কলকাতা, 15 জানুয়ারি: সঠিক সময়ে রোগ সনাক্ত করতে পারেনি শহরের নামজাদা এক বেসরকারি হাসপাতাল ৷ এর জেরে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে রোগীকে ৷ সময় মতো তিনি পাননি চিকিৎসা ৷ তার ফলে মৃত্যু হয়েছে রোগীর ৷ এই অভিযোগ নিয়ে ব্যক্তির মৃত্যুর চার বছর পর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের দারস্থ হয়েছেন রোগীর মেয়ে ও স্ত্রী । কমিশন হাসপাতাল এবং রোগীর পরিবার দু'য়েরই বক্তব্য শুনেছে ৷ তবে এখনও কিছু রায় দেওয়া হয়নি ৷ রোগীর পরিবারের কাছে অভিযোগের ভিত্তিতে বেশ কিছু তথ্য চেয়ে আপাতত রায় স্থগিত রাখা হয়েছে ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম অমিয় কুমার নন্দী । 2018 সালে প্রথমে তাঁর বুকে ব্যথা হয় । মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি একজন ডাক্তারকে দেখান । সেই চিকিৎসক তাঁকে বলেন যে পেস মেকারের কোনও দরকার নেই । তবে রোগী সন্তুষ্ট হননি । মাসচারেক বাদে তিনি বাইপাসের ধারে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসককে দেখান । তবে তখন তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে পেসমেকার বসানোর কথা বলা হয় । তিনি তখন পেসমেকার বসাতে রাজি হন ৷
পেসমেকার বসিয়ে যেদিন অমিয়র হাসপাতাল থেকে ছুটি পাওয়ার কথা, সেদিন হঠাৎ তাঁর পেটে যন্ত্রণা শুরু হয় । বেসরকারি হাসপাতালের তরফে ইউএসজি করে দেখা যায় তাঁর কোলনে একটা টিউমার হয়েছে । সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পরীক্ষা করা চিকিৎসকরা গাস্ট্রো বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । গ্যাস্ট্রো বিভাগের চিকিৎসকরাও পরীক্ষা করেন অমিয়কে । এরপর একটু স্থিতিশীল হন তিনি ৷ শরীর ঠিক থাকায় রোগীর পরিবার অমিয়কে বাড়ি নিয়ে যান ।
তারপর তাঁকে টাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় টিউমারের চিকিৎসার জন্য । সেখান থেকে আগে অস্ত্রোপচারের কথা বলা হয় । তবে টাটা হাসপাতালে কার্ডিওলজির ব্যবস্থা নেই ৷ তাই যেখানে কার্ডিওলজির ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে যেতে বলা হয় রোগীকে । টাটা হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীকে ফের সেই প্রথম হাসপাতাল অর্থাৎ মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক শিবনাথ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন । সেখানে অস্ত্রোপচার হয় রোগীর ৷ অস্ত্রোপচারের পর ভালো থাকায় তিনি ছুটিও পেয়ে যান ।
রোগীর পরিবারের দাবি, টাটা হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল অস্ত্রোপচারের তিন সপ্তাহ বাদে আসতে । যখন যাওয়া হয় তখন রোগীকে আরও কিছু পরীক্ষা করানোর কথা বলা হয় । দেরি হয়ে যাচ্ছে চিকিৎসায় ভেবে তখন আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালে অমিয়কে নিয়ে যান পরিবার । সেখান থেকে অমিয়কে কেমো দেওয়া হয় তিন বার । তাতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয় বলে পরিবারের দাবি । তৃতীয়বার কেমো চলাকালীন জ্বর আসে অমিয়র । তার মধ্যে কেমো দেওয়া হয় । কিন্তু জ্বর কমাতে পারেননি কেউই বলে জানিয়েছে পরিবার । ফের নিয়ে যাওয়া হয় সেই মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে । সেখানে জ্বরের চিকিৎসা হয় । কিন্তু তাও জ্বর কমে না তাঁর ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে । সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয় ৷
এই ঘটনাটি ঘটেছে চার বছর আগে 2018 থেকে 2019 সালের এপ্রিলের মধ্যে । প্রায় চার বছর কেটে গিয়েছে এরপর ৷ সম্প্রতি রোগী মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করে পরিবার । কমিশন সূত্রে খবর, চার বছর পর অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে রোগীর পরিবারের দাবি, তাঁরা আরও অনেক জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছে । তবে কোথা থেকেও কোনও উত্তর মেলেনি । শেষ পর্যন্ত রোগীর পরিবার কমিশনে অভিযোগ জানায় চার বছর পর ।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের তরফে হাসপাতাল এবং রোগীর পরিবার দুইয়েরই বক্তব্য শুনে রায় আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে । কারণ হিসাবে জানা গিয়েছে, কমিশন এ বিষয়ে রোগীর পরিবারকে আরও বেশি তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে । পাশাপাশি তাঁরা মুকুন্দপুরের যে বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে, সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য দিতে বলা হয়েছে রোগীর পরিবারকে ।
আরও পড়ুন: বিনা নোটিশে সংস্থা বদল, কর্মী বিক্ষোভে অশান্ত আরজি কর