কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: সেন্ট জেভিয়ার্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Mamata) সাম্মানিক ডিলিট প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলার প্রশাসনিক প্রধান অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor Praise for Mamata)। সোমবারের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উইনস্টন চার্চিল (Winston Churchill), মিল্টন, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ, এপিজে আবদুল কালাম (A P J Abdul Kalam) এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে এক আসনে বসিয়ে তাঁর প্রশংসা করেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল । এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর এই সম্মানপ্রাপ্তির জন্য কুর্নিশ জানিয়েছেন বাংলার সাংবিধানিক প্রধান ।
ঠিক কী বলেছেন রাজ্যপাল ?
রাজ্যপাল বলেন, আজকের এই মুহূর্তে যিনি এই বিরল সম্মান পাচ্ছেন, আমি মনে করি এর জন্য তিনি একদম যোগ্য মানুষ । তিনি মনে করেন, এই সম্মান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই প্রাপ্য ছিল । তবে ভুলে গেলে চলবে না, এই সম্মান তাঁকে রাজনীতিতে সাফল্যের জন্য দেওয়া হচ্ছে না । সেটা তিনি আগেই রাজ্যের মানুষের কাছ থেকে পেয়েছেন । এটা একজন রাজনীতিকের সাহিত্যচর্চা ও কবিতাকে সম্মান জানানো । যা তিনি নিজের যোগ্যতাতেই অর্জন করেছেন ।
বিশিষ্টদের উদাহরণ টেনে মমতার প্রশংসা: এখানেই শেষ নয়, তিনি এরপর মমতার প্রশংসা করতে গিয়ে বিশিষ্টদের উদাহরণ টেনে আনেন । রাজ্যপাল বলেন, "আমরা গর্বের সঙ্গে চেক রিপাবলিকের প্রেসিডেন্টকে মনে করি, যিনি শুধু একজন রাজনীতিকই ছিলেন না, যিনি ছিলেন একজন কবি, একজন সাহিত্যিক । আমরা ভারতে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণকে মনে করি, যিনি একজন স্বনামধন্য শিক্ষক ছিলেন ।
পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক । আমরা এপিজে আবদুল কালামকে ভুলে যাইনি । যিনি উইংস অফ ফায়ার আমাদের উপহার দিয়েছিলেন । আমরা নিশ্চয়ই মনে রেখেছি অটল বিহারী বাজপেয়ীকে, যিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে গোটা দেশে একটা অনন্য পরিচিতি তৈরি করেছিলেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদেরই একজন । আমরা সবাই খুশি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার সাংবিধানিক সহকর্মী । যে সমস্ত রাজনীতিবিদ সাহিত্যে অনন্য অবদান রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম ।"
আরও পড়ুন: সেন্ট জেভিয়ার্সের থেকে সাম্মানিক ডি'লিট পেলেন মমতা, উৎসর্গ করলেন সাধারণ মানুষকে
রাজ্যপালের মন্তব্যে অখুশি বিজেপি: প্রসঙ্গত এ দিন রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে দারাজ সার্টিফিকেট দিলেও একে ভালোভাবে দেখছেন না বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য । সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এই বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, রাজ্যপালের প্রশংসা করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না । তিনি একটা মঞ্চে গিয়েছেন যেখানে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে সম্মানিত করা হচ্ছে । রাজ্যপাল তো তার বিরোধিতা করতে পারেন না । মুখ্যমন্ত্রী গান লেখেন, কবিতা লেখেন, গানের সুর করেন - সবই তিনি শুনেছেন । সেই জায়গা থেকেই এমন বক্তব্য রেখেছেন ।
এই নিয়ে এ দিন কটাক্ষের সুর শোনা গেল এই বিজেপি মুখপাত্রের গলায় । তিনি বলেন, এখন সবে ওঁর হাতে খড়ি হয়েছে । ধীরে ধীরে যত বাংলা ভাষাকে জানবেন, তত মুখ্যমন্ত্রীর লেখা সম্পর্কে জানবেন । একইসঙ্গে তিনি এও বলেছেন, সৌজন্য ভালো । তবে অতি সৌজন্য ভালো না ।
কটাক্ষের সুর সিপিএম-এর গলায়: অন্যদিকে, সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করবেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের প্রশংসা করবেন সবটাই তো ভালো । খারাপ কী ! সকলই তেনার ইচ্ছায় । উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির তুলনা করতে চেয়েছিলেন । অটল বিহারী বাজপায়ী, উইন্সটন চার্চিলের সঙ্গে তুলনা করেছেন । তবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনা করেননি এটাই যথেষ্ট ।"
স্বাগত জানাল তৃণমূল: এ দিকে রাজ্যপালের এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস । তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, "সঠিক বলেছেন রাজ্যপাল । রাজ্যপালের এই বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি ।"