কলকাতা, 16 মে: 32 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার উপর আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ দিল না কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চে ৷ বুধবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে ৷ 2016 সালে নিয়োগ পাওয়া 36 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ গত সপ্তাহে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার অবশ্য সেই সংখ্যা সংশোধন করে ওই শিক্ষকের সংখ্যা 32 হাজার হবে বলে জানান তিনি ৷
এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে ডিভিশন বেঞ্চে বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বেশ কিছু বক্তব্য সিঙ্গল বেঞ্চে রেখেছিল । কিন্তু তাদের বক্তব্যের সমস্তটাই বাতিল করা হয়েছে । কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি পর্ষদের মতকে ৷ প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের কথা জানিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৷ যদিও পর্ষদের দাবি, নিয়োগ পাওয়া সব শিক্ষকেরই প্রশিক্ষণ হয়েছিল।
বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এদিন বলেন,"এই মামলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে । অ্যাপটিটিউড টেস্ট, প্রশিক্ষণ না থাকা এই বিষয়ে বোর্ডের বক্তব্য কী? সিঙ্গল বেঞ্চ সবটাই ফেলে দেয়নি । নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ফের নতুন করে ইন্টারভিউ নিয়ে তারপর নিয়োগ করতে বলেছে । এই ব্যাপারে বোর্ডের কি বক্তব্য ?"
জবাবে, আইনজীবী লক্ষী গুপ্তা বোর্ডের তরফে জানান, অ্যাপটিটিউড টেস্ট ও ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই । সাত বছর আগে নেওয়া হয়েছিল ইন্টারভিউ । ইন্টারভিউতে 5 এবং অ্যাপটিটিউড টেস্টে 5 নম্বর দেওয়া হয় । যাঁরা নিয়েছিলেন তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, হ্যাঁ তারা আলাদা আলাদা নম্বর দিয়েছেন । আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন তাঁরা আলাদা আলাদা নম্বর দেননি, একেবারে নম্বর দিয়েছেন । কিন্তু এর মধ্যে বেআইনি কিছু নেই !
আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চাকিরহারা প্রার্থীদের তরফে জানান, 2014 টেট পরীক্ষার আগে বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার বলা ছিল যাঁদের প্রশিক্ষণ থাকবে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবে । কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকলে চাকরি পাওয়ার দু'বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে । কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতেও 2019 সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণহীনদের বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয় । তিনি আরও জানতে চান, 7 বছর আগের একটা বিষয় নিয়ে এখন কেন নির্দেশ? বিচারপতি বিচার করছেন নাকি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য কী করছেন না করছেন সেই নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন, এগুলো কী বিচার্য বিষয় ওনার !
আরও পড়ুন: প্রাথমিকে চাকরি বাতিলের নির্দেশে সংশোধন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, কতজনের চাকরি গেল ?
এরপর বিচারপতি তালুকদার বলেন,"কিছু কঠিন জিনিস এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সামনে চলে আসছে । প্রশিক্ষণ থাকা না থাকাটা কোনও বিষয় নয়? অ্যাপটিটিউড টেস্টটাই মূল বিষয়?" চাকরিহারা প্রার্থীদের পক্ষে আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন,"হ্যাঁ । কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এখানে প্রশিক্ষণ না থাকার জন্য চাকরি যাওয়ার কথাই নয় । পাশাপাশি যাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হল তাঁদের বক্তব্য না শুনেই কী করে সেই নির্দেশ দেন বিচারপতি?"
ডিভিশন বেঞ্চ এদিন জানতে চায়, ইন্টারভিউয়ের পরে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল কী? জবাবে বোর্ডের আইনজীবী জানান, হ্যাঁ করা হয়েছিল । গোটা রাজ্যের তালিকা একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছিল । গত ছ-সাত বছর ধরে চাকরি করার পর এখন সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিচ্ছে ফের ইন্টারভিউ দিয়ে এসো । এটা ঠিক নয় ৷ বুধবার দুপুর 3টেয় ফের এই মামলার শুনানি আছে ৷