কলকাতা, 28 এপ্রিল: সারাদিন তিনিই কার্যত ছিলেন খবরের শিরোনামে ৷ কখনও বিচারপতির উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, তো কখনও পালটা হাইকোর্টে বসে শীর্ষ আদালতের সেক্রেটারি জেনারেলকে পালটা নির্দেশ ৷ রীতিমতো টানটান উত্তেজনা ৷ আর রাতে হাইকোর্ট থেকে বেরিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, "সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সকলকে মানতে হবেই ৷"
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক কড়া নির্দেশ দিয়ে কার্যত প্রচারের উজ্জ্বল আলোয় উঠে এসেছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এমনকী রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীকে রাতের মধ্যে সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দিতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি ৷ তবে শুক্রবার দিনটা অন্যরকম গেল বিচারপতির ৷ এদিন পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে বলে সিবিআইয়ের আইনজীবীকেও ফেরত পাঠিয়ে দেন বিচারপতি ৷ সারাদিন মোটামোটি হাইকোর্টে থাকলেও তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য মামলা শোনেননি বা নির্দেশও দেননি ৷ দুপুরের দিকে অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের উদ্দেশে নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, রাত 12টার মধ্যে তাঁর সাক্ষাৎকারের অনুবাদের প্রতিলিপি জমা দিতে হবে ৷ তার আগেই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কপি কলকাতা হাইকোর্টে এসে পৌঁছয় ৷
দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এদিন সাফ জানিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির দুটি মামলা থেকে সরতে হবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে ৷ সেই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে মামলা স্তানান্তর করার নির্দেশও দেওয়া হয় ৷ এদিন ঘড়ির কাঁটায় ন'টা 38 মিনিটে হাইকোর্টের বাইরে আসেন বিচারপতি ৷ গাড়ির সামনে আসতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, তিনি নিজে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা থেকে সরছেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তাঁকে সরতে হচ্ছে । সেই সঙ্গে তিনি বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। একটা শৃঙ্খলা তো আছে। নিয়ম অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট হল এই দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে তা সকলকেই মেনে চলতে হবে।"
দিন শেষে বিচারপতির মন্তব্যে স্পষ্ট নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে বদল করার যে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে, সেক্ষেত্রে নতুন করে আর সংঘাত চাইছেন না তিনি। অন্যদিকে, যারা আন্দোলন করছেন তারা এই সিদ্ধান্তে ভেঙে পড়েছেন ৷ এই মন্তব্যের জবাবে বিচারপতি বলেন, "যার যতই মন খারাপ হোক না কেন, সেখানে বিশেষ কিছু করার নেই। কারণ সুপ্রিম কোর্টকে সকলকেই মেনে চলতে হবে।" তবে এদিনও তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, যতদিন তিনি বিচারপতি পদে থাকবেন, বা অবসরের পরও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই চলবে। বিচারপতি বলেন, "মন খারাপ নেই। কারণ এই মামলা আমি কোনও ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করিনি। কাজেই এই মামলা আমার কাছে রইল না বা অন্য কারও কাছে গেল তা নিয়ে আমার কোনও মাথা ব্যাথা নেই।"
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দু'টি মামলা হাতছাড়া বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
চাকরিপ্রার্থীদের উদ্দেশ্যে এদিন বিচারপতি বলেন, "আপনারা অপেক্ষা করুন। মামলা তো শেষ হয়ে যায়নি ৷ মামলা অন্য বিচারপতির কাছে যাচ্ছে । তিনিও তো হাইকোর্টের একজন বিচারপতি ।" আগামী সোমবার থেকে তিনি কি আবার একইভাবে কাজে যোগ দেবেন নাকি, তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তা রয়েছে ? এদিন সেই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি দ্বর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন, আগামী সোমবার থেকে তিনি আবার যথারীতি কাজে যোগ দিচ্ছেন। পদত্যাগের কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