কলকাতা, 27 জুন : কলকাতা শহরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বহু নজির রয়েছে । তবে, এবার অঙ্গ নয় 22 বছরের পুরোনো হরীতকী গাছ প্রতিস্থাপন করল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল । পৌরনিগমের ছাড়পত্র নিয়েই চলছিল পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ। কিন্তু, সেই কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সুপারের অফিসের পিছনে থাকা 22 বছরের হরীতকী গাছটি । তাই তাকে সমূলে উৎপাটন করতে উঠে পড়ে লাগে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ । তবে, তা একটু অন্যভাবে। কলকাতা পৌরনিগমের সাহায্যে গাছটিকে না কেটে শিকড়সহ তুলে আজ হাসপাতাল চত্বরেই প্রতিস্থাপন করা হল। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে তা সফল করার জন্য যেমন আফটার কেয়ার করতে হয়, তেমনি 22 বছর বয়সি হরীতকী যাতে নতুন মাটিতে শিকড় ধরে রাখতে পারে তার জন্য আগামী 15 দিন তারও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পৌরনিগমের এক আধিকারিক।
কয়েকদিন ধরে মেডিকেল কলেজে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে । নতুন তৈরি সব ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তা নিশ্চিত করতে 33 KV-র একটি পাওয়ার স্টেশন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। সেটা করার জায়গা স্থির করার পরেই দেখা যায় পাওয়ার স্টেশন তৈরি করার কাজে বাধা সৃষ্টি করছে 22 বছর বয়সি হরীতকী গাছটি। এত পুরোনো একটি গাছকে কেটে ফেলার পক্ষপাতী ছিল না মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ । তাই তাদের তরফ থেকে গাছটি প্রতিস্থাপনের অনুরোধ করা হয় কলকাতা পৌরনিগমকে । কর্তৃপক্ষের অনুরোধকে মান্যতা দিয়ে ও বনদপ্তরের অনুমতি পেয়ে হরিতকিকে বাঁচাতে রাজি হয় কলকাতা পৌরনিগম ।
আজ সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় 22 বছর বয়সি হরীতকী গাছ প্রতিস্থাপনের কর্মযজ্ঞ। তবে, তার প্রস্তুতি গত তিনদিন ধরেই চলছিল বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পৌরনিগমের এক আধিকারিক সুশান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "মেডিকেল কলেজে বিল্ডিংয়ের জন্য কয়েকটি গাছ কাটা হয়েছিল। কিন্তু, মেডিকেল কলেজ আমাদের একটা গাছ রি-প্ল্যান্টেশন করার জন্য বলেছিল। মেডিকেল কলেজেই বসানো হবে বলে, ওরা আমাদের MIC দেবাশিস কুমারের কাছে আবেদন করেছিলেন। বন দপ্তরের অনুমতি নিয়ে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের উদ্যোগে আজকে গাছটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হল। তিনদিন আগে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল। গাছের 8 থেকে 10 ফুট রেখে কয়েকটি ডাল আমরা কেটে দিয়ে একটা ওষুধ দিয়ে তাতে প্লাস্টিক বেঁধে রেখে দিয়েছিলাম। আজ প্রক্রিয়া শুরুর প্রথমেই 4 ফুট বাই 4 ফুট একটি গর্ত খোঁড়া হয়। কয়েকটি শিকড় কেটে আবার ওষুধ দেওয়া হয় যাতে গাছের শিকড়টা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তারপরে ওটাকে তুলে নিয়ে এসে এখানে বসানো হল। 15 দিন গাছটাকে প্রত্যেকদিন জল দিয়ে চান করাতে হবে। এখন তো চারদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। প্রচুর গাছ কাটা পড়ে যাচ্ছে। গাছ কাটাও দরকার। কোনও বিল্ডিং বা রাস্তা তৈরি করতে গেলে গাছ কাটার দরকার। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গাছটাকে না কেটে যদি ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি তাহলে কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।"
গাছটি প্রতিস্থাপনের সময় সেখানে আসেন মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, "যদি এটা আমরা বাধ্যতামূলক করে দিতে পারি যে, কোনও গাছ কাটা যাবে না, রি-প্ল্যান্ট করতে হবে, তবে এতে সমস্যাও রয়েছে । কলকাতা মেডিকেল কলেজ কলকাতার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কত পুরোনো প্রতিষ্ঠান। সবথেকে বড় কথা যেখানে মানুষের হৃদয় প্রতিস্থাপন করা হয়, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা গাছকেও প্রতিস্থাপন করতে পারছি ।"
কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল মঞ্জুশ্রী রায় বলেন, "গাছ সংরক্ষণ করার জন্য এটা হাইটাইম। কারণ, আমরা ইকো ব্যালেন্সটাকে নষ্ট করছি। অনেক সময় ডেভলপমেন্টের জন্য প্রয়োজন পড়ে । তবে, গাছটাকে যদি অন্য জায়গায় ট্রান্সপ্লান্ট করা যায় তাহলে গাছটি বাঁচবে। এটা পুরো সমাজের জন্য একটা বার্তা যে, আমাদের আরও বেশি করে গাছ বাঁচাতে হবে । ইকো ব্যালেন্সটা যদি মেনটেইন করা যায় তাহলে সেটা আমাদের পপুলেশনের জন্য ভালো।"