কলকাতা, 13 ডিসেম্বর: বৈষম্য ও প্রয়োজনীয় নথির অভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যৌনকর্মীদের সন্তানেরা । তাদের মধ্যে স্কুলে না যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে । কিন্তু, যৌন কর্মীদেরই সংগঠন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি এবং তার শাখা সংগঠন 'আমরা পদাতিক' বাচ্চাদের শিক্ষা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ । স্কুলছুট এড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে তারা । কালীঘাট, শেওড়াফুলি, আসানসোল, বসিরহাটের মাটিয়া-সহ একাধিক যৌনপল্লিতে শিশুদের জন্য তারা পড়াশোনার বন্দোবস্ত করেছে নিজেরাই । সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ায় সেই সমস্ত ছোট ছোট শিক্ষাকেন্দ্রগুলিকে 'স্কুল' না বললেও 'বেড়া ভেঙে শিক্ষাকেন্দ্র' নামকরণ করা হয়েছে ।
এই সমস্ত শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে মূলত যৌনকর্মীদের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে । মঙ্গলবার কলকাতার কালীঘাটের যৌনপল্লি সংলগ্ন এলাকায়ও এমনই একটি শিক্ষাকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় । মূলত, সন্ধ্যে ছ'টা থেকে রাত ন'টা পর্যন্ত ওই শিক্ষাকেন্দ্রে শিশুদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । ছবি আঁকা, গান, নাচের ব্যবস্থা থাকছে । প্রাথমিকভাবে 50 জন শিশুকে নিয়ে এই ক্লাস শুরু হয়েছে ভাড়া করা ঘরে । আগামীতে গোটা রাজ্যের মোট 56টি যৌনপল্লিতে এই ধরনের পড়াশোনার বন্দোবস্ত করা হবে ।
'আমরা পদাতিক'এর সভাপতি তথা যৌনকর্মীর সন্তান রতন দলুই ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমার মতো যৌনকর্মী সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ খুব কম । নিজে কলকাতার রাম বাগান যৌনপল্লিতে বড় হয়েছি । আগ্রহ থাকলেও পড়াশোনা করার সুযোগ পেতাম না । আমি চাই না বাকিরা সেই সমস্যায় পড়ুক এবং নিজের ভবিষ্যতকে জলাঞ্জলি দিক । সেই তাড়নায় আমি এবং আমার মত যাঁরা আছেন তাঁদের উদ্যোগে কালীঘাটে সন্ধ্যায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে । কারণ, যৌনপল্লিগুলিতে ওই খুপরি ঘরে মায়েরা 'পেশা' করেন । অনেকে সন্ধেতেই শিশুরা পড়াশোনা করার সুযোগ পায় না । তাই নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চাদের আলাদা পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে । আগামীতে কলকাতার বাকি পল্লিতেও এ ধরনের শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টায় আছি ।"
এ দিকে, বসিরহাটের মাটিয়া যৌনপল্লিতে বছরখানেক ধরে 'আইসিডিএস সেন্টার' চলছে । স্থানীয় জেলা প্রশাসন তথা বসিরহাট পুলিশ জেলা ও দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে এই সেন্টার চালু করা হয়েছে । এই আইসিডিএস সেন্টারে মূলত পাশের সরকারি আইসিডিএস সেন্টার থেকে যাবতীয় খাবার বা আনুষাঙ্গিক নিয়ে আসা হয় । বাইরের সেই সরকারি সেন্টারে যৌনপল্লির কচিকাঁচারা যায় না । তারা দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অফিসের উপরেই ক্লাসঘরে পড়াশোনা করে ।
আইন অনুযায়ী সাধারণত যৌনপল্লিগুলিতে স্কুল গড়ে তোলা যায় না । কিন্তু বিংশ শতাব্দীতে এসেও নানা রকম সমস্যায় বা বৈষম্যের শিকার যৌনকর্মী সন্তানেরা । অথচ, প্রত্যেক শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাঁচার অধিকার আছে । তাই নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করে সমাজের অন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবন যাপন করতে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন এই পেশার মানুষেরা ।
আরও পড়ুন: