কলকাতা, 21 জানুয়ারি : বিপুল হেরোইন-সহ ধৃত দু'জনকে জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে লালবাজার । সেই তথ্যের ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে, এই মাদক চক্রের রয়েছে আন্তর্জাতিক যোগ । তবে এখনও পর্যন্ত ধৃতদের কাছ থেকে সব কথা বের করা সম্ভব হয়নি । ব্যাঙ্কশাল আদালত আজ তাদের 14 দিনের পুলিশ হেপাজত মঞ্জুর করেছে । গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই দু'জনের মাধ্যমে পর্দা ফাঁস হবে বড়সড় আন্তর্জাতিক মাদক কারবার চক্রের ।
আজ মাদকের সবথেকে বড় কন্সাইনমেন্ট ব্যর্থ করে দিয়েছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স । মাঝরাতে উদ্ধার হল 105 কোটি টাকার হেরোইন । বছর চল্লিশের জুবের উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা । তার বাড়ি বেহেরাইচে । এমনিতে সে হকারি করে । পাশাপাশি মাদকের ক্যারিয়ার হিসেবেও কাজ করে । আর ফৈয়াজউদ্দিন মনিপুরের কাকচিংয়ের বাসিন্দা । সে আদতে কৃষিকাজ করে । তবে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হেরোইন, ইয়াবা থেকে শুরু করে অস্ত্রপাচার, সব কিছুর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সে । তবে গোয়েন্দারা একপ্রকার নিশ্চিত এ বিপুল পরিমাণ মাদক কলকাতায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আনেনি তারা । গোয়েন্দাদের ধারণা, কলকাতা থেকে ওই মাদক চলে যেত সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ । তবে পুরোটা নয় । 5 কেজির কিছু বেশি উদ্ধার হওয়া পিওর হিরোইন হত স্মাগলিং । আর ফৈয়াজউদ্দিনের আনা কুড়ি কেজি ক্রুড হেরোইন চলে যেত উত্তরপ্রদেশে । সেখানে আরও পিউরিফাই হওয়ার পর তা পাচার করা হত ।
প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, ক্রুড হেরোইন মূলত আসছে মায়ানমার থেকে । সীমান্ত পার হয়ে ঢুকে যাচ্ছে মণিপুরে । তারপর তা কলকাতা এনে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে । পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে নেপাল যোগের বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ । আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে থেকে পিওর হেরোইন উত্তরপ্রদেশে ঢুকছে কি না তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে । আর সেই কারণে জুবেরকে আরও নিবিড়ভাবে জেরা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে গোয়েন্দারা । তার কাছ থেকে মূলত দু'টি বিষয় নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিশ । প্রথমত, উত্তরপ্রদেশের কোথায় তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের হেরোইন । আর যদি নেপাল থেকে ওই হেরোইন ঢুকছে তবে তার রুটটা ঠিক কী । এর পেছনে আদৌ পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যোগ আছে কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন । ধৃতদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক আছে সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।
গোয়েন্দা বিভাগের এক বলেন, “যে বিপুল পরিমাণে হেরোইন আনা হচ্ছিল তা স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের প্রশ্নই নেই । কারণ, কলকাতায় এত বেশি হেরোইনের চাহিদা নেই । সেই চাহিদা অনেক বেশি বাংলাদেশে । ফলে একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত ওই হেরোইন তুলে দেওয়া হতো পশ্চিমবঙ্গের কোনও দালালে হাতে । অথবা ওই পিওর হিরোইন নিয়ে চলে যেত ফৈয়াজউদ্দিন । তারপর তা উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ।"
এদিকে আদালতে সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “125 কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার হয়েছে । এই চক্রের জাল আরও বড় । এরপরেও বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হতে পারে ।" তমালবাবু 4 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানান । সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত ।