কলকাতা, 9 মে : বাংলায় সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা আপাতত না থাকলেও ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে ঘূর্ণিঝড় 'অশনি' ৷ পূর্বাভাস অনুযায়ী, মাঝ সমুদ্র থেকে স্থলভাগে আসার পথে অনেকটাই শক্তি কমবে এই ঘূর্ণিঝড়ের ৷ অন্ধ্র বা ওড়িশা উপকূলের কোনও অংশ দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে 'অশনি' ৷ পশ্চিমবঙ্গে অশনির সরাসরি প্রভাব না পড়লেও এখানে ঝড়-বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর (Cyclone Asani Alert) ৷ সোমবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে ৷ মঙ্গলবার থেকে বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ ৷
এই অবস্থায় কোনও ঝুঁকি না নিয়ে সবরকম প্রস্তুতি সেরে রাখতে চাইছে কলকাতা পৌরনিগম ৷ অশনি মোকাবিলায় শহরে থাকছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (KMC is taking steps in the wake of Cyclone Asani) । চিহ্নিত করা হয়েছে ত্রাণ শিবিরও ৷ ঘূর্ণিঝড়ে প্রভাবে কলকাতায় আগামী ক'দিন ভারি বৃষ্টি হবে এই আশঙ্কা মাথায় রেখেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার এক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক হয় কলকাতা পৌরনিগমে ৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পৌরনিগমের কমিশনার বিনোদ কুমার । ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের ডিজি । ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন শহরের 16টি বরোর সমস্ত আধিকারিক ।
আরও পড়ুন : শক্তি বাড়ালেও বঙ্গে 'অশনি' সংকেত নেই
কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কলকাতা পৌরনিগমের হাতে দুটি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দল থাকবে । তাদেরকে স্ট্যান্ডবাই রাখা হচ্ছে নির্দিষ্ট জায়গায় । পৌরকর্মীদের সঙ্গে তারাও যাতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । প্রয়োজনে আরও দল চাওয়া হবে । পাশাপাশি, ঝড়ের ধাক্কায় যাতে কোন ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই বিষয়টি মাথায় রেখে 80 শতাংশ ভর্তি রাখা হচ্ছে টালার ট্যাঙ্ক ৷ বৃষ্টি শুরু হলেই বন্ধ করে দেওয়া হবে শহরের সমস্ত ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের বিদ্যুৎ সরবরাহ ৷ বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনা আটকাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ এদিনের বৈঠক থেকে সিইএসসি'কে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা যেন বাতিস্তম্ভ থেকে বেরিয়ে থাকা খোলা তারগুলি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয় ।
আরও পড়ুন : জারি 'অশনি' সতর্কতা, প্রস্তুত কলকাতা রিভার ট্রাফিক পুলিশ
পৌরনিগমের কমিশনার বিনোদ কুমার জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল থেকে শহরের সবকটি ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের অবস্থা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে, যেখানে অবস্থা খারাপ সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ৷ সিইএসসি, পূর্ত দফতর ও পৌরনিগম যাতে সমন্বয় ঠিক রেখে কাজ করতে পারে সেই দিকে নজর রাখা হচ্ছে ৷ শহরের 77টি পাম্পিং স্টেশনে 415টি পাম্প রয়েছে । সেগুলির মধ্যে 95 শতাংশ পাম্পকে সক্রিয় রাখা হয়েছে কলকাতার জমা জল নিষ্কাশনের জন্য । অতীতে দেখা গিয়েছে পাম্পিং মেশিন সক্রিয় রাখার পরেও কলকাতার বিভিন্ন অংশে জল জমে । তাই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে 650-700টি পোর্টেবল পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । কলকাতার সবকটি বরোতে প্রতিটি বিভাগের কর্মীদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে ৷ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজের জন্য কর্মীদের বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে । প্রতিটি বরোতে শুকনো খাবার, ত্রিপল, জল-সহ যাবতীয় ত্রাণ সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সবকটি জল প্রকল্পে জেনারেটর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । জঞ্জাল ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীরাও রাস্তায় থাকবেন । জল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পাম্পিং স্টেশন গুলিতে সোমবার থেকেই পৌরকর্মীরা থাকবেন ।
আরও পড়ুন : অশনির ভ্রুকুটি, দিঘার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ানো হল নজরদারি
এছাড়াও, অশনির কথা মাথায় রেখে বরো ভিত্তিক দায়িত্ব 13 জন মেয়র পারিষদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে ৷ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ সদস্য অতীন ঘোষকে দেওয়া হয়েছে বরো 1 এবং ২ এর দায়িত্ব । স্বপন সমাদ্দারকে বরো 3, আমিরুদ্দিন ববিকে বরো 4, জীবন সাহাকে বরো 5, সন্দীপন সাহাকে বরো 6, দেবাশিস কুমারকে বরো 7, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে বরো 8, সন্দীপ রঞ্জন বক্সীকে বরো 9, মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়কে বরো 11, দেবব্রত মজুমদারকে বরো 10 এবং বরো 12 এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ তারক সিংকে দেওয়া হয়েছে বরো 13 এবং 14 এর দাযিত্ব ৷ রাম প্যায়ারে রামকে বরো 15 ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে বরো 16 এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ পৌরনিগম সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খারাপ হলে এই মেয়র পরিষদ সদস্যরা রাতে বরো অফিসগুলিতে থেকে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালাবেন ও তদারকি করবেন ৷