কলকাতা ১৭ জুলাই : বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়েরএজলাসে তখন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকে অনাস্থা প্রস্তাবের যে চিঠি দেওয়া হয়েছে সেটা বৈধ না অবৈধ সেই নিয়ে জোর সওয়াল জবাব চলছে । সব্যসাচী দত্তর আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, "মেয়রকে অপসারণ সংক্রান্ত ব্যাপারে যে বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের মিটিং আহ্বান করা হয়েছে সেটা একমাত্র চেয়াপার্সনের নির্দেশে কমিশনার চিঠি দিয়ে কাউন্সিলরদের ওয়াকিবহাল করাতে পারে । কিন্ত এখানে কমিশনার সেই কাজ করেছেন । মিটিংটি জোর করে কমিশনারকে দিয়ে করানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে । তাই নতুন করে চিঠি দিয়ে মিটিং ডাকা হোক ।"
এদিকে বিধাননগর পৌরনিগমের চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর আইনজীবী ও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় পালটা বলেন, " আইন অনুযায়ী কর্পোরেশনের প্রথম মিটিং বাদে সব মিটিংই ডাকতে পারেন কমিশনার । " বার বার দুই পক্ষ একই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছিলেন । তখন বিচারপতি বলেন, "আমি আর কোনও বক্তব্য শুনব না । এবার রায় দিতে হবে ।" তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আপনি এই নোটিশে কোনও স্থগিতাদেশ দেবেন না । বরং ডেটটা পিছিয়ে দিয়ে সেই দিন মিটিংয়ের তারিখ ঠিক করে দিন ।"
তখন বিচারপতি এজলাসে উপস্থিত আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের উদ্দেশে বলেন, "রোজই দেখছি আজ একজন CPI(M)-এ,কাল তৃণমূলে তো পরশু BJP-তে যাচ্ছে। কী হচ্ছে এটা ! আপনাদেরও হয়ত কাল অন্য দলে দেখব । জনপ্রতিনিধিদের কাজ কী ? একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে জনগণের টাকা খাচ্ছে । আজ একটা দল কাল আর একটা দল । বনগাঁর কেসটাতে তো দেখলাম । আর পুলিশ শাসকদলকে সাহায্য করছে । এই তো জনপ্রতিনিধিদের হাল, এরা আবার দেশ চালাবে !"
একথা শোনার পর রেগে যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "বিচারপতিদের নিয়োগও কি স্বচ্ছ ? কীভাবে বিচারপতিরা মনোনীত হন সবাই জানে । বার অ্যাসোসিয়েশনের ভোটে একটি দল 20 লাখ টাকা খরচ করেছে । সে ব্যাপারে কিছু বলুন ! কোনও একটা দল কে কেন বলছেন ? আপনি যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন তখন এটাও বলুন, আলোচনা করুন । বারে এটা নিয়েও আলোচনা হওয়া উচিত ।"
এরপর বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য চুপ থাকেন । তারপর আবার বলেন, "আমি শুধুমাত্র সততার জোরে এই পদে রয়েছি । আমার পুরো পরিবার সৎ । আমার বাবা আইনজীবী ছিলেন । অত্যন্ত সৎ মানুষ হিসেবেই সবাই তাঁকে জানত । আমার নামে কারও কিছু বলার সাহস নেই । আমি কাউকে পরোয়া করি না । সাধারণ মানুষদের জন্যই আমি এখানে বসে আছি । তারা যাতে বিচার থেকে না বঞ্চিত হন সেটা দেখাই আমার কর্তব্য । অনেকে সামান্য আইনজীবী হয়ে টাকার কুমির হয়ে যাচ্ছে দুদিনে ! কীভাবে হচ্ছে আমরা জানি না?" কোর্ট রুম তখন পুরো থমথমে । এরপর বিচারপতি এজলাস ছেড়ে বেড়িয়ে যান ।
পরে দ্বিতীয় দফায় যখন তিনি এজলাসে বসেন তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে ক্ষমা চান । তিনি বলেন, " যা বলেছি তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী । আমি সামান্য একজন আইনজীবী । কিছু মনে করবেন না । আমি সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী। "