কলকাতা, 24 ডিসেম্বর: দেশের নানা প্রান্ত থেকে যখন ধর্মীয় হানাহানি, হিংসার খবর পাওয়া যাচ্ছে, তখনই বড়দিনের (Christmas 2022) প্রাক্কালে সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এগিয়ে এলেন কিছু মানুষ ৷ কলকাতা নাকি 'আনন্দের শহর' ৷ উৎসবের মরশুমে সেই বিশেষণেরই প্রকৃত অর্থ বোঝালেন শহরের এই ক'জন বাসিন্দা ৷ এক মুসলিম বন্ধুর অনুরোধে কলকাতার নামজাদা দু'টি গির্জায় আলপনা আঁকলেন (Alpona at Church) এক হিন্দু মহিলা ৷ আনন্দের এমন রসদ সত্যিই ভীষণ বিরল !
আলপনা হিন্দু বাঙালির এক প্রাচীন পরম্পরা ৷ সাধারণত যেকোনও শুভ আচার-অনুষ্ঠানে বাড়িতে আলপনা আঁকা হয় ৷ তা সে দেব-দেবীর আরাধনা হোক, কিংবা নবান্ন ৷ হতে পারে বিয়ে, উপনয়ন অতবা যেকোনও অন্য শুভ অনুষ্ঠান ৷ আলপনা আঁকাকে বাঙালি হিন্দুরা বরাবরই সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করেন ৷ তবে, রঙ্গোলির মতো নানা রঙের ব্যবহার এর প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নয় ৷ আজকালকার দিনে আলপনা আঁকতে রঙের ব্যবহার হলেও আগেকার দিনে তা ছিল শ্বেতশুভ্র ৷ কখনও চালবাটা আবার কখনও বা খড়িমাটি গুলে আঙুলের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা হত হরেক নকশা ৷ আঁকা হত ধনদেবী লক্ষ্মীর চরণযুগল ৷ তবে, ইসলাম ধর্মবলম্বীদের কোনও অনুষ্ঠানে, কিংবা বড়দিনে এমন রেওয়াজ নেই ৷ এবার সেই বেড়া ভাঙলেন কলকাতার কয়েকজন বাসিন্দা ৷
আরও পড়ুন: ক্রিসমাসের দিন যাত্রীদের সুরক্ষায় বাড়ানো হচ্ছে মেট্রোয় নিরাপত্তা
মুসলিম বন্ধু মুদ্দার পাথেরিয়ার অনুরোধে কলকাতার নামজাদা দু'টি চার্চে আলপনা আঁকলেন রত্নাবলী ঘোষ ৷ তিনি হিন্দু ৷ উদ্যোক্তরা মনে করছেন, "আলপনা সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে ৷" তাঁরা অন্তত এমনটাই বিশ্বাস করেন ৷ আর সেই কারণেই কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় 150 বছরের পুরনো স্যাক্রেড হার্ট চার্চে (Sacred Heart Church) আলপনা আঁকেন রত্নাবলী ৷ এর জন্য মুদ্দার পাথেরিয়া নিজে প্যারিস কাউন্সিলকে অনুরোধ করেছিলেন ৷ সেই আবেদন মঞ্জুর করে কর্তৃপক্ষ ৷
মুদ্দার পাথেরিয়া ইটিভি ভারতকে বলেন, "হিন্দু দেবদেবীর আগমনে আলপনা আঁকা হয় ৷ যেকোনও কাজের শুভারম্ভে আলপনা আঁকা হয় ৷ তাহলে বড়দিনে আলপনা আঁকা যাবে না কেন ? সেই প্রস্তাবই দিয়েছিলাম চার্চ কর্তৃপক্ষকে ৷ তারা আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছে ৷ এতে বড়দিনের আনন্দ আরও বাড়বে বলেই আমাদের আশা ৷"
শিল্পী রত্নাবলী ঘোষ ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমি সারা জীবন আলপনা আঁকছি ৷ কিন্তু, এই নতুন উদ্যোগের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন মুদ্দার ৷ এই আলপনার কোনও জাত-পাত নেই ৷ আলপনার কোনও ধর্মও হয় না ৷" এর আগে উত্তর কলকাতার একাধিক শতাব্দীপ্রাচীন বাড়ির বারান্দায়, বাইরের অংশে আলপনা এঁকেছেন রত্নাবলী ৷ সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা ৷ থাকেন দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্ক সংলগ্ন একটি আবাসনে ৷ বন্ধু মুদ্দারের আমন্ত্রণ ও প্রচেষ্টা তাঁকে মুগ্ধ করেছে ৷