কলকাতা, 3 জানুয়ারি: নতুন বছরের শুরুতেই বিশ্বে ছড়াচ্ছে নতুন সাইবার জালিয়াতি। আর তার উৎপত্তি স্থল সুদূর লাতিন আমেরিকা। সম্প্রতি গোটা বিশ্ব তথা কলকাতার সাইবার অপরাধ নিয়ে ইন্টারপোলের সঙ্গে একটি রুটিন বৈঠকে এমনটাই জানতে পারল কলকাতা পুলিশের সাইবার বিভাগ। জানা গিয়েছে, এই বিষয় সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পুলিশ সংগঠন ইন্টারপোল একটি অভিযান চালায়। এই অভিযান থেকে ইন্টারপোলের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই প্রথম মানব পাচার বিষয়ক কোনও সাইবার জালিয়াতির ধরণ চালু হয়েছে। এই বিষয় ইন্টারপোলের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গোটা বিশ্বে এই প্রকারের অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। আর এর বিস্তৃতি প্রায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে প্রায় লাতিন আমেরিকা পর্যন্ত এখন ছড়িয়ে পড়েছে।
একই সঙ্গে, এই বৈঠকের মাধ্যমে উঠে এসেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এই অনলাইন জালিয়াতির মাত্রা গিয়ে পৌঁছেছে একেবারে এক শৈল্পিক পর্যায়ে। যেখানে সাইবার দস্যুদের বিরুদ্ধে শারীরিক নিপীড়নের তথ্য প্রমাণও মিলেছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, এই বৈঠক থেকে জানা গিয়েছে, সাইবার দস্যুরা মূলত ভারত, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার মত দেশের একাধিক নাগরিকদের আমেরিকায় এবং মেক্সিকোয় তাদের বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থায় উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের নিজেদের দেশে এনে নাগরিকদের দুবাই, থাইল্যান্ড ও আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, মেক্সিকোয় নিয়ে গিয়ে যেখানে তাদের রীতিমত সশস্ত্র প্রহরায় বন্দি করে খাতায়-কলমে এবং হাতে-কলমে ব্যাংক জালিয়াতি শেখানো হচ্ছে। এক আধিকারিকের কথায়, "আমরা প্রত্যেক দিনই প্রায় বিভিন্ন জেলা পুলিশ এমনকী দেশের বিভিন্ন পলির সংগঠনের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখি। কলকাতায় এরকম কোনও সাইবার অপরাধ যাতে সংঘটিত না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে।"
এই বিষয়ে সাইবার বিশেষজ্ঞ তথা এথিক্যাল হ্যাকার মোহাম্মদ রেজা আহমেদ খান ইটিভি ভারতকে বলেন, "মূলত করোনা ভাইরাস আসার পরেই এই সাইবার দস্যুদের প্রবণতা বেড়েছে। শুধু মানুষকে সেখানে নিয়ে গিয়ে সাইবার অপরাধ শেখানোই নয়, বরং বিভিন্ন ছেড়ে যাওয়া বা ব্যবহার না হওয়া ফেসবুক অ্য়াকাউন্টগুলি তারা হ্যাক করে নিচ্ছে। এগুলি মূলত তাদের ডাটা বেস ডেভেলপমেন্টের সাহায্য করে। এছাড়াও শুধুমাত্র যে বেকার যুবক-যুবতীদের সেখানে নিয়োগ করা হচ্ছে তেমনটাই নয়, ঘরে বসেই বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন অপ্রাপ্তবয়স্ক যুবক-যুবতীদের প্রচুর মূল্যের মাধ্যমে তারা ভাড়া করে নিচ্ছে। আর তাদের দিয়ে গেম ডেভেলপিং-এর নাম করে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সাইবার অপরাধ কীভাবে করতে হবে। যতই দিন যাবে সাইবার অপরাধের নতুন নতুন তথ্য এবং নতুন নতুন ধরণের সাথে আমরা পরিচিত হব।"
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার ক্রাইমের দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "সম্প্রতি কলকাতায় বসে সুদূর আমেরিকাবাসীদের অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়ার অভিযোগ আসে। এই অভিযোগ আমরা পাই এফবিআই-এর থেকে। পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।" এছাড়াও জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দিল্লির এক মহিলা গত জুলাই মাসে তাঁর সোশাল মিডিয়ায় একটি ফলো রিকোয়েস্ট পেয়েছিলেন। তা গ্রহণ করে ওই ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত ভাব জমাতে শুরু করেন করেন ওই মহিলা। অভিযোগ ওই ব্যক্তি তাঁকে জানিয়েছিলেন, তিনি আমেরিকায় থাকেন। পেশায় পাইলট। ক্রমে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। নতুন বন্ধুর সঙ্গে তার নিজের জীবনের গোপন কথা ভাগ করে নিতেও শুরু করেন মহিলা। বলতে থাকেন পরিবারের অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কথাও।
মহিলার জীবনে সমস্যার কথা শুনে তার ওই আমেরিকান বন্ধুটি তাকে অর্থনৈতিক সাহায্যের আশ্বাস দিতে থাকে। তিনি জানান, তাঁকে 80 লক্ষ টাকা সাহায্য পাঠাবেন অনলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু ওই মহিলাকে শুল্ক দফতর থেকে জানানো হয়, বিদেশ থেকে তাঁর জন্য কয়েক লক্ষ টাকা উপহার পাঠিয়েছেন তার বন্ধু। কিন্তু সেই টাকা তোলার জন্য কর বাবদ 15 হাজার টাকা দিতে বলা হয় মহিলাকে। এইভাবে একাধিক কিস্তিতে তিনি মোট এক লক্ষ 70 হাজার টাকা দিয়ে দেন শুল্ক দফতরকে। পরে বুঝতে পারেন তিনি নিজেই প্রতারিত হয়েছেন । যে টাকাটি সম্পূর্ণ চলে গিয়েছে সাইবার দস্যুদের অ্যাকাউন্টে।
আরও পড়ুন