কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর : বাংলাদেশের মডেল প্রয়োগ করা হচ্ছে এ দেশেও! পশ্চিমবঙ্গ-অসম-ত্রিপুরা হয়ে উঠেছে রেড করিডর । এই তিন রাজ্যের মাদ্রাসাগুলিকে টার্গেট করছে জামাত-উল-মুজাহিদিন । সম্প্রতি জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়া (JMI)-র এই ছকের কথা জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা । মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত জঙ্গি জহিরুল শেখকে জেরা করে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে । জঙ্গি জাল বিস্তারে জামাত ছকের কথা জানতে পেরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন গোয়েন্দারা ।
কী সেই ছক?
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, খাগড়াগড়কাণ্ডের পর থেকেই সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে মাদ্রাসাগুলি । রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসায় নজরদারি শুরু করেন গোয়েন্দারা । জানা যায়, অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদ্রাসাগুলি বেশিরভাগই নিয়মকানুন মেনে চলে । সেখানে ইসলামের সঠিক শিক্ষাই দেওয়া হয় । বিকৃত করা হয় না শিক্ষাদানের পদ্ধতি । কোরান (কুরআন) বা হাদিসের বক্তব্যের বিকৃতিও সেখানে হয় না । ফলে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে জঙ্গি খাতায় নাম লেখানোর ঘটনা খুবই কম । তাদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করলেও সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে । আর তাই জামাতের ছক একটু ভিন্ন । এক্ষেত্রে জামাত অনুসরণ করছে 'হরকাতুল জেহাদ'-র পথ । তাদের বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ, ফিঁদায়ে গ্রুপের জন্য পছন্দ মাদ্রাসা পড়ুয়া । সংগঠন বিস্তার, স্ট্র্যাটেজি তৈরি-সহ অন্য কাজের জন্য পছন্দ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকরা । ইসলাম বা আরবির সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত মাদ্রাসার শিক্ষকরা কখনই জেহাদের কথা শেখাবে না তা ভালো মতোই জানে JMI । মাদ্রাসা পড়ুয়াদের টার্গেট করতে হলে প্রয়োজন জামাত জঙ্গিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ । তা করতে পারলে মাদ্রাসা থেকেই শুরু করা যাবে মগজধোলাইয়ের খেলা ।
গতমাসে NIA মধ্যপ্রদেশ থেকে জহিরুলকে গ্রেপ্তার করে । তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই কপালে ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের । জানা গেছে, জহিরুল মাদ্রাসায় শিক্ষকের কাজ খুঁজছিল । গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করার জন্য সে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, সমাজের মূলস্রোতে ফিরতেই শিক্ষকের চাকরি খুঁজছিল । কিন্তু টানা জেরার মুখে এখন অনেকটাই ভেঙেছে সে । সেখান থেকেই গোয়েন্দাদের সামনে এসেছে জামাতের ভয়ঙ্কর ছকের কথা । সেই সূত্রে গোয়েন্দারা আরও একবার জেরা করতে চাইছে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থেকে ধৃত JMI জঙ্গি মুশিফুর রহমান ওরফে ফারুক ও রাহুল আমিন ওরফে সাইফুল্লাহকে । কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ফোর্স গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের গ্রেপ্তার করে । ফারুক ইছাখালি গ্রামের BDL সিনিয়র মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের শিক্ষক ছিল । আর রাহুল ছিল আমিন বাবুপুর শিশুকল্যাণ মাদ্রাসার আরবির শিক্ষক । তাদের ঘর থেকে অ্যালুমিনিয়াম ডাস্ট, ক্যালথার ও সালফিউরিক অ্যাসিড-সহ বিভিন্ন বিস্ফোরক সরঞ্জাম পাওয়া গেছিল । এই দু'জন পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাদ্রাসায় পড়িয়েছে । এই 5 বছরে তারা কতজনের মগজধোলাই করেছে তা দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে গোয়েন্দারা । কারণ গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জামাতের ছকেই তারা শিক্ষকতার কাজ করত ।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, নিজেদের ছক বাস্তবায়ন করতে জামাতের নজর রয়েছে খারেজি মাদ্রাসাগুলিতে । এক সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে দশ হাজার খারেজি মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেবেন তিনি । নবান্ন সূত্র জানাচ্ছে, এই 10 হাজারের মধ্যে প্রায় 250টি মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । মূলত মসজিদ লাগোয়া ছোটো কয়েকটি ঘর নিয়েই এই মাদ্রাসাগুলি গড়ে ওঠে । কারও কারও ব্যক্তিগত জমিতেও গড়ে উঠতে পারে । যেমনটা হয়েছিল মোকিমনগর ও শিমুলিয়া মাদ্রাসার ক্ষেত্রে । এই ধরনের মাদ্রাসাগুলিতে নজরদারির অভাব রয়েছে । সেই সুযোগেই মূলত অসচেতন, হতদরিদ্র মুসলিম পরিবারের পড়ুয়াদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে । এখানে জামাত নিজেদের লোকজনকে শিক্ষক হিসেবে বসাচ্ছে । তারা ধর্মীয় আবেগে ইন্ধন দিয়ে এই পড়ুয়াদের সন্ত্রাসবাদী কাজে লিপ্ত করাচ্ছে ।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এ রাজ্যে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদের কিছু মাদ্রাসায় চলছে জঙ্গি প্রশিক্ষণ । সংসদে দাঁড়িয়ে এই গোয়েন্দা রিপোর্টের কথা স্বীকার করে নেন খোদ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি । তারপর সামনে এল মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জামাত ছকের প্রসঙ্গ । গোয়েন্দারা মনে করছেন এই ছক যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ ।