ETV Bharat / state

জীবিত অবস্থায় পুজো পেয়েছেন জ্যোতি বসু

মুর্শিদাবাদের এক পরিবার পুজো করত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর । আজ তাঁর 107 তম জন্মদিনে স্মৃতিচারণ করছেন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Jul 8, 2020, 8:48 PM IST

Updated : Jul 9, 2020, 12:31 PM IST

কলকাতা, 8 জুলাই : কখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে নতুন পদ খাওয়ার আবদার । কখনও জন্মদিনে মোমের মূর্তিতে পেন গুঁজে দেওয়া । মুর্শিদাবাদের এক পরিবার তাঁর পুজোও করতেন । জ্যোতি বসু । আজ তাঁর 107 তম জন্মদিনে টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি ভেসে উঠছে রমলা চক্রবর্তীর কথায় । জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ও পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী । দীর্ঘদিন জ্যোতি বসুর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল সুভাষ চক্রবর্তীর পরিবারের । জ্যোতিবাবু যখন রাজভবনে সপরিবারে থাকতেন সেই সময় থেকে । 11 বছর আগেও জ্যোতি বসুর শেষ জন্মদিন পালন করেছিলেন রমলা চক্রবর্তী । আজ নানা কথা ভিড় করে আসছে ।

মুর্শিদাবাদের এক ভদ্রমহিলার আসনে বহু দেবদেবীর সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু । তৎকালীন ক্রীড়া যুব কল্যাণ এবং পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী বিশেষ কাজে মুর্শিদাবাদে গিয়ে দেখলেন এক মহিলা তাঁর ছোট্টো গোপালের সঙ্গে পাশের আসনে জ্যোতি বসুকে পুজো করছেন । গোপালের ভোগের সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে মালায় চন্দনে ফুলে ভোগ নিবেদন করেছেন তিনি । রমলা চক্রবর্তীর কথায়, " ওই মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা জ্যোতিবাবুকে পুজো করছেন কেন? পরে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, যিনি দুবেলা-দুমুঠো খাবার দিচ্ছেন, তিনি তো ভগবান । ওই ভদ্রমহিলার ছেলের জন্য এক টুকরো জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু । ভূমি সংস্কারের আমূল পরিবর্তন এনে পশ্চিমবঙ্গে বহু গরিব মানুষের ভগবান হয়ে উঠেছিলেন তিনি ।"

ইন্দিরা ভবনে জন্মদিন পালনের কথা বলতে গিয়ে গলা জড়িয়ে এল রমলা দেবীর । বলেন, " এরকমই এক 8 জুলাই । জ্যোতিবাবুর জন্মদিনে ইন্দিরা ভবনে জ্যোতিবাবুরই মোমের মূর্তি তৈরি করে নিয়ে গেছিলাম আমরা । ইন্দিরা ভবনের বারান্দায় জ্যোতিবাবুর বসার চেয়ারের পাশে অবিকল জ্যোতিবাবুর আদলে তৈরি মোমের মূর্তি রাখা হয়েছিল । নিজের মূর্তি দেখে হতবাক তিনি । বললেন, আরে এ তো আমি । রমলা এই মোমের মূর্তিতে একটা জিনিসের অভাব রয়েছে । কী বলতো সেটা? সঙ্গে সঙ্গে সুভাষদা বললেন, জ্যোতিবাবু আপনি বলুন কী ঘাটতি রয়েছে । জ্যোতিবাবু স্বয়ং নিজের বাঁ দিকের বুক পকেট থেকে কলমটা তুলে মোমের মূর্তির পাঞ্জাবির বাঁদিকের পকেটে গুঁজে দিলেন । "

