কলকাতা, 19 মে : 48 ঘণ্টা আগে থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় । বয়স 80-র কাছাকাছি । কিন্তু, শরীর ও মস্তিস্ক ঠিকভাবে কাজ করলে বয়স কোনও বাধা নয় বলে জানালেন তিনি । আমফান থেকে সুন্দরবনকে বাঁচাতে ইতিমধ্যেই একটি লঞ্চ ভাড়া করেছেন । দেড় হাজার ত্রিপল, 200 কুইন্টাল চাল, তিন লাখ টাকার ওষুধ নিয়ে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি ।
পূর্বাভাস অনুযায়ী আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আমফান আছড়ে পড়বে । তাই আয়লা ও বুলবুলের অভিজ্ঞতা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় । গত দু'দিন ঘুম প্রায় হয়নি । পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকেই স্পিডবোট নিয়ে সুন্দরবনের জলপথ ধরে জনবসতিগুলিতে গিয়ে সতর্ক করেছেন । বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর ফিক্সড ডিপোজ়িট ভেঙে আমফানের ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করব । বাড়িতেই শিবির খুলে দিয়েছি । যাদের বাড়িঘর ভেঙে যাবে তারা এসে আমার বাড়িতে আশ্রয় নেবে । এলাকার দুটো স্কুল ঘর ফাঁকা করে রাখা হয়েছে । প্রয়োজনে সেখানেও মানুষ আশ্রয় নেবে । সমগ্র সুন্দরবন এলাকায় ঘুরে বেড়াব । ট্রলার ভাড়া করা হয়েছে । কোরোনার শুরুতেই এলাকার মানুষকে 50 টন চাল, 100 টন আলু ও 20 হাজার সাবান বিলি করা হয়েছে । "
মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে তাঁর আবেদন, পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুন্দরবন এলাকায় রাজ্য সরকারকে সাহায্য করতে চান । সেই অভিজ্ঞতাকেই সঙ্গে নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চান তিনি । সুন্দরবনের বাঁধ ভাঙবেই । পানীয় জলের সংকট দেখা দেবে । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীকে আমি জানিয়েছি হেলিকপ্টার থেকে পাউচ প্যাকে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল দেওয়ার জন্য । বিশুদ্ধ পানীয় জল দিতে হবে । প্রয়োজনে বড় বড় ভেসেল নিন । 1 হাজার লিটারের জলের ট্যাঙ্ক জাহাজে বসিয়ে নদীসংলগ্ন বসতিগুলিতে জলের বণ্টন করা হোক । এলাকার মানুষ বালতি , কলসিতে করে জল সংগ্রহ করবে । প্রয়োজনে দমকলের পাইপ দিয়ে জল সরবরাহ করার পরামর্শও মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছি । শুকনো খাবার হেলিকপ্টারে করে মানুষের জন্য বণ্টন করা হোক । বসতিপূর্ণ এলাকা দেখে সেই খাবার দিলে মানুষ খেয়ে বাঁচবে । আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর গবাদিপশু মারা যাবে । সেগুলিকে দ্রুত মাটির নিচে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করতে বলেছি । সঙ্গে পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডারের ব্যবস্থাও করতে হবে । না হলে মড়ক লাগবে । গত আয়লার সময় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আন্ত্রিকে এই এলাকায় কেউ মারা যায়নি । বিশুদ্ধ পানীয় জল ও গ্রামীণ ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্যালাইন ও ওষুধের বণ্টনের কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে । সরকারি ডাক্তাররা এখন কোরোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত । আয়লার সময় গ্রামীণ ডাক্তারদের সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল । এখন ডাক্তারদের পাওয়া যাবে না এটাই স্বাভাবিক । সেই কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধা ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিতে বলা হয়েছে । আমি রাজ্য সরকারের সঙ্গে রয়েছি । যদি রাজ্য সরকার কাজের সুযোগ দেয় মানুষকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ব । রাজ্য সরকার যদি আমাকে সঙ্গে না নেয় তাতেও অসুবিধা নেই । আমি আমার মতো করে বড় লঞ্চ ভাড়া করেছি । তাতে পর্যাপ্ত ত্রিপল, চাল ও ওষুধের ব্যবস্থা থাকছে ।"
কিন্তু এখনও এলাকার বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের দেখা মেলেনি । সেই প্রসঙ্গে কান্তিবাবু বলেন," গত 9-10 মাস এলাকার বিধায়ক দেবশ্রী রায় এই চত্বরে আসেননি । টোটো কেলেঙ্কারির 3 কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন । মুখ্যমন্ত্রীকে আমি সব জানিয়েছি । কোনও ব্যবস্থা হয়নি । হয় গরিব মানুষের টোটো ফেরত দিন না হলে টাকার সংস্থান করে দিন । "