কলকাতা, 1 মে: দাড়িভিটে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ বিতর্কে গুলিতে মৃত্যু দুই যুবকের খুনের মামলার শুনানি শেষ হল ৷ যদিও রায়দান স্থগিত রাখল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ। মামলায় অবশ্য রাজ্য সরকারের পাশাপাশি এদিন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকেও চূড়ান্ত ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি মান্থা ৷
সোমবার মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, "এখনও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে?" উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি সাফ জানান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট ভুলে যান। এতদিন ধরে টানা মামলা চললেও এখনও পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ না-পৌঁছনোয় রীতিমতো উষ্মাপ্রকাশ করে বিচারপতি বলেন, "ক্ষতিপূরণ নিয়ে আবার আলাদা নির্দেশ দিতে হবে!" পাশাপাশি রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশে বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, গোটা ঘটনাক্রমে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে রেখেছে। দূর থেকে গোটা ঘটনাক্রম শুধু দেখছে তারা।
সেইসঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন জেলাশাসক, পুলিশ সুপারকে এতটাই ভরসা করে, তাদের থেকে রিপোর্ট চেয়েই দায়িত্ব সেরেছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার জন্য এটুকুই যথেষ্ট বলে মনে করে আদালত। এদিন আদালত তার পর্যবেক্ষণে একাধিক প্রশ্ন তুলে জানিয়েছে, 2020 সালে কমিশনের সদস্য না-থাকলেও 2018 থেকে দু'বছর কী করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন ? সেই তুলনায় জাতীয় মানবাধিকের কমিশন সেখানে লোক পাঠিয়ে একটা রিপোর্ট অন্তত তৈরি করেছে বলেও জানান বিচারপতি। যদিও কেন্দ্রের সেই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে বলেও জানিয়েছে আদালত। তবুও যে তারা একটা রিপের্ট দিয়েছে সেটুকুও রাজ্য কমিশন করতে না-পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি মান্থা ৷
এদিন বিচারপতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, "কিন্তু আপনারা কী করেছেন?" রাজ্যকেও বিচারপতির প্রশ্ন, "কোথায় প্রমাণ আছে, তদন্তকারী আধিকারিক অভিযোগকারীদের কাছে গিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তারা তদন্তকারীদের সহযোগিতা করেনি। কোনও নথিতে তার প্রমাণ নেই। গ্রামের লোকের অসহযোগিতা আর যে পরিবারগুলি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের অসহযোগিতা দু'টো এক নয়।" অন্যদিকে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী জানান, পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। খুনের ঘটনার পর তারা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করেনি। কারা গুলি করেছে, তা এখনও পরিষ্কার করতে পারেনি পুলিশ। তাপস বর্মনের পেটের নিচে গুলি লাগে। রাজেশ সরকারেরও গুলি লাগার জেরেই মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার দেহের ময়নাতদন্ত করে মাত্র একজন ডাক্তার!
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভূমিকা এই কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ৷ কমিশনের আধিকারিকরা গত 2018 সালের 11 অক্টোবর যাওয়ার আগে পর্যন্ত একজন পুলিশ অফিসারও দাড়িভিট গ্রামে যাননি বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বা তথ্য সংগ্রহও করা হয়নি বলে অভিযোগ কমিশনের। সেই সঙ্গে তথ্য প্রমাণের নথি কিছুই তাদের দেওয়া হয়নি বলেও জানায় কমিশন। স্থানীয় থানার আইসি রঞ্জন ছেত্রী পুলিশ আধিকারিক পরিমল অধিকারীর বিষয়েও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যেখানে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পরিমল অধিকারীর দেহে কোনও গুলি লাগেনি। আন্দোলন থামাতে গিয়ে তিনি আন্দোলনকারীদের হাতে মার খেয়েছিলেন মাত্র। কমিশনের আইনজীবী জানান, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের অবিলম্বে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তদন্ত করা উচিৎ ছিল যাতে সত্য বাইরে আসে।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে দিনাজপুরে নব জোয়ার কর্মসূচি বাতিল অভিষেকের