কলকাতা, 15 অগষ্ট: অনাদরে তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ৷ নড়বড়ে অবস্থা শহিদ তিতুমীর স্মৃতি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের ৷ মঙ্গলবার 77 তম স্বাধীনতা দিবসে এই দুই জায়গায় তিতুমীরকে স্মরণ করলেও, ইতিহাস রক্ষায় উদাসীন জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন ৷ স্বাভাবিকভাবেই নারিকেলবেড়িয়া ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের নতুন প্রজন্ম তিতুমীরের বীরগাথা ইতিহাস ভুলতে বসেছে ৷ যে কারণে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন, কবে বেহাল দশার পরিবর্তন ঘটবে ? আদৌ জনপ্রতিনিধি-প্রশাসন 'তিতুমীরের উন্নয়ন' করবে ?
1827 সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তিতুমীর ৷ উত্তর 24 পরগনা, নদিয়া, ফরিদপুর জেলার কৃষক খেত মজুদের ঐক্যবদ্ধ করে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু করেন ৷ উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়ার নারকেলবেড়িয়া গ্রামে গড়ে তোলেন বাঁশের কেল্লা ৷ সেই বাঁশের কেল্লায় কামানের গোলাবর্ষণ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ৷
1831 সালের 19 নভেম্বর মৃত্যু হয় সৈয়দ মীর নিশার আলি ওরফে তিতুমীরের ৷ ফাঁসি দেওয়া হয় তিতুমীরের সেনাপতি গোলাম মাসুমকেও ৷ সেই ইতিহাস বারাসত বিদ্রোহ নামে পরিচিত ৷ যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যসূচি থেকেও মুছতে চলেছে ৷ শুধু পাঠ্যসূচি নয়, তিতুমীরের স্মৃতি বিজড়িত নারকেলবেড়িয়া গ্রাম এবং তাঁর জন্মস্থান হায়দারপুর-চাঁদপুরের অবস্থাও বেহাল ৷ তিতুমীরের বর্তমান বংশধররাও বিশেষ কোনও সম্মান এবং সুবিধা পান না বলেও অভিযোগ ৷ কারণ হিসেবে স্থানীয়দের অভিযোগ উদাসীন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন ৷ অথচ, প্রত্যেকবার ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ৷ স্বাধীনতা দিবসে স্মরণও করা হয় তাঁকে ৷
কিন্তু, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা-নড়বড়ে স্কুলের অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে এগিয়ে চলেছে ৷ 2004 সালে শহিদ তিতুমীর স্মৃতি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল ৷ কিন্তু, মাত্র 20 বছরের মধ্যে এই স্কুলের অবস্থা এক কথায় ভয়ংকর ৷ পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে 75 জনে দাঁড়িয়েছে ৷ শিক্ষক হাতেগোনা চারজন ৷ স্কুল ভবনের পলেস্তরা খসে পড়েছে ৷ স্কুলের চারপাশ আগাছায় ঢাকা ৷ শৌচালয়, মিড-ডে মিলের রান্নাঘর স্যাঁতস্যাঁতে ৷ ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক কীটপতঙ্গ ৷ এই বর্ষায় সাপের উপদ্রব যে হয় না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি শিক্ষকরা ৷ এই স্কুলের সামনে দিয়ে নারকেলবেরিয়া কারবালা মোড় থেকে আটলিয়া যাওয়ার রাস্তার অবস্থা আরও ভয়ংকর ৷ যদিও, স্কুলের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, প্রায় 12 লক্ষ টাকার মতো নতুন করে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে স্কুল ভবন সাজানোর জন্য ৷
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা আন্দোলনে কতজন বাঙালি জেল খেটেছিলেন, কতজনের হয়েছিল ফাঁসি, জানেন কি ?
বছর দুই আগে রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী-সহ বর্তমান শাসক শিবিরের একাধিক নেতা নারিকেলবেড়িয়া গ্রামে এসেছিলেন ৷ তিতুমীরের নামে গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র খেলার মাঠ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ যার বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ ৷ স্থানীয় ব্লক প্রশাসন বা পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ স্থানীয় রামচন্দ্রপুর উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নবনির্বাচিত প্রধান শফিকুল মণ্ডলও এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ ৷ ইটিভি ভারতের তরফে সোমবার একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি ৷ সেই শফিকুল মণ্ডল নিজে মঙ্গলবার বাঁশের কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন ৷ স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি শেষে তাঁকে তিতুমীরের ইতিহাস সংরক্ষণ নিয়ে পঞ্চায়েতের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ৷ কিন্তু, আবারও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি ৷
আরও পড়ুন: পার্লামেন্ট হাউসে ভগৎ সিং-বটুকেশ্বর দত্তদের বোমা বর্ষণ ও খণ্ডঘোষের সেই পাতাল ঘর
1782 সালে উত্তর 24 পরগনার হায়দারপুর চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মীর নিশার আলী ওরফে তিতুমীর ৷ সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং আবিদা রোকেয়া খাতুনের পুত্র তিতুমীর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর মাদ্রাসা শিক্ষা লাভ করেছিলেন ৷ পরে মক্কায় পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে সৈয়দ আহমেদ শহিদের শীর্ষত্ব গ্রহণ করেন ৷ 1827 সালে মক্কা থেকে ফিরে সমাজ সংস্কারের কাজে অংশগ্রহণ করেন তিতুমীর ৷