কলকাতা, 12 এপ্রিল : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে স্বতঃস্ফূর্ত মামলা গ্রহণের আর্জি জানালেন আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় ৷ নদিয়ার হাঁসখালির ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সোমবার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "হাঁসখালিতে খুব খারাপ ঘটনা ঘটেছে । মেয়েটি মারা গিয়েছে 5 তারিখ, পুলিশ জেনেছে 10 তারিখে । এক্ষেত্রে আপনি ধর্ষণ বলবেন নাকি অন্তঃসত্ত্বা বলবেন নাকি প্রেমের সম্পর্ক বলবেন ? সেটা খতিয়ে দেখেছেন কী ? আমি পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেছি ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্য আক্রান্তের সুবিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে । পাশাপাশি এই রকম স্পর্শকাতর ঘটনা প্রসঙ্গে জনসমক্ষে এমন কথা বলা আইন বিরোধী । তাই মামলা দায়ের করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী । প্রধান বিচারপতি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ তবে মামলাটি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে আদালত (HC Chief Justice to take suo moto cognizance over CM comment on Hanskhali incident) ৷
গত 5 এপ্রিল নদিয়ার হাঁসখালি থানার শ্যামনগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে । ওইদিন রাতে মূল অভিযুক্তের জন্মদিন ছিল ৷ উল্লেখ্য, মূল অভিযুক্ত তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্য সমর গয়ালির ছেলে ব্রজ গয়ালি ৷ মৃতার দিদির দাবি, অভিযুক্ত সোহেল ওরফে ব্রজ গয়ালির সঙ্গে তাঁর বোনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল (Hanskhali Rape Victim was in a Relation with Accused) ৷
এই সম্পর্ক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, "প্রেমের সম্পর্ক তো ছিলই শুনেছি । বাড়ির লোক, পাড়ার লোকেরাও জানত । এখন যদি কোনও ছেলেমেয়ে, কেউ কারও সঙ্গে প্রেম করে, আমার পক্ষে তাকে আটকানো সম্ভব নয় । এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে লাভ জিহাদ করব । এটা তার স্বাধীনতা । হ্যাঁ এটা আমরা নিশ্চয়ই দেখব, যদি কেউ কোনও অন্যায় করে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে । গ্রেফতার করা হয়েছে । গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কোনও রং দেখা হচ্ছে না ।"
নির্যাতিতার দিদি আরও জানান, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাঁর বোনকে জোর করে মদ্যপান করানো হয় এবং পরে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত ৷ সেই রাতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁর বোনকে বাড়িতে দিয়ে যায় কয়েকজন মহিলা ৷ তারা পরিবারকে হুমকি দিয়েছিল, বিষয়টি জানাজানি হলে কিংবা সরকারি হাসপাতালে গেলে বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে ।
6 এপ্রিল, বুধবার ভোরের দিকে নির্যাতিতার তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় এবং গোপনাঙ্গ থেকে রক্তপাত ঘটতে থাকে । পরিবারের লোকজন তাকে স্থানীয় একটি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান । এদিন সকালে ওই নাবালিকার মৃত্যু হয় । অভিযোগ এই ঘটনা জানাজানি হতে ওই এলাকায় তৃণমূলের কিছু প্রভাবশালী লোকজন এসে স্থানীয় একটি শ্মশানে তড়িঘড়ি নাবালিকার মৃতদেহ দাহ করে দেয় । এমনকি প্রমাণ লোপাটের জন্য় চিতায় জল ঢেলে পুড়ে যাওয়া ছাইও পরিষ্কার করে দেওয়া হয় ৷
ভয়ে প্রথমে কিছু না জানাতে চাইলেও 10 এপ্রিল মৃতার পরিবার ওই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য এবং তার ছেলের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে হাঁসখালি থানায় । এরপরেই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল পঞ্চায়েতের সদস্যর ছেলে ব্রজ গয়ালিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ তাকে আদালতে তোলা হলে 14 দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত । মূল অভিযুক্ত সোহেলকে জেরা করে প্রভাকর পোদ্দার নামের আরেক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন অভিযুক্ত প্রভাকর ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল (Police arrest another accused in Hanskhali Rape) ।
আরও পড়ুন : Hanskhali Rape : হুমকি দেননি, দাবি হাঁসখালি-কাণ্ডে নাবালিকাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া মহিলার