কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: বেসরকারি এক IVF সেন্টারে চিকিৎসা মেলেনি যথাযথ । যার জেরে, অন্যত্র চিকিৎসা করাতে হয়েছে অভিযোগকারীকে । এই অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযোগকারীকে 52 হাজার 700 টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই IVF সেন্টারকে নির্দেশ দিল ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) ।
কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার বেসরকারি একটি IVF সেন্টারে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন এই অভিযোগকারী । কমিশনে তিনি অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই IVF সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা চলছিল । এর জন্য তিনি কিছু টাকা জমাও দিয়েছিলেন । তবে, এই সেন্টারে দু'বার চিকিৎসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও, তাঁর চিকিৎসা যথাযথ হয়নি । তিনি অসহ্য কষ্ট পাচ্ছিলেন । তাই অন্যত্র চিকিৎসা করিয়েছেন । কমিশন জানিয়েছে, এই IVF সেন্টার কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, দু'বার নয়, একবার চিকিৎসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল । আর একবার চিকিৎসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অভিযোগকারীকে সেন্টারে যেতে বলা হয়েছিল । রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "অন্য জায়গায় চিকিৎসা করানোর জন্য 40 হাজার টাকা খরচ হয়েছে অভিযোগকারীর । এই IVF সেন্টারে দ্বিতীয় প্রক্রিয়ার জন্য খরচ হয়েছে 12 হাজার 700 টাকা। মোট 52 হাজার 700 টাকা অভিযোগকারীকে দেওয়ার জন্য এই IVF সেন্টারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
এদিকে, অন্য একটি ঘটনায় মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই কমিশনে দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয়, ওই হাসপাতালে এক COVID-19 রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে অনেক বেশি টাকার বিল ধরানো হয়েছে । তার উপর, ওই রোগীর চিকিৎসা যথাযথ ভাবে হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিজনদের । সত্তরোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা রোগী সন্তোষপুর অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন । কমিশন জানিয়েছে, COVID-19-এ আক্রান্ত এই বৃদ্ধার চিকিৎসার খরচ হিসাবে মুকুন্দপুরের বেসরকারি ওই হাসপাতালে মোটা অঙ্কের বিল করা হয়েছিল । এর মধ্যে 4 লাখ 80 হাজার টাকার দিয়েছেন পরিজনরা । বকেয়া বিল হিসাবে রয়েছে 4 লাখ 60 হাজার টাকা । এই রোগীর মৃত্যু হয় । মৃত রোগীর ছেলে কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের যথাযথ চিকিৎসা হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগের বিচার এই কমিশনের এক্তিয়ারের বাইরে । যদি মনে হয় চিকিৎসার অবহেলা করা হয়েছে, তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট স্থানে অভিযোগ জানাতে পারেন । অভিযোগকারী জানিয়েছেন, তাঁর মা মারা গিয়েছেন, তাঁর বাবা অসুস্থ । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে ওই হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি তিন সপ্তাহ সময় চান । কমিশন জানিয়েছে, নিজেরা মিটিয়ে দিতে চাইছেন তাই সেক্ষেত্রে কমিশন বাধা দেবে না । তবে, যদি প্রয়োজন দেখা দেয় তা হলে ভবিষ্যতে অভিযোগকারী কমিশনে অভিযোগ জানাতে পারেন ।
অন্য একটি ঘটনায়, কলকাতার বেসরকারি একটি চক্ষু হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ জানানো হয় রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশনে । কমিশন জানিয়েছে, চার বছর বয়সি সন্তানের চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তার মা । তিনি কমিশনে অভিযোগে জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক দুর্ব্যবহার করেছেন । কমিশন জানিয়েছে, এই মামলায় চক্ষু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ওই চিকিৎসক এখন আর ওই হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত নেই । তবে এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে । অভিযোগকারীকে লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে দুঃখ প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে । এভাবে এই মামলাটির নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন ।
অন্য আরও একটি ঘটনায় সল্টলেকে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ জানানো হয় রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশনে । এই অভিযোগে জানানো হয়, পেসমেকার বদল করার জন্য এক রোগীকে ওই হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল। কারণ, এই রোগীর পেসমেকারে সমস্যা দেখা দিয়েছিল । সেটি বদলানোর প্রয়োজন ছিল । তবে, পেসমেকার বদলানোর আগেই ওই রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হন । তাঁর মৃত্যু হয় । এই ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন মৃত ওই রোগীর পরিজনরা । কমিশন জানিয়েছে, চিকিৎসায় অবহেলার এই অভিযোগের বিচারের এক্তিয়ার নেই এই কমিশনের। এই জন্য অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট স্থানে অভিযোগ জানানোর জন্য বলা হয়েছে ।