জ্যোতি বসুর জন্মদিনের নানা ঘটনা প্রসঙ্গে রমলা চক্রবর্তী

রমলা চক্রবর্তীর ভাইপোর বিয়েতে জ্যোতিবাবুকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক সুভাষ চক্রবর্তী । সেদিন জ্যোতিবাবুর আবদার ছিল, "রমলার ভাইপোর বিয়েতে যেতে পারি । কিন্তু নতুন কোনও পদ খাওয়াতে হবে ।" সেদিন সুভাষ চক্রবর্তী জ্যোতিবাবুকে কথা দিয়েছিলেন, "আপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে । আপনি আসুন ।" বাড়িতে এসে চিন্তিত সুভাষ চক্রবর্তী । শ্যালকের পুত্রের বৌভাতে নতুন কী এমন মেনু করবেন, যা খেয়ে জ্যোতিবাবু খুশি হবেন! সংশ্লিষ্ট ক্যাটারিং সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হল । জ্যোতিবাবুর জন্য সেদিন তৈরি হয়েছিল আইসক্রিম ভাজা । চকোলেট এবং নারকেলের পুডিং দিয়ে কোটিং করা হয়েছিল আইসক্রিম‌ । তারপর কলকাতার সেরা ক্যাটারিং সংস্থা তৈরি করেছিল আইসক্রিম ভাজা । অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন জ্যোতি বসু ।"

স্মৃতিচারণে রমলা চক্রবর্তী

শেষের দিকে অত্যন্ত স্বল্পাহারী হয়ে পড়েছিলেন । চিলি ফিস খেতে খুব ভালোবাসতেন । নিন্দুকেরা বলেন জ্যোতিবাবু হাসতে ভুলে গিয়েছিলেন । কিন্তু জ্যোতিবাবুর ছোটো ছোটো বক্তব্যগুলিই কখনও কখনও হাসির ঢেউ তুলত । বলে চলেছেন রমলা চক্রবর্তী।

এদিকে জন্মদিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ করেছেন বাম নেতা তড়িৎবরণ তোপদার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও তাঁর স্মৃতিতে উজ্জ্বল । কম কথা বলা, টুকরো টুকরো কথা বলা জ্যোতি বসুও যে কাঁদতে পারেন, সে কথা ভুলেও সেদিন বিশ্বাস হয়নি তাঁর ।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিচারণায় তড়িৎবরণ তোপদার

কলকাতা, 8 জুলাই : কখনও বিয়ের অনুষ্ঠানে নতুন পদ খাওয়ার আবদার । কখনও জন্মদিনে মোমের মূর্তিতে পেন গুঁজে দেওয়া । মুর্শিদাবাদের এক পরিবার তাঁর পুজোও করতেন । জ্যোতি বসু । আজ তাঁর 107 তম জন্মদিনে টুকরো টুকরো অনেক স্মৃতি ভেসে উঠছে রমলা চক্রবর্তীর কথায় । জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়া ও পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী । দীর্ঘদিন জ্যোতি বসুর সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল সুভাষ চক্রবর্তীর পরিবারের । জ্যোতিবাবু যখন রাজভবনে সপরিবারে থাকতেন সেই সময় থেকে । 11 বছর আগেও জ্যোতি বসুর শেষ জন্মদিন পালন করেছিলেন রমলা চক্রবর্তী । আজ নানা কথা ভিড় করে আসছে ।

মুর্শিদাবাদের এক ভদ্রমহিলার আসনে বহু দেবদেবীর সঙ্গে পূজিত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু । তৎকালীন ক্রীড়া যুব কল্যাণ এবং পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী বিশেষ কাজে মুর্শিদাবাদে গিয়ে দেখলেন এক মহিলা তাঁর ছোট্টো গোপালের সঙ্গে পাশের আসনে জ্যোতি বসুকে পুজো করছেন । গোপালের ভোগের সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে মালায় চন্দনে ফুলে ভোগ নিবেদন করেছেন তিনি । রমলা চক্রবর্তীর কথায়, " ওই মহিলাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনারা জ্যোতিবাবুকে পুজো করছেন কেন? পরে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, যিনি দুবেলা-দুমুঠো খাবার দিচ্ছেন, তিনি তো ভগবান । ওই ভদ্রমহিলার ছেলের জন্য এক টুকরো জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন জ্যোতি বসু । ভূমি সংস্কারের আমূল পরিবর্তন এনে পশ্চিমবঙ্গে বহু গরিব মানুষের ভগবান হয়ে উঠেছিলেন তিনি ।"

