কলকাতা, 2 মে: একুশের বর্ষপূর্তিতে তৃণমূলের বড় কাঁটা নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ (TMC's political status)। একের পর এক নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস জনসমর্থন পাচ্ছে (TMC wins elections)। প্রধান বিরোধী দল বিজেপির জন্য এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে সে ভাবে জনসমর্থন তৈরি হয়নি । একুশের বিধানসভা নির্বাচন, তারপর গোটা রাজ্যে পৌরভোট এবং হালফিলের উপনির্বাচনে জনতার রায়কে যদি মানদণ্ড হিসাবে ধরা হয়, তাহলে এ রাজ্যের মানুষ বারবার গেরুয়া শিবিরকে প্রত্যাখ্যানই করছে ।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার বলেছেন, "জনসমর্থন জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিচ্ছে । মাথা নিচু করে আমাদের মানুষের কাজ করতে হবে ।" কিন্তু বাস্তব তো এটাই, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা বললেও দলের নিচতলা থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক অনেকেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন বারবার । আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি বিপুল জনসমর্থনের পরেও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে ? আর সে কারণেই কি দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত ?
সরকারের বিরোধিতা করার জন্য এই প্রশ্ন নয় । আসলে বিগত দু-তিন মাস একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে দলের শীর্ষ স্তরের নেতা থেকে শুরু করে বিধায়ক দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন বারবার । দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কয়লা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে । দলের মহাসচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার । আবার দলের মন্ত্রী থেকে সাংসদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে নারদ ঘুষ কাণ্ডে । আবার বিধায়কদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার । কারও বিরুদ্ধে আবার অভিযোগ সিন্ডিকেট যোগের। প্রশ্নটা এখানেই, বিপুল জনসমর্থনের পরেও কেন কৌলুষমুক্ত নয় তৃণমূল ! কেন কখনও আদালতে, কখনও জনতার দরবারে তৃণমূল নেতাদের নিয়ে এত অভিযোগ !
আরও পড়ুন: Prashant Kishor New Party: এবার নিজের দল গড়বেন পিকে ! নয়া ইনিংস শুরু বিহার থেকেই ?
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য অভিযোগের বেশিরভাগটাই সরকারকে বদনাম করার একটা প্রয়াস হিসাবে তুলে ধরছে । একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধেও। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে গোটা দেশে যেখানে বিরোধীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের অভিযোগ উঠবেই বলে দাবি তাদের । তবে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এটাও বলা হচ্ছে, এত বড় দল এত মানুষ তার সঙ্গে জড়িত, তাতে কেউ কোথাও যে অন্যায় করছে না এমনটা নয় । তবে রাজ্যের শাসক দল বহু ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ হওয়ার কারণে এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে । এর থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, রাজ্য সরকার অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করে না ।
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তাপস রায় বলেন, অভিযোগ উঠলেই তিনি দোষী নন ৷ তবে এই সরকারে অন্যায় করে শাসক দল করার জন্য পার পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ, আইন আইনের পথে চলবে ।
তবে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমনটাই দেশের মানুষের প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে । সরাসরি দুর্নীতির বিষয়টি ভোটদানের সময় মানুষের উপর সে ভাবে প্রভাব ফেলছে না । আর সে কারণেই উন্নাওয়ে বা লাখিমপুর খেরিতে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে । এ রাজ্যের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বহু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক থেকে বিধানসভা ভোটে ব্যক্তি কারিশমা যাবতীয় দুর্নীতির অভিযোগকে ঢেকে দিচ্ছে । এ রাজ্যের শাসক দল সব নির্বাচনেই বলছে ভোটে প্রার্থী একজনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে ভোট হচ্ছে, সেখানে দুর্নীতির ইস্যু পিছনে চলে যাচ্ছে ।