কলকাতা, 27 অগাস্ট : সেপ্টেম্বর থেকে চালু হচ্ছে আনলক 4 । কোরোনার সংক্রমণ রুখতে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক রেল পরিষেবা । বন্ধ মেট্রো রেল পরিষেবাও । আনলকের চতুর্থ পর্যায়ে লোকাল ট্রেন ও মেট্রো পরিষেবা চালু হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে ।
তবে যখনই মেট্রো চালু হোক না কেন, সেই অভিজ্ঞতা যে আর আগের মতো হবে না, তা বলা বাহুল্য । নিউ নর্মালের যে ধারা শুরু হয়েছে বিভিন্ন পরিসরে, তা থাকবে মেট্রোতেও । থাকবে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি । মানতে হবে সামাজিক দূরত্বও । নাহলে যে সংক্রমণ লাগামছাড়াভাবে বাড়বে !
ইতিমধ্যেই নিউ নর্মালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে কলকাতা মেট্রো । প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গায় চিহ্নিত করা হয়েছে । তবে কোচের ভিতরে কীভাবে আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে, সে-বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু চূড়ান্ত করা হয়নি ।
এছাড়াও সংক্রমণ মোকাবিলায় অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । মেট্রো চত্বরে ও কোচের ভিতরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক । বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব । কাউন্টারে ভিড় এড়াতে ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে স্মার্ট কার্ডের অনলাইন রিচার্জ ব্যবস্থা । এর ফলে টোকেনের প্রয়োজনও কমবে বলে মনে করছে কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষ ।
কিন্তু কবে থেকে চালু হবে কলকাতা মেট্রো ? কতটা প্রস্তুত মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ ?
কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ-বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন , "ঠিক কবে থেকে আবার মেট্রো চলাচল শুরু হবে সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে আমাদের কাছে এখনও কোনও নির্দেশ এসে পৌঁছায়নি । মেট্রো পরিষেবা চালু হওয়ার বিষয়টি পুরোপুরিভাবেই নির্ভর করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশের উপর । তবে যেদিনই মেট্রো পরিষেবা আবার চালু হোক না কেন আমরা পরিষেবা দিতে প্রস্তুত । "
তিনি আরও জানিয়েছেন, "এই লকডাউনের সময় ট্রেন চলাচল না করলেও মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে পুরোদমে । সাধারণত যেসব কাজ অন্যসময় করা সম্ভব হয় না সেই কাজগুলিও এখন করা হচ্ছে । বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে রেকের দিকে । পাশাপাশি কোচ, থার্ড রেল, সিগনালিং ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, চলমান সিড়ি-সহ অন্যান্য দিকগুলিতেও নজর দেওয়া হয়েছে ।" লকডাউন শেষ হলে যখন আবার মেট্রো চলতে শুরু করবে তখন এই রেকগুকি যাতে সক্রিয় এবং ভালো অবস্থায় থাকে তা নিশ্চিত করতেই ক্রমাগত সেগুলির পরীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি । যাত্রী পরিষেবা আপাতত বন্ধ থাকলেও মেট্রো কর্মীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য চালানো হচ্ছে মেট্রো রেল । ফলে, কিছু সংখ্যক মেট্রো নিয়মিত যাতায়াত করছে । ফলে সেগুলি সক্রিয় রয়েছে ।
এছাড়াও এই লকডাউনের সময় কলকাতা মেট্রোর আওতায় যে পাঁচটি প্রোজেক্ট রয়েছে সেগুলির কাজও এগোচ্ছে। সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি ও দূরত্ব মেনে দ্রুত এগোচ্ছে কাজ বলে জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রোর প্রধান জনসংযোগ আধিকারিক ।
লকডাউনের আগে স্বাভাবিক সময় ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন গড়ে 6 থেকে 6.5 লাখ যাত্রী মেট্রোয় যাতায়াত করতেন । তবে, এবার মেট্রো চালু হলে অফিস সময়ে ঠাসাঠাসি করা ভিড়ের উপর রাশ টানা হতে পারে । তবে সেটি কীভাবে হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি । এছাড়াও দু'জন যাত্রীর মধ্যে কীভাবে ব্যবধান রাখা যায় সেই বিষয়ও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে । প্রবেশপথেও যাত্রী ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানা গেছে ।
লকডাউনের আগে টালা ব্রিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে 294 টি করে মেট্রো চলত । ছুটির দিন অর্থাৎ শনিবার ও রবিবার 174টি ও 130টি মেট্রো যাতায়াত করত । বর্তমানে মেট্রো কর্মীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সারাদিনে 6টি মেট্রো চালানো হচ্ছে । মেট্রো সূত্রে খবর, লকডাউনের আগে সপ্তাহের কাজের দিনে মেট্রোর উপার্জন ছিল প্রায় 84 লাখ টাকা ।
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, সল্টলেক স্টেডিয়াম থেকে ফুলবাগান স্টেশন একেবারে তৈরি । CRS-এর তরফে চূড়ান্ত ছাড়পত্রও এসে গেছে । তাই মনে করা হচ্ছে যে আবার মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক হলে খুলে যাবে ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনটি । অন্যদিকে নোয়াপাড়া-বরানগর- দক্ষিণেশ্বরের প্রোজেক্টটির কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে । পাশাপাশি বিমানবন্দরের অংশের কাজ এগিয়েছে যথেষ্ট দ্রুততার সঙ্গে ।
সবমিলিয়ে, নিউ নর্মালে যাত্রীদের স্বাগত জানাতে কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ । নজর দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ে । বেশ কয়েকটি বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি ঠিকই, তবে সেগুলির জন্যও জোরকদমে চলছে বিশ্লেষণ । সংক্রমণের ঝুঁকির দিকগুলি মূল্যায়ন করে দেখা হচ্ছে । পুরোদমে পরিষেবা দিতে তৈরি হচ্ছে কলকাতা মেট্রো । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও রাজ্য প্রশাসনের থেকে সবুজ সংকেত মিললেই ফের একবার নোয়াপাড়া থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ছুটতে তৈরি মেট্রো ।