ETV Bharat / state

কী এই নিপা ভাইরাস ?

এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই নিপা ভাইরাসের । উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয় । কিন্তু কী এই নিপা ভাইরাস ? কীভাবে ঘটে সংক্রমণ ? আদৌ কি কোনও চিকিৎসা রয়েছে ? নানান তথ্য দিলেন কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটি।

ফোটো সৌজন্যে - @pixabay
author img

By

Published : Jun 5, 2019, 4:56 AM IST

কলকাতা, 5 জুন : নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ইতিমধ্যেই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত কেরলের ২৩ বছরের এক যুবক। তাঁর চিকিৎসা চলছে । কিন্তু, এই ভাইরাস কী ? এমন নামই বা কেন ? কীভাবে ঘটে সংক্রমণ ? আদৌ কি কোনও চিকিৎসা রয়েছে ?

নিপা ভাইরাস নিয়ে নানান তথ্য দিলেন কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটি। কেন এমন নাম? অমিতকুমার হাটি বলেন, "নিপা ভাইরাস একটি RNA ভাইরাস। ১৯৯৮-৯৯ সালে এই ভাইরাস মালয়েশিয়াতে প্রথমে চিহ্নিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার একটি স্থানের নাম নিপা। সেখানে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া গেছিল। এই জন্য এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নিপা।"

  • এই ভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?

অমিয়কুমার বলেন, "এই ভাইরাস পশু-পাখির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে পশুদের মধ্যে। কেউ কেউ বলেন, এই ভাইরাস ঘোড়ার মধ্যেও থাকতে পারে। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতে পাওয়া গেছে শুকরের মধ্যে। বাংলাদেশ, ভারতে পাওয়া গেছে ফলখেকো বাদুড়ের মধ্যে। বাংলাদেশ এবং ভারতে দেখা গেছে, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় খেতে এসেছে বাদুড়। বাদু়ড় খাওয়া ওই রস মানুষ যখন খেয়েছে, তখন মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে নিপা ভাইরাস। এভাবে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে ।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "প্রথমে পশু থেকে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে আসে। যে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সেই মানুষের সংস্পর্শে আসা অন্য মানুষের মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।" যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর থেকে কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে অন্যদের মধ্যে? তিনি বলেন, "হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।"

  • এই ভাইরাসের সংক্রমন কতটা ভয়ংকর হতে পারে?

অমিয়কুমার হাটি বলেন, "ইবোলা ভাইরাসের মতোই এই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণও ভয়ঙ্কর। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে অন্য যাঁরা আসেন, তাঁদেরও‌ মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়।" তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিপা ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

  • নিপা ভাইরাসের সংক্রমনের পরে উপসর্গ হিসেবে কী দেখা দেয়?

চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রচন্ড জ্বর হবে। মাথা ব্যথা হবে। আক্রান্ত অজ্ঞান হয়ে যাবেন। মস্তিষ্ক কাজ করতে পারবে না। মস্তিষ্ক কাজ করতে না পারার জন্য কনফিউশন হবে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। এই ধরনের সমস্যা খুব অল্পদিন অর্থাৎ, দুই-তিনদিনের মধ্যেই দেখা দেয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মাল্টি অর্গান ফেলিওর-এর কারণে মৃত্যু ঘটে।"

  • চিকিৎসা কী রয়েছে, আদৌ কোনও সুযোগ পাওয়া যায়?

কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "চিকিৎসার সুযোগ খুবই অল্প থাকে। এই ভাইরাসের জন্য একটি কার্যকর ওষুধের কথা বলা হয়। কিন্তু তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। যে কারণে চিকিৎসা করা হয় উপসর্গ অনুযায়ী।"

  • নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে দূরে থাকা সম্ভব, আদৌ কি সম্ভব?

অমিয়কুমার হাটি বলেন, "নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং, ওই আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকেই পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। তাঁদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে রাখতে হবে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এই ভাইরাস প্রথমে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ২০০১ থেকে ২০০৫, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। বাংলাদেশ থেকে এই ভাইরাস এদেশের শিলিগুড়িতে এসেছে ২০০১-এ। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেলেই আক্রান্তকে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেও আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যাঁরা নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের ক্ষেত্রে ৫-১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়।"

  • প্রতিরোধের কোনও উপায় রয়েছে?

চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কেউ, এরকম কোনও খবর পেলেই, যেমন কেরলে করা হয়েছে, নিপা ভাইরাসে আক্রান্তকে হাসপাতালে ভরতি করে রাখা হয়েছে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেও মনিটরিং করা হচ্ছে। এভাবে মনিটরিং করা হলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারবে না।"

  • সাধারণ মানুষ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

চিকিৎসক বলেন, "যদি খুব জ্বর হয়, প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে, এনকেফেলাইটিসের মতো মস্তিষ্কে প্রদাহ হচ্ছে, মস্তিষ্ক কোনও কাজ করতে পারছে না, রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যায় ২-৩ দিনের মধ্যে, তখন সন্দেহ করা যেতে পারে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়ে। তখন রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে।"

কেরলের এই ঘটনার জেরে পশ্চিমবঙ্গে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "কেরলে হয়েছে বলে আমাদের এখানে হবে, এমন প্যানিক ছড়িয়ে লাভ আছে?" তিনি বলেন, "আমাদের যেভাবে সতর্ক থাকার কথা, আমরা অ্যালার্ট রয়েছি। কেরল থেকে অনেক মানুষ আসছেন। সবাই নিপা ভাইরাস নিয়ে আসছেন না। দেখতে হবে কীভাবে, কী করা যায়। এখনও কিছু করা হয়নি।"

কলকাতা, 5 জুন : নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ইতিমধ্যেই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত কেরলের ২৩ বছরের এক যুবক। তাঁর চিকিৎসা চলছে । কিন্তু, এই ভাইরাস কী ? এমন নামই বা কেন ? কীভাবে ঘটে সংক্রমণ ? আদৌ কি কোনও চিকিৎসা রয়েছে ?

নিপা ভাইরাস নিয়ে নানান তথ্য দিলেন কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটি। কেন এমন নাম? অমিতকুমার হাটি বলেন, "নিপা ভাইরাস একটি RNA ভাইরাস। ১৯৯৮-৯৯ সালে এই ভাইরাস মালয়েশিয়াতে প্রথমে চিহ্নিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার একটি স্থানের নাম নিপা। সেখানে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া গেছিল। এই জন্য এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নিপা।"

  • এই ভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে?

অমিয়কুমার বলেন, "এই ভাইরাস পশু-পাখির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে পশুদের মধ্যে। কেউ কেউ বলেন, এই ভাইরাস ঘোড়ার মধ্যেও থাকতে পারে। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতে পাওয়া গেছে শুকরের মধ্যে। বাংলাদেশ, ভারতে পাওয়া গেছে ফলখেকো বাদুড়ের মধ্যে। বাংলাদেশ এবং ভারতে দেখা গেছে, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় খেতে এসেছে বাদুড়। বাদু়ড় খাওয়া ওই রস মানুষ যখন খেয়েছে, তখন মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে নিপা ভাইরাস। এভাবে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে ।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "প্রথমে পশু থেকে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে আসে। যে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সেই মানুষের সংস্পর্শে আসা অন্য মানুষের মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।" যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর থেকে কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে অন্যদের মধ্যে? তিনি বলেন, "হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।"

  • এই ভাইরাসের সংক্রমন কতটা ভয়ংকর হতে পারে?

অমিয়কুমার হাটি বলেন, "ইবোলা ভাইরাসের মতোই এই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণও ভয়ঙ্কর। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে অন্য যাঁরা আসেন, তাঁদেরও‌ মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়।" তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিপা ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

  • নিপা ভাইরাসের সংক্রমনের পরে উপসর্গ হিসেবে কী দেখা দেয়?

চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রচন্ড জ্বর হবে। মাথা ব্যথা হবে। আক্রান্ত অজ্ঞান হয়ে যাবেন। মস্তিষ্ক কাজ করতে পারবে না। মস্তিষ্ক কাজ করতে না পারার জন্য কনফিউশন হবে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। এই ধরনের সমস্যা খুব অল্পদিন অর্থাৎ, দুই-তিনদিনের মধ্যেই দেখা দেয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মাল্টি অর্গান ফেলিওর-এর কারণে মৃত্যু ঘটে।"

  • চিকিৎসা কী রয়েছে, আদৌ কোনও সুযোগ পাওয়া যায়?

কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "চিকিৎসার সুযোগ খুবই অল্প থাকে। এই ভাইরাসের জন্য একটি কার্যকর ওষুধের কথা বলা হয়। কিন্তু তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। যে কারণে চিকিৎসা করা হয় উপসর্গ অনুযায়ী।"

  • নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে দূরে থাকা সম্ভব, আদৌ কি সম্ভব?

অমিয়কুমার হাটি বলেন, "নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং, ওই আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকেই পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। তাঁদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে রাখতে হবে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এই ভাইরাস প্রথমে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ২০০১ থেকে ২০০৫, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। বাংলাদেশ থেকে এই ভাইরাস এদেশের শিলিগুড়িতে এসেছে ২০০১-এ। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেলেই আক্রান্তকে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেও আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যাঁরা নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের ক্ষেত্রে ৫-১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়।"

  • প্রতিরোধের কোনও উপায় রয়েছে?

চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কেউ, এরকম কোনও খবর পেলেই, যেমন কেরলে করা হয়েছে, নিপা ভাইরাসে আক্রান্তকে হাসপাতালে ভরতি করে রাখা হয়েছে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেও মনিটরিং করা হচ্ছে। এভাবে মনিটরিং করা হলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারবে না।"

  • সাধারণ মানুষ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

চিকিৎসক বলেন, "যদি খুব জ্বর হয়, প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে, এনকেফেলাইটিসের মতো মস্তিষ্কে প্রদাহ হচ্ছে, মস্তিষ্ক কোনও কাজ করতে পারছে না, রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যায় ২-৩ দিনের মধ্যে, তখন সন্দেহ করা যেতে পারে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়ে। তখন রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে।"

কেরলের এই ঘটনার জেরে পশ্চিমবঙ্গে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "কেরলে হয়েছে বলে আমাদের এখানে হবে, এমন প্যানিক ছড়িয়ে লাভ আছে?" তিনি বলেন, "আমাদের যেভাবে সতর্ক থাকার কথা, আমরা অ্যালার্ট রয়েছি। কেরল থেকে অনেক মানুষ আসছেন। সবাই নিপা ভাইরাস নিয়ে আসছেন না। দেখতে হবে কীভাবে, কী করা যায়। এখনও কিছু করা হয়নি।"

Intro:কলকাতা, ৪ জুন: নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। এ দিকে ফের নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ। এ বার কেরলে। সেখানে ২৩ বছরের একজন যুবক নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত। তাঁর চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, এই ভাইরাস আসলে কী, এমন নামই-বা কেন? কীভাবে ঘটে সংক্রমণ, চিকিৎসা কি আদৌ কিছু রয়েছে? এমন বিভিন্ন বিষয়ে বলেছেন কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, চিকিৎসক অমিয়কুমার হাটি।
Body:নিপা ভাইরাস আসলে কী, কেন এমন নাম? কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা, চিকিৎসক অমিতকুমার হাটি বলেন, নিপা ভাইরাস একটি RNA ভাইরাস। এই ভাইরাস প্রথমে চিহ্নিত হয়েছিল মালয়েশিয়াতে ১৯৯৮-৯৯-তে। মালয়েশিয়ার একটি স্থানের নাম নিপা। সেখানে প্রথম এই ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এই জন্য এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নিপা।"

এই ভাইরাসের সংক্রমণ কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে? এই চিকিৎসক বলেন, "এই ভাইরাস পশু-পাখির মধ্যে থাকে। বিশেষ করে পশুদের মধ্যে। কেউ কেউ বলেন, এই ভাইরাস ঘোড়ার মধ্যেও থাকতে পারে। সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াতে পাওয়া গিয়েছে শুকরের মধ্যে। বাংলাদেশ, ভারতে পাওয়া গিয়েছে ফলখেকো বাদুড়ের মধ্যে। বাংলাদেশ এবং ভারতের দেখা গিয়েছে, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের সময় খেতে এসেছে বাদুড়। বাদুরের খাওয়া ওই রস মানুষ যখন খেয়েছে, তখন মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে নিপা ভাইরাস। এভাবে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে জানানো হয়েছে।"

