কলকাতা, 14 অগস্ট: 2022 সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে একটি বোর্ড লাগানো হয়েছিল ৷ সেখানে কর্তৃপক্ষের তরফে লেখা হয়েছিল- "বিনা অনুমতিতে বা উপযুক্ত কারণ ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ ৷" তবে, পড়ুয়াদের একাংশের আপত্তিতে সেই বোর্ড খুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ ৷ আজ প্রায় এক বছর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান আবাসনের আবাসিকের রহস্যমৃত্যুর পর ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ একাধিক অসামাজিক কাজকর্মের আঁতুড়ঘর বলে চিহ্নিত করছে সমাজের একাংশ ৷
তবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তনীদের একাংশ ৷ তবে, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অপসংস্কৃতির আঁতুড়ঘর হিসেবে দেগে দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সেই সকল প্রাক্তনী ৷
এ নিয়ে সিপিআইএম-এর রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সুজন চক্রবর্তী বলেন, "আমরা যখন যাদবপুরে পড়াশোনা করেছি, তখন যাদবপুরে 'র্যাগিং' ছিল না বললেই চলে, কিংবা খুবই সামান্য ৷ যখনই খবর পেয়েছি তখনই আমরা তাঁর প্রতিবাদ করেছি ৷ তা কালক্রমে বন্ধও হয়ে যায় ৷ আমাদের সময় যাদবপুর কেন, যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা বড় একটা ঘটতো না ৷"
তিনি আরও বলেন, "এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে একটা গর্বের জায়গা ৷ তবে, তার এই ঐতিহ্যকে ম্লান করার চেষ্টা অনেক সময় করা হয়েছে ৷ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মান এবং ঐতিহ্য বজায় রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব বলে মনে করি ৷ তবে, সাম্প্রতিক যে ঘটনাটি ঘটে গেল, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ৷ একটা পরিবারের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল কিছু অসভ্য অপরাধীদের জন্য ৷ তাঁরা ক্যাম্পাস ও হস্টেলে দাপিয়ে বেড়াবে সেটা, কখনও চলতে পারে না ৷ গভীরে গিয়ে তদন্ত করে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই ৷"
আরও পড়ুন: 'ছুটিতে ছিলাম, ফোন বন্ধ ছিল'; যাদবপুরকাণ্ডের চারদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মন্তব্য রেজিস্ট্রারের
তবে, এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা এবং সমগ্র ছাত্রসমাজকে দেগে দেওয়াটা ভয়ংকর খারাপ বলে মনে করেন সিপিআইএম নেতা ৷ তাঁর মতে, ব়্যাগিং যাঁরা করছেন, তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই করছেন ৷ আবার অনেকে বাম বা এসএফআই বলে একটা মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সুজন ৷ তিনি জানান, একসময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অরাজনৈতিক মনোভাব থেকে 'উই দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স' তৈরি হয়েছিল ৷
তাঁর মতে, "গত কয়েকবছরের ঘটনাক্রমের দায় এসএফআই-এর উপরে চাপিয়ে দেওয়াটা একেবারে অনুচিত ৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতি মুক্ত করতে হবে সেটাও কাম্য ৷ তাই সবাইকে এক হয়ে এই লড়াই লড়তে হবে ৷ কী করছে কর্তৃপক্ষ? অ্যান্টি ব়্যাগিং কমিটি কী করছে ? তাই একজন প্রাক্তনী হিসেব কয়েকটি ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়কে অপরাধী বানানো উচিত হবে না বলেই আমি মনে করি ৷"
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রাক্তনী তন্ময় ঘোষ ৷ যিনি বর্তমানে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্বরোজগার কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ৷ তিনি, জানান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং দুঃখজনক ৷ এই ঘটনায় যে বা যাঁরা দোষী, তাঁদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন তন্ময় ঘোষ ৷
আরও পড়ুন: মৃত ছাত্রের ঘর থেকে পাওয়া চিঠি লিখেছিল দীপশেখর! জেরায় স্বীকারোক্তি
তিনি বলেন, "এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়া উত্তাল হয়েছে ৷ বিভিন্ন মানুষ, বিভিন্ন রকম কথা বলছেন ৷ এর থেকে একটা বিষয় নিশ্চিত যে সমাজ যে এখনও বেঁচে আছে ৷ তবে, একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যে বামপন্থী আন্দোলন এবং মুক্তচিন্তার আঁতুড়ঘর এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ৷"
তন্ময় ঘোষ আবার এই ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন দেখছেন ৷ তাঁর মতে, "এই ঘটনার পেছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলেই আমার মনে হয় ৷ কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই বিশ্বিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ৷ সেখান থেকে কোথাও হয়তো রাজনৈতিক আদর্শগুলিকে লঘু করার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ সস্তার জনপ্রিয়তা পেতেই কি ছাত্রছাত্রীদের একাংশ রাজনৈতিকভাবে আদর্শের দিক থেকে বিচ্যুত হচ্ছে ? যা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'এক্সক্লুসিভ' ধাঁচকে নষ্ট করে দিচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: যাদবপুরে ছাত্র মৃত্যু নিয়ে সরব সেলেব প্রাক্তনীরা, গাফিলতির অভিযোগ
তন্ময় ঘোষ মনে করেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার পিঠস্থান ৷ সেই কারণেই সমাজের একাংশের মধ্যে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে একটা বিরূপ মনোভাব কাজ করে হয় তো ৷ এই মুক্ত চিন্তা অনেকেই হয় তো খুব সহজে মেনে নিতে পারেননি বা পারেন না ৷ তাই সাম্প্রতিক এই ঘটনার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেশ কিছু বিরূপ মন্তব্য করার চেষ্টা করছেন ৷ তবে, ব়্যাগিং কিংবা মাদক সেবন পড়ুয়া সমাজকে যে নষ্ট করে দিতে পারে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই ৷"