কলকাতা, 6 জানুয়ারি: সাতসকালে থানায় হাজির মা ও ছেলে। শুক্রবার প্রায় চোখে জল নিয়ে থানার সেরেস্তায় বসে থাকা দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মীকে বলেন, "আমার 'মেনি' হারিয়ে গিয়েছে। গতকাল রাত থেকে পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এখুনি তাকে খুঁজে বার করতে হবে। এই নিয়ে তারা একটি মিসিং ডায়েরিও করবেন। কিন্তু কে 'মেনি'? উত্তর শুনে একপ্রকার চমকে ওঠে পুলিশকর্মী। কারণ 'মেনি' আসলে অভিযোগকারিনী মহিলার বিড়াল ৷ প্রাথমিকভাবে বিষয়টি 'মশা মারতে কামান দাগার মতো' শোনালেও এই ঘটনার পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে আবেগ ৷
এরপর ওই পুলিশকর্মী এবং থানার অন্যান্য পুলিশকর্মীরা মহিলাকে একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেন যে কোনও মানুষ হারিয়ে গেলে তারা ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে থানায় অভিযোগ নিতে পারেন। কিন্তু কোনও পোষ্য হারিয়ে গেলে তার নিখোঁজের মামলা কীভাবে নেওয়া যায়? এই নিয়ে খানিকটা বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়। অবশেষে পুলিশকর্মীরাই শুক্রবার রাতেই ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে কার্নিশের উপরে উঠে খুঁজে পান হারিয়ে যাওয়া ওই বিড়ালটিকে। প্রথমে শত চেষ্টা সত্ত্বেও 'মেনি' ধরা না-দিলেও অবশেষে ওই মহিলা এক বাটি দুধ এবং মাছ ভাজা করে পুলিশকর্মীদের হাতে তুলে দেন।
এরপর সেই বাটিসমেত দুধ এবং মাছভাজা দেখে ধীরে ধীরে বাটির সামনে এগিয়ে আসে মেনি। এরপর কায়দা করে অবশেষে ওই বিড়ালটিকে ধরতে সক্ষম হন পুলিশকর্মীরা। হারিয়ে যাওয়া 'মেনি'কে খুঁজে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা। সঙ্গে পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেন তিনি। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সার্ভে পার্ক থানায় এলাকায়।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "থানায় যখন এই প্রকারের একটি অভিযোগ আসে তখন আমরা বিষয়টিকে ভালোভাবে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি। কারণ অতি সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে নিজের পোষ্যকে খুঁজতে গিয়ে অসাবধানতার বসে তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। আর সেই প্রকারের একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে ফের শহরে না-হয় তার জন্যই পুলিশকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে তারা যেন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেন ৷"
তিনি আরও বলেন, "সেরকম বুঝলে অবশ্যই তারা যেন কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং দমকল কর্মীদের খবর দেন। তবে এতকিছুর প্রয়োজন হয়নি। সামান্য এক বাটি দুধ আর মাছ ভাজা দিয়েই বাগে আনা সম্ভব হয়েছে বিড়াল ছানাকে। আর হারিয়ে যাওয়া ছানাকে ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি পরিবার।
আরও পড়ুন: