কলকাতা, 3 জুলাই : SSKM হাসপাতালে এবার প্রতিস্থাপন হচ্ছে হৃদযন্ত্র । আজ ভোরে এই প্রতিস্থাপন শুরু হয়ে যাবে বলে আশায় রয়েছেন কর্তৃপক্ষ । তবে, ব্রেন ডেথ ঘোষিত এক রোগীর শুধুমাত্র হৃদযন্ত্র নয় । তাঁর লিভার এবং একটি কিডনিও SSKM হাসপাতালে আজ সকালে দুই রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। তাঁর অন্য একটি কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে হাওড়ার বেসরকারি একটি হাসপাতালের এক রোগীর শরীরে।
ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর নাম অঞ্জনা ভৌমিক (49) । তাঁর বাড়ি হাওড়ার উদয়নারায়নপুরের রাজাপুর গ্রামে । স্বামী সন্তোষ ভৌমিক একজন কোয়াক ডাক্তার । এই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিষয়ে SSKM হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ তথা মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল (MSVP) রঘুনাথ মিশ্র বলেন, "গতরাত থেকেই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে । হার্ট, লিভার এবং একটি কিডনি আমাদের এখানে আসার কথা । এই প্রথম আমাদের এখানে হার্ট প্রতিস্থাপন হচ্ছে । আশা করছি, ভোরের দিকে প্রতিস্থাপন শুরু হয়ে যাবে।"
ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই রোগীর দাদা শ্যামল মণ্ডল বলেন, "বছর দুই ধরে উচ্চ রক্তচাপের জন্য ওষুধ খেত বোন। রবিবার বিকেলে আচমকা ও বমি করে। বমির সঙ্গে রক্ত বেরিয়েছিল। আমার ভগ্নিপতি গ্রামীণ ডাক্তার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গাড়ি ভাড়া করে স্থানীয় নার্সিংহোমে আমার বোনকে নিয়ে যান।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ওই নার্সিংহোমে ICU ছিল না। ওখানে বিষয়টাকে নরমাল ভাবে নেওয়া হয়। বলা হয়, ঠিক হয়ে যাবে। স্যালাইন দেওয়া হয়। কী একটি নতুন পদ্ধতিতে ওরা পরীক্ষা করে বলেছিল স্ট্রোক হয়নি।" তবে, রবিবার মাঝ রাতের পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে অঞ্জনার। শ্যামল মণ্ডল বলেন, "পরের দিন সকাল ১০টার পরে ডাক্তার দেখে বলেন, ওই নার্সিংহোমে আর কিছু করা যাবে না।"
এরপর সোমবার বিকাল ৩টা নাগাদ ওই নার্সিংহোম থেকে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অঞ্জনাকে। শ্যামল মণ্ডল বলেন, "সেখানে ডাক্তাররা বলেন শারীরিক অবস্থা খারাপ রয়েছে। বোনকে ভর্তি করানো হল। গতকাল সকালে ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করি । তাঁরা জানান, ব্রেনের 90-95 শতাংশ কাজ করছে না।"
ডাক্তাররা তখন ব্রেন ডেথের বিষয়টি বাড়ির লোকদের জানান। ব্রেন ডেথ ঘোষিত রোগীর অঙ্গ দান করতে চান কি না, তাও বাড়ির লোকদের কাছে তাঁরা জানতে চান। শ্যামল মণ্ডলের কথায়, "খবরের কাগজে পড়েছি এভাবে অঙ্গ দান করা হচ্ছে। অনেক মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। আমি, আমার ভগ্নিপতি আর ওদের বড় মেয়ে আমরা তিনজনে মিলে আমার বোনের অঙ্গদানের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
তিনি বলেন, "আমার ভগ্নিপতি বললেন, আমার বোনকে তো আর বাঁচানো যাবে না। কিন্তু ওর কোনও অঙ্গ নিয়ে কেউ যদি বেঁচে থাকেন, সেটা খুবই ভালো হবে।" তবে কাদের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হবে, তা যদি জানতে পারা যায় তাহলে তাঁদের অনেক ভালো লাগবে বলেও জানিয়েছেন শ্যামল মণ্ডল।
তিনি বলেন, "আমার বোনের অঙ্গ দানের কথা ডাক্তারদের বললাম। তাঁদের এই কথাও বললাম, আমার বোনের অঙ্গ যাঁদের শরীরে প্রতিস্থাপন হবে, তাঁদের যেন এর জন্য কোনও টাকা দিতে না হয়। হার্ট, লিভার, কিডনি, চোখ, স্কিন সব দান করা যাবে। আমরা বলেছি, যে সব অঙ্গ নেওয়া যায়, তা নেওয়া হোক ।"
গতকাল সন্ধ্যার পরে অঞ্জনা ভৌমিকের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। অঙ্গ গ্রহীতাদের খোঁজও চলছিল। শেষপর্যন্ত, SSKM হাসপাতালে অঞ্জনা ভৌমিকের হৃদযন্ত্র, লিভার এবং একটি কিডনি আজ ভোরে গ্রিন করিডরের মাধ্যমে হাওড়ার বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।