কলকাতা, 10 ফেব্রুয়ারি: 1 হাজার 911 জন কর্মরত গ্রুপ-ডি কর্মী আজ থেকে আর কোনও বেতন নিতে পাবেন না ৷ আজ গ্রুপ-ডি নিয়োগ মামলায় এই রায় দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এর সঙ্গে তিনি সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করেন, "কার নির্দেশে দুর্নীতি করেছিলেন সেটা হাইকোর্টকে জানান ৷ প্রয়োজনে আপনার পরিবারকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া হবে" ৷
গ্রুপ-ডি নিয়োগ মামলায় বৃহস্পতিবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, এই 1 হাজার 911 জন এতদিন যা বেতন নিয়েছেন, তা কিস্তির মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে ৷ সিবিআই এই কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে ৷ প্রয়োজনে তাঁদের হেফাজতে নেওয়া যাবে ৷ আদালতের অনুমতি ছাড়া তাঁরা দেশের কোনও নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না ৷
আজ 'ওয়েস্ট বেঙ্গল সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন' আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছে ৷ সেখানে স্কুল সার্ভিস কমিশন জানিয়েছে- নাইসা নামের একটি সংস্থাকে ওএমআর শিটে নম্বরের সত্যতা যাচাই করতে নিয়োগ করা হয়েছিল । গাজিয়াবাদের তাদের অফিস থেকে এই ম্যানিপুলেটেড ওএমআর শিট উদ্ধার হয়েছে ৷ 1 হাজার 911 জনকে বেআইনি ভাবে সুপারিশের ভিত্তিতে চাকরিতে নিযুক্ত করা হয়েছিল ৷ সেই কারণে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে ৷ সেই সময় (2014-18 সাল পর্যন্ত) কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য ৷ এই হলফনামা দেখে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় 1 হাজার 911 জনের চাকরি বাতিল এবং অবিলম্বে বেতন বন্ধের নির্দেশ দেন ৷ তিনি জানান, সুবীরেশ ভট্টাচার্য কমিশনের ডাটা রুম ব্যবহার করতে না দিলে এই কাজ সম্ভব ছিল না ৷ তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে ৷ বিচারপতি নির্দেশ দেন, সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটে একটি নোটিফিকেশন দিয়ে জানাতে হবে কর্মরত গ্রুপ-ডি কর্মীরা চাকরির উপযুক্ত নয় ৷ ইতিমধ্যে এসএসসি নোটিফিকেশন দিয়ে 1 হাজার 911 জনের চাকরি বাতিলের কথাটি জানিয়েছে ৷
বিজ্ঞপ্তি দিয়ে 1 হাজার 911 জন প্রার্থীর নিয়োগপত্র বাতিল করার বিষয়টি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনকে এই পদে যোগ্যদের নাম-সহ অন্য ডিটেল (ওয়েটলিস্টেড তালিকা থেকে) তালিকা প্রকাশ করতে হবে ৷ আদলতের পর্যবেক্ষণ, দীর্ঘদিন ধরে যোগ্য প্রার্থীরা অপেক্ষা করে বসে আছেন ৷ 24 ঘণ্টার মধ্যে সেই তালিকা প্রকাশ করে 3 সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের সুপারিশপত্র পাঠাতে হবে ৷ 6 মার্চ, 2023 তারিখের মধ্যে এই কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ।
সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেও এই মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ছিলেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য ৷ আজ আদালতে বিচারপতি তাঁকে প্রশ্ন করেন, কার বা কাদের নির্দেশে তিনি এই দুর্নীতি করেছিলেন ৷ সত্যি কথা বলতে গিয়ে তাঁর পরিবার যাতে কোনও ভাবে বিপদে না পড়ে, তাই প্রয়োজনে নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ৷ এই কথাও জানান বিচারপতি ৷ আর যদি তিনি অবিলম্বে তা না-জানান, তাহলে সুবীরেশকেই দোষী বলে ধরা হবে ৷ সিবিআইয়ের অভিযোগ যতদিন পর্যন্ত না ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে, অর্থাৎ এই মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পাচ্ছেন, ততদিন সুবীরেশ ভট্টাচার্য তাঁর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি ব্যবহার করতে পারবেন না ৷ 14 মার্চ দুপুর 2টোর সময় এই মামলার ফের শুনানি ৷ এসএসসি ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ হলফনামা দিয়ে জানাবে তারা কী কী পদক্ষেপ করেছে ।
আরও পড়ুন: ফের জেল হেফাজতে পার্থ-সুবীরেশ-শান্তিপ্রসাদ