ETV Bharat / state

পূর্বভারতে প্রথম, পারকিনসন্সের চিকিৎসায় পাম্প বসিয়ে মিলল সাফল্য

মল্লিকবাজার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় কথা ফিরে পেলেন পারকিনসন্সে আক্রান্ত রোগী

ছবি সৌজন্যে pixabay
author img

By

Published : Sep 16, 2019, 4:31 PM IST

কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর: 10 বছর ধরে পারকিনসন্সে আক্রান্ত তিনি । চিকিৎসা চলছিল । একসময়, ওষুধে সেভাবে আর কাজ না হওয়ায়, ব্রেন পেসমেকার বসানো হয়েছিল তাঁর । সমস্যা দেখা দেয় তারপরেও । স্থির হয়ে থাকতে পারতেন না । অনেকটা নাচের মতো মুভমেন্ট । হাত, পা শক্ত হয়ে যেত । একসময় কথাও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর । কলকাতার বাসিন্দা বছর ৪৫-এর এই রোগী একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার । অবশেষে, মল্লিকবাজারে বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসায় এখন কথা বলতে পারছেন তিনি । অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও কিছুটা মিটেছে । ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে রোগীর শরীরে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসকরা । তার জেরেই এই সাফল্য পেলেন তাঁরা । পারকিনসন্সের চিকিৎসায় এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার পূর্ব ভারতে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার জানিয়েছেন, এই ওষুধ ইঞ্জেকশনের মতো পাম্পের মাধ্যমে দেওয়া হয় । চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এই পাম্পে সেট করে দেওয়া হয় কত সময় ধরে এবং কতটা পরিমাণে ওষুধের প্রয়োজন । এই পাম্প থেকে একটি টিউবের মাধ্যমে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয় রোগীর শরীরে । টিউবের মাথায় রয়েছে নিডল । এই নিডল পেটে সেট করে দেওয়া হয় ।

বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক পূর্বা বসু বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তিনি 10 বছর ধরে পারকিনসন্সে ভুগছেন । ব্রেন সার্জারিও হয়েছিল । একটি স্টিক নিয়ে তাঁকে হাঁটতে হত । একা হাঁটতে পারতেন না । সমস্যায় পড়তে হতো । রোগীর তখন ডিস্কাইনেশিয়াও দেখা দিয়েছিল। অর্থাৎ, স্থিরভাবে তিনি থাকতে পারতেন না । সব সময় নড়াচড়া করতেন । নাচের মতো মুভমেন্ট । মাঝেমধ্যে হাত-পা শক্ত হয়ে যেত, কথা বলতে পারতেন না ।" তাঁর কথায়, "এই রোগীকে আমরা দু' বছর ধরে দেখছি । শেষবার যখন আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তাঁর 15 দিন আগে তাঁর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । গলার স্বর কমে আসে, কথা জড়িয়ে যায় ৷ এটি পারকিনসন্স রোগের একটি উপসর্গ । ধীরে ধীরে কথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছিল । তখন অ্যাপোমরফিন ইনজেকশন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।"

শুনুন চিকিৎসক পূর্বা বসু ও হৃষিকেশ কুমারের বক্তব্য

এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য পাম্প ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন? পূর্বাদেবী বলেন, "রোগীর বয়স কম । তার কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । অসুখের লক্ষণগুলি আগের ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না । ব্রেন পেসমেকার কাজ করলেও তাঁর কথা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছিল না ৷ আমাদের কাছে একটাই উপায় ছিল, পাম্পের মাধ্যমে রোগীর কথা ফিরিয়ে আনা যায় কি না । মূলত রোগীর কথা ফিরিয়ে আনার জন্যই এই পাম্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার উন্নতির বিষয়টিও নজরে ছিল ।" তিনি জানান, পাম্পের মাধ্যমে ওষুধের ট্রায়াল দেওয়ার পর দেখা যায় রোগীর কথা ফিরে আসছে । এরপরে যাতে সব সময় কথা বলতে পারেন তিনি তার জন্য পাম্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ রোগী যতক্ষণ কাজকর্মের মধ্যে থাকেন, ততক্ষণ পাম্পের ব্যবহার করা হচ্ছে । যতক্ষণ পাম্প চালু থাকে ততক্ষণ স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছেন ।" পূর্বাদেবীর বক্তব্য, "ডিস্কাইনেশিয়াও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে । শরীরে ওষুধের কম-বেশি মাত্রার উপর ডিস্কাইনেশিয়ার সমস্যা দেখা দেয় । পাম্পের মাধ্যমে ওষুধ দিলে এই সমস্যা থাকে না ।"

