরেই। প্রবীণ বনাম নবীন তবে কি তৃণমূল কংগ্রেসের ভীতকে দুর্বল করছে? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ তবে কি দলের অন্দরেই আলাদা করে সমর্থনের দাবি রাখে? চব্বিশের ভোটের আগে তৃণমূলের ঘরোয়া-জট খুলবে কি না, প্রশ্ন এবার রাজনৈতিক মহলেই ।

আরও পড়ুন

  1. নিয়ম মেনে বছরের প্রথম সন্ধ্যায় মমতা সাক্ষাতে অভিষেক, তবু জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে
  2. অভিষেক পিছিয়ে যাবেন না, প্রতিষ্ঠা দিবসে সুব্রতের বক্তব্যে বিভাজন দেখছেন কুণাল
  3. টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া আর মায়ের মাংস খাওয়া একই জিনিস: ফিরহাদ
Last Updated : Jan 2, 2024, 7:38 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.