কলকাতা, 6 অগাস্ট : 370 ধারা তুলে দেওয়ার পর থমথমে উপত্যকা । জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের বিশেষ করে পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে রাজ্যগুলিকে বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র ৷ এই অবস্থায় জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আসা পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । সাধারণত, হস্টেল দেওয়ায় ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অর্থনৈতিক অবস্থা, দূরত্বের মতো বেশ কিছু মানদণ্ড রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে । কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে জম্মু ও কাশ্মীরের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল কমিটি । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কাশ্মীরি পড়ুয়াদের হস্টেলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ।
প্রতি বছরই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চার-পাঁচজন পড়ুয়া আসেন কাশ্মীর থেকে । যদিও গত বছরের তুলনায় এই বছর বেশি কাশ্মীরি পড়ুয়া এসেছেন । প্রায় 18 জন । তাঁদের প্রত্যেকেরই হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানাচ্ছেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু । তিনি বলেন, "আমাদের এখানে প্রতি বছরই কাশ্মীর থেকে ছাত্রছাত্রীরা আসে । বাইরের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পড়ুয়ারা আসে । তাঁরা সাধারণত প্রাইম মিনিস্টার স্পেশাল স্কলারশিপ (PMSS) স্কিমের অধীনে ভরতি হয় । এই বছর স্নাতকে 10-12 জন ভরতি হয়েছে । আর অনেকেই যাঁরা ভরতি হতে পারে না তাঁরা সেকেন্ড ইয়ারে ল্যাটারাল এন্ট্রি নিয়ে ভরতি হয়, সেখানে 3-4 জন ভরতি হয়েছে । আমাদের তো বিদেশি পড়ুয়াদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা আছে । সেখানে তাঁরা থাকে । কিন্তু, সেখানে যেহেতু লিমিটেড সিট তাই সবাই হয়ত সবসময় সিট পায় না । কখনও কখনও তাঁদের বাইরেও থাকতে হয় । কিন্তু, এখন যেহেতু একটা এমারজেন্সি সিচুয়েশন, টাকাপয়সার ব্যবস্থা তারা করতে পারছে না, মানি ট্রান্সফার করতে পারছে না ৷ সেই কারণে আমরা বিশেষভাবে নির্দেশিকা দিয়েছি, যাতে তাদের বিশেষভাবে প্রথম প্রায়োরিটি দিয়ে হস্টেলে নিয়ে নেওয়া হয় ।"
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আসা পড়ুয়াদের হস্টেলের ক্ষেত্রে এই অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু আরও বলেন, "গতকাল দু'একজনকে ভরতি করা হয়েছে । তারা বাইরে পারছে না । তাদের এমারজেন্সি বেসিসে হস্টেলে নেওয়া হয়েছে । সাধারণত সিট পাওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতাটা দেখা হয়, আর দূরত্ব তো আছে যেহেতু এরা বাইরে থেকে আসছে । কিন্তু এই বছর মূলত তাঁদের ক্ষেত্রে যেভাবেই হোক অ্যালটমেন্ট দিয়ে দিচ্ছি । যাতে ওদের কোনওরকম অসুবিধা না হয় টাকা পয়সার ব্যাপারে । এবার আমরা চেষ্টা করছি কাশ্মীরের ছাত্রদের সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে ৷"
জম্মু ও কাশ্মীরের থেকে আসা পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়ে কী কোনও নতুন পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ? স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, "সব হস্টেলেই যতদূর সম্ভব আমরা ইন্টার্নাল সিকিউরিটি দিয়ে থাকি । আমাদের ফরেন স্টুডেন্টদের যে হস্টেলটা আছে তাদের জন্য আমাদের সিকিউরিটি দেওয়া আছে । আসলে এই ইশু নিয়ে এখানে তো কোনও রকম ঘটনা ঘটেনি । তাই আলাদা সিকিউরিটির কথা আমরা কিছু ভাবিনি । আর আমরা ওভারঅল দেখছি ।"
স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন কাশ্মীর থেকে আসা পড়ুয়ারা । কাশ্মীর থেকে আসা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের স্নাতকের থার্ড ইয়ারের পড়ুয়া ফারদিন খুরশিদ ভাট এ বিষয়ে বলেন, "কাশ্মীর থেকে এখন নতুন কিছু পড়ুয়া আসার কথা ছিল । তাঁদের এখানে থাকার সমস্যা হতে পারত । কারণ, তাঁরা সম্পূর্ণ নতুন একটা জায়গায় আসছিল । এখানকার আবহাওয়া, খাবার, ভাষা সবই নতুন তাঁদের জন্য । আমার মনে হয় তার উপর তাঁরা ভয় পেয়ে আছেন । কারণ, কাশ্মীরের পরিস্থিতি এখন খারাপ । আর আমরা প্রায় দেখি কাশ্মীরের যে পরিস্থিতি হয় তার প্রভাব কাশ্মীরের বাইরে যাঁরা থাকেন তাঁদের উপর পড়ে । সেই হিসাবে আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আমি যা শুনলাম, কাশ্মীর থেকে যে সব পড়ুয়ার আসছেন তাঁরা হস্টেলের সুবিধা পাবেন । "
তাঁদের কথায় কাশ্মীরে থাকা পরিবারের লোকজনদের জন্য দুঃশ্চিন্তা বেশি উঠে এসেছে । ইতিহাসের স্নাতকের থার্ড ইয়ারের পড়ুয়া ফারদিন খুরশিদ ভাটের বাড়ি সাউথ কাশ্মীরে । সেখানে তাঁর বাবা-মা ও তিন বোন রয়েছে । দু'দিন আগে শেষ তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন ফারদিন । কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ফারদিন বলেন, "এখন কাশ্মীরের অবস্থা কী তা আমি জানি না । এটাই সবথেকে বড় সমস্যা । কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ৷ দু'দিন আগে ঘরের লোকজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তখন মা বলছিলেন এরকম হতে পারে । কিন্তু, ওরা খাবার মজুত করে রেখেছিলেন কি না, বাকি প্রয়োজনের জিনিস রেখেছিলেন কি না আমি জানি না । এটাই প্রধান সমস্যা যে আমরা আমাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না । আমার মন এখন এখানে নেই । আমার মন এখন কাশ্মীরে পরিবারের লোকজনদের কাছে ।" তবে, বাড়ির লোকদের জন্য দুঃশ্চিন্তা থাকলেও কলকাতায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও চিন্তা করছেন না ফারদিন । কলকাতাকে নিজের জন্য সুরক্ষিত বলেই মনে করছেন তিনি ।