কলকাতা, 7 মে : একের পর এক উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে কলকাতায় । যার জেরে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বেড়ে চলেছে আতঙ্ক । এবার ঘটনাস্থল যাদবপুরের বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল । এই হাসপাতালের চার প্রসূতির সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এই চারজনের কারও ক্ষেত্রেই কোরোনা সংক্রমণের কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি । এই চারজন আক্রান্ত হওয়ার জেরে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের 12 জন চিকিৎসক সহ 40জনকে কোয়ারানটিনে রাখা হয়েছে ।
বেসরকারি এই হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখানে কোনও রোগীকে ভরতি করানো হলে তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয় তিনি কোরোনা আক্রান্ত কি না । তারপর ওই রোগীকে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পাঠানো হয় । কারও ক্ষেত্রে COVID-19 পজ়িটিভ ধরা পড়লে প্রোটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় । এই চারজন প্রসূতির ক্ষেত্রে কোরোনা সংক্রমণের কোনও উপসর্গ ছিল না । তবে, তাঁদের ক্ষেত্রেও সোয়াবের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয় । রিপোর্টে দেখা যায় এই চারজন কোরোনা আক্রান্ত । জানা গিয়েছে, রিপোর্ট আসার আগে এই চারজনের প্রসব হয় । চারজনের সন্তানই সুস্থ আছে । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এই চারজন প্রসূতির চিকিৎসা চলছে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে । তাঁদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে ।
এই চার প্রসূতি কোরোনা আক্রান্ত জানার পরই এই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে 40জনকে কোয়ারানটিনে রাখা হয়েছে । এই 40জনের মধ্যে 12জন চিকিৎসক রয়েছেন । তবে, হাসপাতালের পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি । বেসরকারি এই হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, 40জন কোয়ারানটিনে রয়েছেন । তা সত্ত্বেও পরিষেবা চালু রাখা হয়েছে রোগীদের কথা ভেবে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই চার প্রসূতির মধ্যে একজনের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না তিনি কোরোনা আক্রান্ত হয়েছেন কি না । নিশ্চিত হতে ফের তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে । তবে এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি ।
এদিকে, একের পর এক এভাবে উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাওয়ায় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ হাসপাতালের অন্য কর্মী এবং আধিকারিকদের মধ্যেও আতঙ্ক বেড়ে চলেছে । এই ধরনের পরিস্থিতি বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা যাচ্ছে । উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার পরে তেঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । যাদবপুরের বেসরকারি এই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে হলে তো সকলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখতে হবে । কোনও কোনও চিকিৎসক এমনই বলছেন, তিনি যে একজন উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেননি, তা কীভাবে জোর দিয়ে বলা যায়? উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তদের থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে ।"
বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্ত নিজেও বুঝতে পারেন না তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কি না । এক সময় তিনি নিজে থেকে সুস্থও হয়ে যান । এক্ষেত্রে তাঁর শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার তুলনায় বেশি থাকার কারণে এমন হতে পারে । অথচ এই ধরনের উপসর্গহীন কোরোনা আক্রান্তের কাছ থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে ।