ETV Bharat / state

বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়ছে, কঠোর হবে স্বাস্থ্য কমিশন

আগেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে জরিমানা করেছে কমিশন । অথচ তার পরও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের হচ্ছে কমিশনে। এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে , আগামী দিনে কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফের একই ধরনের অভিযোগ উঠলে জরিমানা হিসাবে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে । সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স যাতে বাতিল করে দেওয়া হয় তার জন্য পদক্ষেপ করবে কমিশন।

Kolkata
বেসরকারি হাসপাতাল
author img

By

Published : Sep 28, 2020, 7:32 AM IST

কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর : চিকিৎসার খরচ হিসেবে অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । অতিরিক্ত বিলের জন্য কোথাও যেমন অতিরিক্ত বেড ভাড়া নেওয়া হচ্ছে , তেমনই কোথাও আবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । অনেক ক্ষেত্রে নাকি সরকারি সার্কুলার এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এর অ্যাডভাইজ়ারি মানা হচ্ছে না। এর জেরে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানাও করছে WBCERC অর্থাৎ রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন । এর পরও বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ উঠছে ৷ তার জেরে আরও কঠোর মনোভাব নিচ্ছে কমিশন ।


বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে দায়ের হচ্ছে একের পর এক অভিযোগ । এই সব অভিযোগের জেরে মামলাও চলছে । এমনই কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও নিচ্ছে কমিশন । তারা জানিয়েছে , কোরোনা আক্রান্ত সরকারি এক আধিকারিক ভরতি রয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে । এদিকে 17 বছরের কোরোনা আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁর স্ত্রী । বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘোরার পর অবশেষে ওই কিশোরকে ভরতি করানো সম্ভব হয় । তবে, তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি । কমিশন জানিয়েছে, এই কিশোরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুর্গাপুরের নামকরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে । ওই হাসপাতালের বক্তব্য , ওই সময় হাসপাতালের সব কর্মী কোরোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৷ ফলে হাসপাতালে ওই কিশোরকে ভরতি নেওয়া সম্ভব হয়নি । কমিশন জানিয়েছে, হাসপাতালের উচিত ছিল ওই কিশোরকে অন্য কোনও হাসপাতালে ভরতির ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়া ৷ এই বিষয়ে ওই হাসপাতালের কাছে হলফনামা চেয়েছে কমিশন । পাশাপাশি হাসপাতালকে 25 হাজার টাকা কমিশনে জমা রাখতে বলা হয়েছে।

এই মামলায় কমিশন জানিয়েছে , ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কিশোরকে আরও দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে কিশোরকে অক্সিজেন দেওয়া হয় ৷ এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এর জন্য এই দু’টি হাসপাতালকে কমিশন ছাড় দিয়েছে । এদিকে, অ্যাম্বুলেন্সে কিশোরকে যে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় সেখানে ছয় দিনের মাথায় তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয় । হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট তখন ছুটিতে ছিলেন । তখন ওই কিশোরকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷ এই হাসপাতালে কিশোরের মৃত্যু হয় । কমিশন জানিয়েছে, ছয় দিন চিকিৎসা হয়েছে এবং তার মৃত্যু হয়েছে যে হাসপাতালেসেখান থেকে মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে ৷

অন্য একটি মামলায় কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দা 64 বছরের এক ব্যক্তিকে প্রথমে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল। কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীকে কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হয় । এখানে এই রোগীর মৃত্যু হয় । মৃত রোগীর ছেলের অভিযোগ , কী চিকিৎসা হয়েছিল, সেটা তাঁরা ভালোভাবে জানতে পারেননি । মৃত্যুর পরে প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টগুলি চাওয়া হয় । তখন অন্য এক রোগীর রিপোর্ট দেওয়া হয় । পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকার বিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর ছেলে । কমিশন জানিয়েছে, এই হাসপাতালের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছে । হাসপাতালকে রোগীর সব মেডিকেল রেকর্ডস কমিশন এবং রোগীর পরিজনদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । হলফনামা পাওয়ার পর মামলাটির শুনানি শুরু করবে কমিশন ।

নিউ আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে কমিশনে । কমিশন জানিয়েছে, রোগী নিজেই অভিযোগ জানিয়েছেন । কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে 39 বছরের রোগী ওই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন । তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা তিনি পাননি । আট দিন ভরতি ছিলেন । এর জন্য অনেক টাকার বিল করা হয়েছে । অভিযোগে জানানো হয়েছে, ওই হাসপাতালে বিল হয় 2 লাখ 77 হাজার 159 টাকা । এর মধ্যে বিমা সংস্থা দিয়েছে 1 লাখ 26 হাজার 673 টাকা । বাকি টাকা রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, সরকারি সার্কুলার এবং কোরোনা সংক্রান্ত কমিশনের যে সব অ্যাডভাইজ়ারি রয়েছে , সেগুলি লঙ্ঘন করা হয়েছে । চিকিৎসকের জন্য প্রতিদিন 1 হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ আবার আলাদা করে মেডিকেল অফিসারের জন্য প্রতিদিন 1 হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ এটা নেওয়া সম্ভব নয় । যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলি খুব ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা । এগুলির ক্ষেত্রেও অনেক বেশি চার্জ করা হয়েছে । যেমন, লিভার ফাংশন টেস্টের জন্য চার্জ নেওয়া হয়েছে 2 হাজার 683 টাকা । অথচ, 1 হাজার 250 টাকায় কলকাতার সব থেকে বড় ল্যাবরেটরি থেকে এই টেস্ট করানো যায় । PPE-র সঙ্গে আলাদা করে মাস্ক-এর চার্জ নেওয়া হয়েছে । এগুলির বিষয়ে ওই হাসপাতালকে কারণ দেখাতে বলা হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, বিলের বিষয়ে ওই হাসপাতালকে বলা হলে, ওই হাসপাতাল বলে, বিমা সংস্থার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী চার্জ করা হয়েছে । কমিশনের প্রশ্ন, বিমা সংস্থার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যদি চার্জ করা হয়, তাহলে বিমা সংস্থা যে টাকা দিয়েছে সেটা নিয়েই তো সন্তুষ্ট থাকতে পারে ওই হাসপাতাল । এই রকম পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ওই রোগী অর্থাৎ, অভিযোগকারীকে 50 হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয় ৷ তিনি সেটা গ্রহণ করেন । কমিশন জানিয়েছে, ওই 50 হাজার টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । পাশাপাশি, হাসপাতালকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে আর এরকম ঘটনার অভিযোগ না আসে ৷

কমিশনে দায়ের করা অন্য একটি অভিযোগে জানানো হয়েছে, মৌলালির কাছে অবস্থিত বেসরকারি একটি ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে ICMR স্বীকৃতি ছিল না ৷ অথচ, কোরোনা পরীক্ষা করানোর জন্য বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে বেশি টাকা চার্জ করছিল এই ল্যাবরেটরি । এই চার্জ কোথাও তিন হাজার পাঁচশো টাকা , কোথাও আবার তিন হাজার সাতশো টাকা । অভিযোগে জানানো হয়েছে, পরিবারের সকলের জন্য ওই ল্যাবরেটরি থেকে কোরোনা টেস্ট করানো হয়েছিল । কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী 2 হাজার 250 টাকা করে নিয়ে , অতিরিক্ত টাকা অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ল্যাবরেটরিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মোট 5 হাজার 600 টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে কমিশনে । কমিশন জানিয়েছে, এই অভিযোগে বিল সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানানো হয়েছে । প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য খরচ অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে। ওই হাসপাতাল জানিয়েছে, বিমা সংস্থার সঙ্গে তাদের ডিল ক্লোজ় করা হয়নি । বিমা সংস্থার সঙ্গে বসে আরও কিছু টাকা আদায় করার চেষ্টা করবে হাসপাতাল । বিমা সংস্থার সঙ্গে এই বিষয়টি মিটলে , রোগীর পরিজনদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে । দুই পক্ষই আলোচনায় বসতে চেয়েছে । এর জন্য কমিশন কোনও নির্দেশ দেয়নি । তবে, কমিশন জানিয়েছে, রোগীর পরিজনদের পক্ষে যদি বিল মেটানো সম্ভব না হয়, তাহলে তখন আবার তাঁরা কমিশনে এলে, কমিশন বিষয়টি দেখবে।

