কলকাতা, 31 মে : আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের অপশন দেওয়া শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই । এবার কলকাতার বেথুন কলেজে ভরতির অনলাইন আবেদনপত্রে ধর্ম পূরণের জায়গায় অন্য সব ধর্মের অপশনের সঙ্গে যুক্ত করা হল 'হিউম্যানিটি' অর্থাৎ 'মানবতা' অপশনটি । আবেদনকারী পড়ুয়ারা চাইলেই এই অপশনটি সিলেক্ট করতে পারবে । বেথুন কলেজের ভরতির আবেদনপত্রে ধর্মের জায়গায় হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, অন্যান্যের পাশাপাশি যুক্ত হল মানবতাও।
অভিনব এই পদক্ষেপের পিছনে কী কারণ জানতে চাওয়া হলে অধ্যক্ষ মমতা রায় বলেন, "বিষয়টির সঙ্গে অ্যাডমিশনের কোনও যোগ নেই । আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য, একটি নির্ভুল মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা । এই বিষয়টি নিয়ে সেরকম কিছু বলার নেই । অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা যারা আবেদন করে, তারা বলে আমি কোনও ধর্মে বিশ্বাস করি না । বিশ্বাস করি না কথাটা না লিখে, আমি মানবতায় বিশ্বাস করি বলতে সাহায্য করেছি মাত্র ।" আবেদনপত্রে ধর্ম পূরণের জায়গায় মানবতার অপশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্মিলিতভাবে অ্যাডমিশন কমিটিতেই নেওয়া হয়েছিল বলে জানান মমতা রায় । তিনি বলেন, "অ্যাডমিশন কমিটিতে যখন সব জিনিস নিয়ে আলোচনা হয়, তখনই সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয় । নন-বিলিভার হওয়ার থেকে কিছু একটা বিশ্বাস জীবনে থাকা উচিত । আরও একটা কথা, সব ধর্মই শেষ অবধি মানবতায় বিশ্বাসী ।"
প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়, ধর্ম পূরণের জায়গাটি ফাঁকা রেখে দেয় আবেদনকারীরা । তাদের ভাবনাচিন্তা এটাই যে সব ধর্মই এক । সেই ভাবনাচিন্তার বহিঃপ্রকাশ করারই কি একটা জায়গা করে দিল কলেজ কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ? কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, "সব ধর্মই মানুষে বিশ্বাস করে । সেই দিক থেকে দেখলে প্রতিটি ধর্মেরই একটি কমন মিশন আছে । যদিও আবেদনপত্রে ধর্মের জায়গাটি পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয় । আর তাই অনেকেই ওই কলাম আনটাচ রেখে চলে যায় । আর যারা আনটাচ রেখে চলে যায় তাদের ভাবনাকে সম্মান দিতে এবং তাদের একটি জায়গা দিতেই আমাদের এই পদক্ষেপ ।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের এই পদক্ষেপ আবেদনকারীদের যে কিছুতে একটা বিশ্বাস আছে, সেই ক্লু দেওয়া । পছন্দ হলে ওরা লিখবে । ওদের এটাই বলা যে, ওই ফিল্ডটা আনটাচ রেখে চলে যেও না । একটা কিছু নির্বাচন করো ।" অধ্যক্ষ আরও বক্তব্য, "ছোটোবেলায় অনেকেরই মনে হয়, আমি কোনও ধর্মে বিশ্বাস করি না । কী আছে? আমরা সবাই তো সমান । এই বয়সটা এরকম হয় ।"
তবে, এক্ষেত্রে উঠছে একটাই প্রশ্ন । নিজের ধর্মের পরিবর্তে মানবতা অপশন পছন্দ করলে পরবর্তীকালে পড়ুয়াদের কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না তো? এবিষয়ে মমতা রায় বলেন, "যখন স্কলারশিপ আসে তখন আবার নতুন করে আবেদন করতে হয় । তার জন্য আলাদা ফর্ম থাকে । আর সব ধর্মেই হিউম্যানিটি আগে । তার অধীনে বাকি ধর্মগুলো সাবজুডিস । তখন সেগুলো মেনশেন করেই স্কলারশিপের আবেদন করতে হবে । কাজেই কোনও অসুবিধা হবে না ।"