কলকাতা, 31 জানুয়ারি: আলিপুর চিড়িয়াখানায় ইউনিয়ন (Alipure Zoo union rome case) সংক্রান্ত অশান্তির ঘটনায় চিড়িয়াখানা অধিকর্তার রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট । পাশাপাশি ওয়াটগঞ্জ ও আলিপুর পুলিশকে ওইদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ আদালতকে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মানথা (Calcutta High Court seeks all details and CCTV footages) । দু‘দিন পরেই এই রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে।
অভিযোগ, গত 24 জানুয়ারি ইউনিয়ন রুম দখলকে কেন্দ্র করে আলিপুর চিড়িয়াখানায় বিজেপি ও তৃণমূলের ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে অশান্তির ঘটনা ঘটে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল ইউনিয়নের সদস্যরা জমায়েত করে চিড়িয়াখানা মেন গেটের কাছে । এমনকি পুলিশের সামনেই চিড়িয়াখানার মেন গেটের তালা ভেঙে পাঁচিল টপকে প্রায় 200 লোক চিড়িয়াখানার ভিতরে ঢুকে পড়েছিল । এই অভিযোগে বিজেপি আশ্রিত সংগঠনের সভাপতি রাকেশ সিং কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন ।
সোমবার মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে মামলাকারীর তরফে আইনজীবী বিল্লোদল ভট্টাচার্য বলেন, "আলিপুর চিড়িয়াখানায় মাত্র দু‘টি ইউনিয়ন আছে ৷ একটি হচ্ছে আলিপুর কলকাতা জুলজিক্যাল গার্ডেন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন । আরেকটি তৃণমূল আশ্রিত ইউনিয়ন । আলিপুর চিড়িয়াখানায় মোট 79 জন কর্মচারী রয়েছেন ৷ তার মধ্যে 74 জন আলিপুর কলকাতা জুলজিক্যাল গার্ডেন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্য । বাকি পাঁচজন তৃণমূল আশ্রিত সংগঠনের সদস্য । কিন্তু গত 24 জানুয়ারি সকালে প্রায় এক-দেড় হাজার লোক নিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যরা আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনে জমায়েত করেন ৷ তারপরে তাঁদের মধ্যে থেকে প্রায় 200 জন লোক চিড়িয়াখানা আক্রমণ করেন ৷ চিড়িয়াখানার মূল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকা হয় ৷ পাশাপাশি কেউ কেউ পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢোকেন । একটি নির্বাচিত সংগঠন সেখানে থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বহিরাগতরা পুলিশের চোখের সামনে চিড়িয়াখানায় এই ঘটনা ঘটিয়েছে । করোনা পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘন করে পুলিশের সামনেই রাজনৈতিক দল তাদের ক্ষমতার আস্ফালন দেখাচ্ছে ।"
আরও পড়ুন: TMC-BJP Clash at Zoo : চিড়িয়াখানায় কর্মী ইউনিয়ন দখল ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে গন্ডগোল
পাশাপাশি এক কর্মচারীর তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন," আইনকে সম্পূর্ণ বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বহিরাগতরা ওইদিন অনুপ্রবেশ করেছে । মামলাকারীর রাকেশ সিংয়ের সংগঠনে 74 জন থাকলেও তাঁদের ভয় দেখিয়ে অন্য সংগঠনে নাম লেখানোর চেষ্টা হয়েছে ।" অন্যদিকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়, ওইদিন কিছু লোক ডেপুটেশন দিতে এসেছিল চিড়িয়াখানায় । রাজ্যের এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, "যিনি মামলা করেছেন তিনি চিড়িয়াখানার কে ? ওই ব্যক্তি কেউ নন ।’’ তিনি মামলাকে বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার আবেদন করেন । পাশাপাশি রাজ্যের পক্ষ থেকে আরও এক আইনজীবী অনির্বাণ রায় বলেন ,"এটা সম্পূর্ণই ইউনিয়নের ঝামেলা ।" বিচারপতি সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর নির্দেশ দেন, চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আজ ও কাল কর্মচারী এবং অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে আদালতকে রিপোর্ট দেবেন । পাশাপাশি আলিপুর থানাকে ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ আদালতকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এলাকায় যাতে শান্তি বজায় থাকে পুলিশকে সেদিকে লক্ষ্য রাখার নির্দেশে দেওয়া হয়েছে । মামলাকারী রাকেশ সিং বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে চিড়িয়াখানার কর্মচারীদের নিজের সংগঠনে নাম লেখানোর জন্য জোর খাটাচ্ছেন, এর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তাঁর মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন সংগঠনের কর্মচারীরা ।"