ইকবালপুরে অবস্থিত নাম করা বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ অভিযোগের বিষয়ে কমিশন জানিয়েছে , রাতে বাবাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিযোগকারী । তাঁর বাবার কোরোনা পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হয় । পরের দিন সকালে তাঁর বাবার মৃত্যু হয় । এদিকে , রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পরিজনদের । হাসপাতাল থেকে এই মৃতদেহ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছিল । তার উপর এই মৃতদেহ কেউ বহন করতে চাইছিল না । পরে জানা যায় রোগীর কোরোনা পরীক্ষা করানো হয়নি । পরীক্ষার জন্য নেওয়া ওই টাকা রোগীর পরিজনদের ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল হাসপাতাল ‌। পরিজনরা নেননি, কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন । কমিশন জানিয়েছে, কোরোনা টেস্টের জন্য নেওয়া ওই টাকা হাসপাতালকে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে । পাশাপাশি, হাসপাতালকে রোগীর মেডিকেল রেকর্ডস কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

আগেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে জরিমানা করেছে কমিশন । অথচ, তার পরেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের হচ্ছে কমিশনে। এই সব ক্ষেত্রে রাজ‍্যের স্বাস্থ্য কমিশন আগামী দিনে কি আরও কঠোর হবে ? এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে , বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানা করা হচ্ছে । পাশাপাশি সতর্কও করে দেওয়া হচ্ছে । আগামী দিনে কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফের একই ধরনের অভিযোগ উঠলে, জরিমানা হিসাবে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে । সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স যাতে বাতিল করে দেওয়া হয় তার জন্য পদক্ষেপ করবে কমিশন।

কলকাতা, 28 সেপ্টেম্বর : চিকিৎসার খরচ হিসেবে অতিরিক্ত বিল করার অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । অতিরিক্ত বিলের জন্য কোথাও যেমন অতিরিক্ত বেড ভাড়া নেওয়া হচ্ছে , তেমনই কোথাও আবার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । অনেক ক্ষেত্রে নাকি সরকারি সার্কুলার এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এর অ্যাডভাইজ়ারি মানা হচ্ছে না। এর জেরে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানাও করছে WBCERC অর্থাৎ রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন । এর পরও বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগ উঠছে ৷ তার জেরে আরও কঠোর মনোভাব নিচ্ছে কমিশন ।


বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে দায়ের হচ্ছে একের পর এক অভিযোগ । এই সব অভিযোগের জেরে মামলাও চলছে । এমনই কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও নিচ্ছে কমিশন । তারা জানিয়েছে , কোরোনা আক্রান্ত সরকারি এক আধিকারিক ভরতি রয়েছেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে । এদিকে 17 বছরের কোরোনা আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাঁর স্ত্রী । বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘোরার পর অবশেষে ওই কিশোরকে ভরতি করানো সম্ভব হয় । তবে, তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি । কমিশন জানিয়েছে, এই কিশোরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুর্গাপুরের নামকরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে । ওই হাসপাতালের বক্তব্য , ওই সময় হাসপাতালের সব কর্মী কোরোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৷ ফলে হাসপাতালে ওই কিশোরকে ভরতি নেওয়া সম্ভব হয়নি । কমিশন জানিয়েছে, হাসপাতালের উচিত ছিল ওই কিশোরকে অন্য কোনও হাসপাতালে ভরতির ব্যবস্থা করিয়ে দেওয়া ৷ এই বিষয়ে ওই হাসপাতালের কাছে হলফনামা চেয়েছে কমিশন । পাশাপাশি হাসপাতালকে 25 হাজার টাকা কমিশনে জমা রাখতে বলা হয়েছে।

