কলকাতা, 20 মার্চ : কোরোনা নিয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় 15 এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ । কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে-মিল যেন বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় । গতকাল এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর । মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মিড-ডে-মিলের সুবিধাভোগী প্রতি পড়ুয়া পিছু এক মাসে 2 কেজি চাল ও 2 কেজি আলু দেওয়া হবে । আগামী সোমবার থেকেই স্কুলে স্কুলে শুরু হবে চাল ও আলু বিতরণের কাজ । কীভাবে জমায়েত এড়িয়ে স্কুল তা বিতরণ করবে সেই সংক্রান্ত নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তরের মুখ্য সচিবের তরফ থেকে ।
আজ মিড-ডে-মিলের জন্য প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি পড়ুয়া পিছু এক মাসে 2 কেজি চাল ও 2 কেজি আলু দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাড়িতেই স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সচিব ও দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে, যেখানে মিড-ডে-মিল দেওয়ার ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের কাছে মিড-ডে-মিলের সামগ্রী পৌঁছে দিতে । আমরা আজ সকালে দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি । মুখ্যসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছি । সেই মোতাবেক মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা মিড-ডে-মিল পেতেন, খেতেন, তাঁদের এক মাসে 2 কেজি চাল এবং 2 কেজি আলু প্রতি ছাত্র পিছু আমরা দেওয়ার ব্যবস্থা করছি । জেলা প্রশাসন, জেলায় আমাদের যাঁরা আধিকারিক রয়েছেন এবং রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের সর্বশিক্ষা অভিযানের আধিকারিকরা যে যেখানে আছেন তাঁদের তত্ত্বাবধানে এই 2 কেজি চাল এবং 2 কেজি আলু দেওয়ার ব্যবস্থা হবে । যে সমস্ত সংশ্লিষ্ট স্কুল আছে সেখানে একটি সিডিউল করে অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এগুলো৷ একই সময়ে কোনও অবস্থাতেই বেশি সংখ্যক অভিভাবক আসবেন না । বিভিন্ন স্কুলে বিভিন্ন কাউন্টার করে দেব আমরা । আলাদা আলাদা সময় করে দেব । যাতে একসঙ্গে 10 জনের বেশি সেই জায়গায় না থাকতে পারেন । এটা আমাদের পরিকল্পনা । এর বাস্তবায়ন কীভাবে করবে সেটা দেখার জন্য শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক এবং জেলা প্রশাসন আছে ।"
এ ছাড়া, আগামী 1 এপ্রিল থেকে মিড ডে মিলের রন্ধন কর্মী এবং ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মধ্যে আনা হবে বলেও আজ জানান শিক্ষামন্ত্রী ।এর পাশাপাশি, করোনা ভাইরাসের কারণে বিকাশ ভবনের একাধিক প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী । তিনি জানান, এখন থেকে মাত্র একটি প্রবেশপথ থাকবে । এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "শিক্ষা দপ্তরের এবং পর্ষদের অফিসেও আমরা ভিজিটরদের নিয়ন্ত্রণ করছি । আগে যেরকম বিকাশ ভবনে কয়েকটা গেট ছিল । আজকেও মিটিং হয়েছে । আমরা একটা প্রবেশ পথ রাখছি । সেখানে লোকের সংখ্যা বাড়াচ্ছি এবং সেখান থেকেই ভিজিটররা প্রবেশ করবেন । বিকাশ ভবনের বিভিন্ন দিক থেকে যে প্রবেশপথ ছিল, সেই বিভিন্ন প্রবেশপথের কোনও সুযোগ থাকবে না । একটাই মূল প্রবেশপথ থাকবে । সেখানে স্যানিটাইজ়ার থেকে শুরু যা যা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার তা নেব । আমি বলব যে, খুব দরকার না পড়লে, অকারণে আসবেন না ।"এ ছাড়া, স্টেট অ্যাডেড কলেজ টিচার (SACT) পদের জন্য চলছিল ভেরিফিকেশন । কোরোনা ভাইরাস নিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই ভেরিফিকেশন প্রোগ্রাম অনলাইনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দপ্তর ।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "বেশ কিছু ভেরিফিকেশনের কাজ চলছিল । ইন্টারভিউ হওয়ার কথা ছিল । আমরা বলেছি সেগুলোর প্রত্যেকটাই এখন থেকে অনলাইনে হবে ৷ অনলাইনে তাঁরা উত্তর দেবেন । যাঁদের হয়ে গেছে তাঁদের হয়ে গেছে, যাঁদের এখনও হয়নি সেগুলো অনলাইনে হবে । এখন থেকে আর অফিসে এসে তাঁদের কিছু করতে হবে না । অনেকে প্রশ্ন করছেন, আসবেন কি আসবেন না, দুশ্চিন্তায় আছেন । তাঁদের আমরা বলতে চাই যে, অনলাইনে কোয়েশ্চেনিয়ার আছে । সেই কোয়েশ্চেনিয়ারে্র উত্তর দেবেন । তার ভিত্তিতেই যা ভেরিফিকেশনের কাজ করার করবে ।"
অন্যদিকে, CBSE ও ICSE বোর্ড 19 মার্চ-31 মার্চ পর্যন্ত সব পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বন্ধ করে দেওয়া হবে? শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আমরা উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি । আর মাত্র চারটে পরীক্ষা বাকি । আমাদের ছাত্রদের মুখের দিকেও তাকাতে হবে । স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তাঁদেরকে অবহিত করতে হবে । দুটো জিনিস একসঙ্গে করতে হবে । আমি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে জানিয়েছি, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিকে, ছাত্রদের এবং যাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনভিজিলেশনের দায়িত্বে আছেন তাঁদেরকে স্যানেটাইজ়ার ব্যবহার করা সহ যা যা সতর্কীকরণ সরকার দিয়েছে, শিক্ষা দপ্তর থেকে প্রচারিত হয়েছে, সেই দিকগুলিতে তাঁরা যেন নজর দেয় । আমাকে সংসদের সভাপতি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তারা জেলা পরিদর্শকদের জানিয়েছেন এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন ।"
আজ কলকাতা জেলা পরিদর্শকের তরফ থেকেও পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রধানদের বলা হয়েছে, প্রত্যেক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার অথবা হ্যান্ডওয়াশ কিট প্রোভাইড করতে ।