কলকাতা, 7 মার্চ : তিন সন্তানসহ বিবিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অপরাধীর ফাঁসির সাজা খারিজ করে 30 বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয় । তিন সন্তান এবং বিবিকে পুড়িয়ে মেরেছিল উৎসব আলি । সেই অপরাধে 2018 সালের 8 মার্চ তাকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত । সেই আদেশই আজ খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ।
কান্দি মহকুমার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে উৎসব । হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ উৎসবের আবেদন শোনে । বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর জানায়, অপরাধী উৎসবের বয়স মাত্র 31 বছর । পাশাপাশি গত দু'বছর ধরে জেলের ভিতরে ভালো আচরণ করেছে । পুড়িয়ে মারার ঘটনায় কোনও প্রত্যক্ষদর্শীও নেই । এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে আদালত তার ফাঁসির সাজা খারিজ করে 30 বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিল । তবে একই সঙ্গে নির্দেশে জানানো হয়েছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে উৎসব আলি আর অন্য কোথাও আবেদন করতে পারবে না ।
2015 সালের মে মাসে উৎসব আলির বিবি নাফিসা বিবিসহ (24) তিন কন্যাসন্তান আমিনা খাতুন(5), মাসুদা খাতুন (3 ) এবং তুহিনা খাতুন (1)-এর দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার হয় । ওইদিনই এলাকা থেকেই পুলিশ উৎসব আলিকে গ্রেপ্তার করে । যদিও তার বক্তব্য ছিল, সে ঘটনার দিন বাড়িতেই ছিল না । দূরে এক আত্মীয়র বাড়িতে ঘুরতে গেছিল । কিন্তু পুলিশের বয়ান অনুযায়ী, গভীর রাতে ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিবিসহ তিন শিশুকন্যাকে খুন করেছে উৎসব ।
পুলিশ সূত্রে খবর, পর পর তিন কন্যাসন্তান হওয়ায় ক্ষোভ ছিল উৎসবের । এনিয়ে প্রায়ই বিবির সঙ্গে অশান্তি হত। চলত শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও । এর মধ্যেই অন্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছিল উৎসব । সেই কারণেই ঘরে আগুন লাগিয়ে হত্যা করেছিল পরিবারের সবাইকে । কিন্তু, সে-ই যে আগুন লাগিয়েছিল তার সরাসরি প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ । কারণ, এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী নেই ।
ঘটনাটি পর্যবেক্ষণের পর বিচারপতি-রা বলেন , "ফাঁসি দেওয়ার আগে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করা হয় । প্রথমত, অপরাধীর অপরাধ কি সন্দেহাতীত? দ্বিতীয়ত, অপরাধীর জীবনে আদৌ কোনও সংশোধন কি সম্ভব? তাই ফাঁসির সাজা খারিজ করছে আদালত । তবে তাকে 30 বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হল । এই আদেশের বিরুদ্ধে সে আর কোথাও আবেদন করতে পারবে না ।"