কলকাতা, 17 মার্চ: করোনার ধাক্কা সামাল দিয়েও বাজেট ঘাটতি কম করল কলকাতা পৌরনিগম (KMC Budget 2023) ৷ শুক্রবার 2023-24 অর্থবর্ষের জন্য আনুমানিক 146 কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) ৷ আয় করেও বাজেটে ঘাটতি বজায় থাকার মূল কারণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন, পে-কমিশন অনুসারে কর্মীদের বর্ধিত বেতন দেওয়ার খরচকে ৷ যদিও এদিনের এই বাজেটকে দিশাহীন ও হতাশার বাজেট বলে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা ৷
এদিনের বাজেট ভাষণে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে পৌরনিগমের আয় হবে আনুমানিক 4540 কোটি 79 লক্ষ টাকা ৷ অন্যদিকে, ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াবে 4,686 কোটি 79 লক্ষ টাকা ৷ অর্থাৎ, প্রায় 146 কোটি টাকার ঘাটতি থেকে যাবে ৷ এই ঘাটতির পরিমাণ আগেরবারের বাজেটে ধরা হয়েছিল 177 কোটি টাকা ৷ 2021-22 অর্থবর্ষে সম্পত্তি কর বাবদ পৌরনিগম 890 কোটি টাকা আয় করেছিল ৷ তবে চলতি অর্থবর্ষের (2022-23) শেষভাগে, অর্থাৎ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এই খাতে আয় বেড়ে হয়েছে 1,100 কোটি টাকা ৷ এছাড়াও আয় বেড়েছে লাইসেন্স, পার্কিং-সহ বেশ কয়েকটি খাতে ৷ 2023-24 অর্থবর্ষে পুঞ্জীভূত ব্যয় দাঁড়াবে 2,171 কোটি 96 লক্ষ টাকা ৷ পৌরনিগমের তথ্য অনুসারে, একদিকে যেমন বিভিন্ন খাতে তাদের আয় অনেকটা বেড়েছে, তেমনই চলতি অর্থবর্ষে বরাদ্দ বাজেটের উপর বেশ কিছু পরিমাণ টাকা 'এমবার্গ'ও থেকে গিয়েছে ৷ ফলে বাজেট ঘাটতির অঙ্ক কমানো অনেকটাই সহজ হয়েছে বোর্ডের পক্ষে ৷
এদিন বাজেট প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "বেশ কিছু খাতে আয় বেড়েছে ঠিকই ৷ কিন্তু আরও আয় বাড়ালে ঘাটতি আরও খানিকটা কমানো যেত ৷ পাশাপশি, পে-কমিশনের জেরে বর্ধিত বেতন দিতে গিয়ে হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে ৷" এছাড়াও, পৌরনিগমের বিজ্ঞাপন নীতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মেয়র ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বিজ্ঞাপন নীতি সঠিক হয়নি ৷ ফের কমিটি তৈরি করে আগামী অর্থবর্ষে এই খাতে 500 কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হবে ৷"
যদিও কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে খবর, এখানকার স্থায়ী কর্মীদের বেতন ও পেনশনের সিংহভাগই দেয় রাজ্য সরকার ৷ তারপরও, অস্থায়ী কর্মী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের বেতন প্রভৃতি দিতে পৌরনিগমের প্রতি মাসে 95 থেকে 100 কোটি টাকা খরচ হয় ৷ যার মধ্যে প্রায় 28 থেকে 30 কোটি টাকা বর্ধিত বেতন ও পেনশন বাবদ খরচ হচ্ছে ৷ অন্যদিকে, বিজ্ঞাপন খাতে চলতি অর্থবর্ষে 100 কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৷ ফলে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দাবির সঙ্গে বাস্তবের বেশ কিছু অমিল রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের ৷ এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলররা ৷
আরও পড়ুন: ত্রিফলা অতীত ! খরচ কমাতে একফলা লাগাতে উদ্যোগী কেএমসি
বিজেপি নেতা সজল ঘোষ এদিনের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, "দিশা নেই, হতাশা আছে ৷ এই বাজেট শুধুই অঙ্কের জাগলারি ৷ এই বাজেটের ব্যাখ্যা যদি মেয়র দিতে পারেন, তাহলে পদ ছেড়ে দেব ৷" বাম কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব বলেন, "এই বাজেটে কিছুই নেই ৷" একই সুর শোনা গিয়েছে কংগ্রেস কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠকের গলাতেও ৷ তাঁর কথায়, "এই বাজেটে কিছু খুঁজে পাইনি ৷"