কলকাতা, ১৭ অক্টোবর: কাউন্সিলের কান্নায় তবে কি বরফ গলল? অন্তত হাইকোর্টের ছবি তাই বলছে। বিধাননগরে বেআইনি বাড়ি ভাঙার যে নির্দেশ সোমবার দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মঙ্গলবার সেই নির্দেশেই আপাতত স্থগিতাদেশ দিলেন বিচারপতি নিজেই । তিনি আরও নির্দেশ দিয়েছেন, আপাতত জল ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে না । পুজোর পর ওই বহুতল ভাঙা হবে ৷ এদিন হাইকোর্টের এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই এলাকার কাউন্সিলর । তারপরেই সিদ্ধান্ত বদল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ।
এদিন বিচারপতি বলেন,"দুর্গাপুজোর আগে কারও মাথা থেকে ছাদ চলে যাক তা চায় না আদালত । এরা প্রত্যেকেই গরীব । দেখে বোঝা যাচ্ছে কেউ আদানি, কেউ আম্বানির ছেলে নয়। তবে যারা এখানে বসবাস করছেন তারা অধিকাংশই বাইরে থেকে এসেছেন, মালিক নন তারা। পুলিশ তদন্ত করবে কারা বেআইনিভাবে বসবাস করছেন ৷" গতকাল যারা আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন তাদের নাম ঠিকানা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি । তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আদালত ।
বিচারপতি এদিন জানান, ওই বহুতল ভাঙা হবেই । পুজোর পরে তা হবে ৷ বিধানগরের শান্তিনগর অবৈধ নির্মাণের জন্য গতকাল বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন একটি বহুতল ভেঙে ফেলতে । মোট ১৬টি পরিবারের বাস ওই আবাসনে । এদিন বিচারপতি তাঁর নির্দেশে বলেন, "ফ্ল্যাট মালিকদের টাকা ফেরত দিতে হবে প্রোমোটারদের । ফ্ল্যাটের বকেয়া টাকা আর প্রমোটারদের দিতে হবে না, ফ্ল্যাট মালিকদের ৷" এদিনের নির্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেন,"ইডি এই মামলায় পার্টি হবে । এদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলব । নির্দেশ দেব, ছুটির পর এবিষয়ে তারা খতিয়ে দেখবে ৷ কারা রয়েছে এর পিছনে । কোথাও একটা ইঁট গাঁথলে পৌরসভা বাধা দেয় । কিন্তু আপনারা পিসি সরকারের মতো, তাই কেউ জানতেই পারলেন না চারতলা বাড়ি হয়ে গেল। পুজোয় পুলিশের সংখ্যা কম থাকে। তাই পুজোর পর । দরকারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নেওয়া হবে ওই বাড়ি ভাঙার জন্য । ভিডিওগ্রাফি করা হবে।"
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে অবিলম্বে অপসারণ করা উচিত, পরামর্শ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
এদিনের শুনানিতে এলাকার কাউন্সিলর চামেলী নস্করের উদ্দেশ্যে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এত বড় বাড়ি কীভাবে তৈরি হল ? এদের দায়িত্ব কে নেবে এবার ? এটাও সত্যি এরা যাবেন কোথায় !" সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলর কেঁদে ফেলেন আদালতে । তিনি বলেন "এরা অত্যন্ত গরিব । মাত্র 200 স্কোয়্যার ফিট বাড়িতে থাকেন । অনেককেই ছেলেমেয়ারা দেখে না । এখানে একটু মাথা গোঁজার ঠাই করেছে । পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছি । অনেক আলোচনাও হয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি । অনুরোধ করছি একটু বিবেচনা করুন ।"
বিধাননগর পৌরসভার তরফে আইনজীবী শীর্ষন্য বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন আদালতে জানান, বেয়াইনি নির্মাণকে কোনওভাবেই রেগুলারাইজেশন করা যায় না । তারপরই বিচারপতি জানান, আইন কোনও সহানুভূতি দেখে না। মেয়র ও কমিশনারকে অনুরোধ করছি কাউন্সিলরকে নিয়ে মিটিংয়ে বসার । কোনও সমাধান পাওয়া যায় কি না দেখতে । লক্ষ্মীপুজোর পর 24 নভেম্বরের মধ্যে সমাধান বের করতে হবে । 19 ডিসেম্বরে মামলার পরবর্তী শুনানি এই মামলার ।