এই মামলায় কমিশন জানিয়েছে , ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কিশোরকে আরও দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে কিশোরকে অক্সিজেন দেওয়া হয় ৷ এবং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এর জন্য এই দু’টি হাসপাতালকে কমিশন ছাড় দিয়েছে । এদিকে, অ্যাম্বুলেন্সে কিশোরকে যে বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় সেখানে ছয় দিনের মাথায় তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয় । হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট তখন ছুটিতে ছিলেন । তখন ওই কিশোরকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় ৷ এই হাসপাতালে কিশোরের মৃত্যু হয় । কমিশন জানিয়েছে, ছয় দিন চিকিৎসা হয়েছে এবং তার মৃত্যু হয়েছে যে হাসপাতালেসেখান থেকে মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে ৷

অন্য একটি মামলায় কমিশন জানিয়েছে, কলকাতার বাসিন্দা 64 বছরের এক ব্যক্তিকে প্রথমে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল। কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীকে কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করানো হয় । এখানে এই রোগীর মৃত্যু হয় । মৃত রোগীর ছেলের অভিযোগ , কী চিকিৎসা হয়েছিল, সেটা তাঁরা ভালোভাবে জানতে পারেননি । মৃত্যুর পরে প্যাথলজিক্যাল রিপোর্টগুলি চাওয়া হয় । তখন অন্য এক রোগীর রিপোর্ট দেওয়া হয় । পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি টাকার বিল করা হয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁর ছেলে । কমিশন জানিয়েছে, এই হাসপাতালের কাছে হলফনামা চাওয়া হয়েছে । হাসপাতালকে রোগীর সব মেডিকেল রেকর্ডস কমিশন এবং রোগীর পরিজনদের দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । হলফনামা পাওয়ার পর মামলাটির শুনানি শুরু করবে কমিশন ।

নিউ আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে কমিশনে । কমিশন জানিয়েছে, রোগী নিজেই অভিযোগ জানিয়েছেন । কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে 39 বছরের রোগী ওই হাসপাতালে ভরতি ছিলেন । তাঁর অভিযোগ, হাসপাতালে ঠিক মতো চিকিৎসা তিনি পাননি । আট দিন ভরতি ছিলেন । এর জন্য অনেক টাকার বিল করা হয়েছে । অভিযোগে জানানো হয়েছে, ওই হাসপাতালে বিল হয় 2 লাখ 77 হাজার 159 টাকা । এর মধ্যে বিমা সংস্থা দিয়েছে 1 লাখ 26 হাজার 673 টাকা । বাকি টাকা রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, সরকারি সার্কুলার এবং কোরোনা সংক্রান্ত কমিশনের যে সব অ্যাডভাইজ়ারি রয়েছে , সেগুলি লঙ্ঘন করা হয়েছে । চিকিৎসকের জন্য প্রতিদিন 1 হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ আবার আলাদা করে মেডিকেল অফিসারের জন্য প্রতিদিন 1 হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে ৷ এটা নেওয়া সম্ভব নয় । যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলি খুব ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা । এগুলির ক্ষেত্রেও অনেক বেশি চার্জ করা হয়েছে । যেমন, লিভার ফাংশন টেস্টের জন্য চার্জ নেওয়া হয়েছে 2 হাজার 683 টাকা । অথচ, 1 হাজার 250 টাকায় কলকাতার সব থেকে বড় ল্যাবরেটরি থেকে এই টেস্ট করানো যায় । PPE-র সঙ্গে আলাদা করে মাস্ক-এর চার্জ নেওয়া হয়েছে । এগুলির বিষয়ে ওই হাসপাতালকে কারণ দেখাতে বলা হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, বিলের বিষয়ে ওই হাসপাতালকে বলা হলে, ওই হাসপাতাল বলে, বিমা সংস্থার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী চার্জ করা হয়েছে । কমিশনের প্রশ্ন, বিমা সংস্থার এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী যদি চার্জ করা হয়, তাহলে বিমা সংস্থা যে টাকা দিয়েছে সেটা নিয়েই তো সন্তুষ্ট থাকতে পারে ওই হাসপাতাল । এই রকম পরিস্থিতিতে হাসপাতাল থেকে ওই রোগী অর্থাৎ, অভিযোগকারীকে 50 হাজার টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয় ৷ তিনি সেটা গ্রহণ করেন । কমিশন জানিয়েছে, ওই 50 হাজার টাকা বেসরকারি ওই হাসপাতালকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । পাশাপাশি, হাসপাতালকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে আর এরকম ঘটনার অভিযোগ না আসে ৷

কমিশনে দায়ের করা অন্য একটি অভিযোগে জানানো হয়েছে, মৌলালির কাছে অবস্থিত বেসরকারি একটি ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে ICMR স্বীকৃতি ছিল না ৷ অথচ, কোরোনা পরীক্ষা করানোর জন্য বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে বেশি টাকা চার্জ করছিল এই ল্যাবরেটরি । এই চার্জ কোথাও তিন হাজার পাঁচশো টাকা , কোথাও আবার তিন হাজার সাতশো টাকা । অভিযোগে জানানো হয়েছে, পরিবারের সকলের জন্য ওই ল্যাবরেটরি থেকে কোরোনা টেস্ট করানো হয়েছিল । কমিশন জানিয়েছে, প্রতিটি পরীক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী 2 হাজার 250 টাকা করে নিয়ে , অতিরিক্ত টাকা অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ল্যাবরেটরিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মোট 5 হাজার 600 টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে কমিশনে । কমিশন জানিয়েছে, এই অভিযোগে বিল সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানানো হয়েছে । প্যাথলজিক্যাল টেস্টের জন্য খরচ অনেক বেশি নেওয়া হয়েছে। ওই হাসপাতাল জানিয়েছে, বিমা সংস্থার সঙ্গে তাদের ডিল ক্লোজ় করা হয়নি । বিমা সংস্থার সঙ্গে বসে আরও কিছু টাকা আদায় করার চেষ্টা করবে হাসপাতাল । বিমা সংস্থার সঙ্গে এই বিষয়টি মিটলে , রোগীর পরিজনদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হবে । দুই পক্ষই আলোচনায় বসতে চেয়েছে । এর জন্য কমিশন কোনও নির্দেশ দেয়নি । তবে, কমিশন জানিয়েছে, রোগীর পরিজনদের পক্ষে যদি বিল মেটানো সম্ভব না হয়, তাহলে তখন আবার তাঁরা কমিশনে এলে, কমিশন বিষয়টি দেখবে।

ইকবালপুরে অবস্থিত নাম করা বেসরকারি একটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ অভিযোগের বিষয়ে কমিশন জানিয়েছে , রাতে বাবাকে নিয়ে ওই হাসপাতালে গিয়েছিলেন অভিযোগকারী । তাঁর বাবার কোরোনা পরীক্ষার জন্য টাকা নেওয়া হয় । পরের দিন সকালে তাঁর বাবার মৃত্যু হয় । এদিকে , রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পরিজনদের । হাসপাতাল থেকে এই মৃতদেহ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছিল । তার উপর এই মৃতদেহ কেউ বহন করতে চাইছিল না । পরে জানা যায় রোগীর কোরোনা পরীক্ষা করানো হয়নি । পরীক্ষার জন্য নেওয়া ওই টাকা রোগীর পরিজনদের ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল হাসপাতাল ‌। পরিজনরা নেননি, কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছেন । কমিশন জানিয়েছে, কোরোনা টেস্টের জন্য নেওয়া ওই টাকা হাসপাতালকে ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে । পাশাপাশি, হাসপাতালকে রোগীর মেডিকেল রেকর্ডস কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।

আগেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে জরিমানা করেছে কমিশন । অথচ, তার পরেও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ দায়ের হচ্ছে কমিশনে। এই সব ক্ষেত্রে রাজ‍্যের স্বাস্থ্য কমিশন আগামী দিনে কি আরও কঠোর হবে ? এই বিষয়ে স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে , বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানা করা হচ্ছে । পাশাপাশি সতর্কও করে দেওয়া হচ্ছে । আগামী দিনে কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ফের একই ধরনের অভিযোগ উঠলে, জরিমানা হিসাবে টাকার অঙ্ক আরও বাড়ানো হবে । সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের লাইসেন্স যাতে বাতিল করে দেওয়া হয় তার জন্য পদক্ষেপ করবে কমিশন।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.