ইন্দিরা ভবনে জন্মদিন পালনের কথা বলতে গিয়ে গলা জড়িয়ে এল রমলা দেবীর । বলেন, " এরকমই এক 8 জুলাই । জ্যোতিবাবুর জন্মদিনে ইন্দিরা ভবনে জ্যোতিবাবুরই মোমের মূর্তি তৈরি করে নিয়ে গেছিলাম আমরা । ইন্দিরা ভবনের বারান্দায় জ্যোতিবাবুর বসার চেয়ারের পাশে অবিকল জ্যোতিবাবুর আদলে তৈরি মোমের মূর্তি রাখা হয়েছিল । নিজের মূর্তি দেখে হতবাক তিনি । বললেন, আরে এ তো আমি । রমলা এই মোমের মূর্তিতে একটা জিনিসের অভাব রয়েছে । কী বলতো সেটা? সঙ্গে সঙ্গে সুভাষদা বললেন, জ্যোতিবাবু আপনি বলুন কী ঘাটতি রয়েছে । জ্যোতিবাবু স্বয়ং নিজের বাঁ দিকের বুক পকেট থেকে কলমটা তুলে মোমের মূর্তির পাঞ্জাবির বাঁদিকের পকেটে গুঁজে দিলেন । "

জ্যোতি বসুর জন্মদিনের নানা ঘটনা প্রসঙ্গে রমলা চক্রবর্তী

রমলা চক্রবর্তীর ভাইপোর বিয়েতে জ্যোতিবাবুকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক সুভাষ চক্রবর্তী । সেদিন জ্যোতিবাবুর আবদার ছিল, "রমলার ভাইপোর বিয়েতে যেতে পারি । কিন্তু নতুন কোনও পদ খাওয়াতে হবে ।" সেদিন সুভাষ চক্রবর্তী জ্যোতিবাবুকে কথা দিয়েছিলেন, "আপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে । আপনি আসুন ।" বাড়িতে এসে চিন্তিত সুভাষ চক্রবর্তী । শ্যালকের পুত্রের বৌভাতে নতুন কী এমন মেনু করবেন, যা খেয়ে জ্যোতিবাবু খুশি হবেন! সংশ্লিষ্ট ক্যাটারিং সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হল । জ্যোতিবাবুর জন্য সেদিন তৈরি হয়েছিল আইসক্রিম ভাজা । চকোলেট এবং নারকেলের পুডিং দিয়ে কোটিং করা হয়েছিল আইসক্রিম‌ । তারপর কলকাতার সেরা ক্যাটারিং সংস্থা তৈরি করেছিল আইসক্রিম ভাজা । অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন জ্যোতি বসু ।"

স্মৃতিচারণে রমলা চক্রবর্তী

শেষের দিকে অত্যন্ত স্বল্পাহারী হয়ে পড়েছিলেন । চিলি ফিস খেতে খুব ভালোবাসতেন । নিন্দুকেরা বলেন জ্যোতিবাবু হাসতে ভুলে গিয়েছিলেন । কিন্তু জ্যোতিবাবুর ছোটো ছোটো বক্তব্যগুলিই কখনও কখনও হাসির ঢেউ তুলত । বলে চলেছেন রমলা চক্রবর্তী।

এদিকে জন্মদিনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে স্মরণ করেছেন বাম নেতা তড়িৎবরণ তোপদার। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও তাঁর স্মৃতিতে উজ্জ্বল । কম কথা বলা, টুকরো টুকরো কথা বলা জ্যোতি বসুও যে কাঁদতে পারেন, সে কথা ভুলেও সেদিন বিশ্বাস হয়নি তাঁর ।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতিচারণায় তড়িৎবরণ তোপদার
Last Updated : Jul 9, 2020, 12:31 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.