একই সঙ্গে তিনি বলেন, "প্রথমে পশু থেকে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে আসে। যে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে, সেই মানুষের সংস্পর্শে আসা অন্য মানুষের মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে।" যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর থেকে কীভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে অন্যদের মধ্যে? তিনি বলেন, "হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।"

এই ভাইরাসের সংক্রমন কতটা ভয়ংকর হতে পারে?
ডাক্তার অমিয়কুমার হাটি বলেন, "ইবোলা ভাইরাসের মতোই এই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণও ভয়ঙ্কর। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে অন্য যাঁরা আসেন, তাঁদেরও‌ মৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়।" তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নিপা ভাইরাসে যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের সংস্পর্শে আসা বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

নিপা ভাইরাসের সংক্রমনের পরে উপসর্গ হিসেবে কী দেখা দেয়? এই চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রচন্ড জ্বর হবে। মাথা ব্যথা হবে। আক্রান্ত অজ্ঞান হয়ে যাবেন। মস্তিষ্ক কাজ করতে পারবে না। মস্তিষ্ক কাজ করতে না পারার জন্য কনফিউশন হবে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন। এই ধরনের সমস্যা খুব অল্পদিন অর্থাৎ, দুই-তিনদিনের মধ্যেই দেখা দেয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মাল্টি অর্গান ফেলিওর-এর কারণে মৃত্যু ঘটে।"

চিকিৎসা কী রয়েছে, আদৌ কোনও সুযোগ পাওয়া যায়? কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন এই অধিকর্তা বলেন, "চিকিৎসার সুযোগ খুবই অল্প থাকে। এই ভাইরাসের জন্য একটি কার্যকর ওষুধের কথা বলা হয়। কিন্তু তা এখনও প্রমাণিত হয়নি। নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। যে কারণে চিকিৎসা করা হয় উপসর্গ অনুযায়ী।"

নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে কীভাবে দূরে থাকা সম্ভব, আদৌ কি সম্ভব?
চিকিৎসক অমিয়কুমার হাটি বলেন, "নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা নিশ্চয়ই সম্ভব। এই ভাইরাসে আক্রান্ত এবং, ওই আক্রান্তদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকেই পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। তাঁদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে রাখতে হবে।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "এই ভাইরাস প্রথমে মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। ২০০১ থেকে ২০০৫, বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই ভাইরাস এদেশের শিলিগুড়িতে এসেছে ২০০১-এ। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেলেই আক্রান্তকে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেউ আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যাঁরা নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তাঁদের ক্ষেত্রে ৫-১৪ দিনের মধ্যে দেখা যায়।"Conclusion:প্রতিরোধের কোনও উপায় রয়েছে? এই চিকিৎসক বলেন, "নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কেউ, এরকম কোনও খবর পেলেই, যেমন কেরলে করা হয়েছে, নিপা ভাইরাসে আক্রান্তকে হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। এই আক্রান্তের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদেরকেউ মনিটরিং করা হচ্ছে। এই ভাবে মনিটরিং করা হলে এই ভাইরাস ছড়াতে পারবে না।"

সাধারণ মানুষ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন? চিকিৎসক অমিয়কুমার হাটি বলেন, "যদি খুব জ্বর হয়, প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে, এনকেফেলাইটিসের মতো মস্তিষ্কে প্রদাহ হচ্ছে, মস্তিষ্ক কোনও কাজ করতে পারছে না, এই অবস্থায় যদি হয়, রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যান ২-৩ দিনের মধ্যে, তখন সন্দেহ করা যেতে পারে নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়ে। তখন রক্ত পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে।"

_______

RAP-এ বাইট:
wb_kol_june 4 nipah virus bt 1_7203421
এবং
wb_kol_june 4 nipah virus bt 2_7203421
স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয়কুমার হাটির বক্তব্য

_______


ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.