কলকাতা, 20 জুলাই: শুভেন্দুর রক্ষাকবচে চিড় ধরল? অন্তত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে উঠে আসছে ৷ এদিন হাইকোর্টের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজন মনে করলে পুলিশ এফআইআর করতে পারবে। এমনকী তদন্তের পর আইন অনুযায়ী বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারবে পুলিশ ৷
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে একাধিক মামলায় রক্ষাকবচ দিয়েছিল হাইকোর্ট ৷ এরই সঙ্গে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করার আগে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি পুলিশকে নিতে হবে বলেও নির্দেশে জানিয়েছিলেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ৷ এবার সেই মামলাতেই কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে বিরোধী দলনেতা ৷ বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এদিন নির্দেশে জানিয়েছে, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আইনানুগ তদন্ত করতে হলে, আদালতের কোনও অনুমতি নিতে হবে না পুলিশকে ৷ তবে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি বাধ্যতামূলক বলেও জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ৷
শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ থাকলেও, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। গত বছর ডিসেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা একাধিক মামলায় তাঁকে সুরক্ষাকবচ দিয়ে রাখার জেরেই এই এফআইআর গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। যা নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছিলেন খোদ তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার শুভেন্দুর রক্ষাকবচের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সুমন সিং নামে এক ব্যাক্তি ৷ সেই মামলাতেই এদিন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্য়ায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিল পুলিশকে।
আরও পড়ুন: মমতা-অভিষেকের বক্তব্যে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ! জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে
এদিন মামলাকারীর তরফে দাবি করা হয়, শুভেন্দু অধিকারী বিভিন্ন জায়গায় উস্কানিমূলক মন্তব্য বা আইন বিরুদ্ধে কাজ করলেও তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারছে না পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না পুলিশ ৷ সেই মামলার শুনানিতে এদিন ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেই ঘটনার তদন্ত করতে পারবে পুলিশ। যদি পুলিশ-প্রশাসনের হাতে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে তবেই এফআইআর করতে পারবে। আইন অনুযায়ী পুলিশ ব্যবস্থাও নিতে পারবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট। তবে ডিজিকে এই বিষয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে, ইতিমধ্যে যদি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়, তাহলে আদালতের অনুমতি নিতে হবে পুলিশকে তাও সাফ জানিয়েছে আদালত।
এদিন মামলার শুনানিতে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, "আজ যদি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর করতে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তাহলে সেই নির্দেশকে দেখিয়ে 10 বছর পর কোনও অপরাধের অভিযোগ উঠলে তখনও কি এফআইআর করতে পারবে না পুলিশ ? সেই ব্যাক্তি কি নির্দোষ বলে নিজেকে দাবি করতে পারেন ? যদি কোনও নির্দেশ অন্তঃসারশূন্য হয়, তাহলে কি সেই নির্দেশকে বাতিল বা ফিরিয়ে নেওয়া যায় না ?" মামলাকারীর তরফে আইনজীবী সপ্তাংশু বসু বলেন, "এই ঘটনা নির্বাচনের সময় একাধিক বার ঘটেছে। কিন্তু একাধিক মামলায় তাঁকে বার বার আদালত সুরক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে বলে পুলিশ কিছু করতে পারেনি।" যদিও শুভেন্দু অধিকারীর তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, "বলা হচ্ছে হাইকোর্ট তাঁকে সবদিক দিয়ে রক্ষাকবচ দিয়ে রেখেছে। কিন্তু একাধিক নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সুপ্রিমকোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন করেছে। একাধিকবার সেইসব মামলা খারিজ করে দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। সেখান থেকে কোনও কিছু না পেয়ে এখানে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে।" হলফনামা জমা দেওয়ার আর্জিও জানান তিনি। আগামী 7 অগস্ট ফের মামলার শুনানি।