পূর্বাদেবীর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন হাসপাতালের অপর চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার । তিনি বলেন, "গত ছয় মাস ধরে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না । এর পরে, নতুন একটি ওষুধ দেওয়ার ভাবনা চিন্তা করলাম আমরা । কয়েক মাস আগ থেকে এই ওষুধটি এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে । এই ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় ।" তিনি আরও বলেন, "পাম্পের মাধ্যমে এই ওষুধ আমরা দেওয়া শুরু করি । এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে এখন কথা বলতে পারছেন তিনি । হাঁটাচলাতেও উন্নতি হয়েছে । পূর্ব ভারতে এই ওষুধ এবং এই পাম্পের ব্যবহার এই প্রথম । দক্ষিণ ভারতে কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছে ।" রোগী কেমন আছেন এখন? এই চিকিৎসক বলেন, "আগের থেকে এখন অনেক ভালো আছেন । ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন । তাঁর হাঁটাচলায় উন্নতি হয়েছে ।"

সারাজীবন কি এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "পারকিনসন্স হল পার্মানেন্ট ডিজ়অর্ডার । নার্ভ ডিজেনারেশন । এই অসুখ সম্পূর্ণ সেরে যায় না । নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় । পারকিনসন্স চিকিৎসায় নতুন কিছু না আসা পর্যন্ত এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার এই রোগীকে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হবে ।" তিনি বলেন, "5-10% ক্ষেত্রে কম বয়সিদের মধ্যে দেখা যায় । এক্ষেত্রে রোগীর পারকিনসন্স যে বয়সে ধরা পড়েছে, সেটা আনকমন । সাধারণত ৬০-এর বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে পারকিনসন্স দেখা দিতে পারে । কিন্তু, 5 থেকে 10 শতাংশ ক্ষেত্রে অল্পবয়সিরা আক্রান্ত হতে পারেন ।"

অল্পবয়সে কেন পারকিনসন্স হতে পারে? তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত কারণ জানা যায়নি ৷ তবে কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে । জেনেটিক ফ্যাক্টর হতে পারে । জিনের অস্বাভাবিকতার কারণেও হতে পারে । এই ফ্যাক্টর আচমকা কাজ করতে পারে অথবা বংশগতভাবে হতে পারে । এক্ষেত্রে ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে পারকিনসন্স কারও নাও থাকতে পারে । জেনেটিক ফ্যাক্টর ছাড়া এখন দূষণের কারণে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে ।" তিনি বলেন, "এমন কিছু পার্টিকেলস আছে, দূষণের মাধ্যমে যেগুলি ব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । এর ফলে পারকিনসন্স হতে পারে । খাবারের মাধ্যমেও পারকিনসন্স হতে পারে । খাবারের মধ্য দিয়ে কোনও খারাপ কেমিকাল শরীরে প্রবেশ করলে, পারকিনসন্স হতে পারে । পারকিনসন্সে চারটি উপসর্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যার মধ্যে রয়েছে স্লোনেস । যে কাজ আধ ঘণ্টায় করেছিলেন ব্যক্তি, পারকিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে সেই কাজ করতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে । এর পরে রয়েছে ট্রেমর । এক্ষেত্রে হাত-পা কাঁপতে পারে । হাঁটাচলায় অসুবিধা হতে পারে, কথা জড়িয়ে যেতে পারে । রোগী খুব স্লো চলবেন । কথা জড়িয়ে যেতে পারে, রিসেন্ট মেমোরি কমে যেতে পারে । সকালে কী করেছেন, রোগী তা ভুলে যেতে পারেন বিকালে । আর রয়েছে স্টিফনেস । খুব স্টিফ হয়ে পড়তে পারে বডি ।"

চিকিৎসা বলতে কী রয়েছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত পারকিনসন্স সেরে ওঠে না । ধীরে ধীরে সমস্যা বাড়তে থাকে। সাময়িক উন্নতির জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে এটা সম্পূর্ণ সেরে ওঠে না । ব্রেনে ডোপামেন নামে কেমিকেলের অভাবে ব্রেন ড্রাই হতে থাকে । এ জন্য বাইরে থেকে ডোপামিন দিতে হয় ওষুধের মাধ্যমে । খাওয়ার ওষুধ অর্থাৎ, ওরাল ডোপামেন কোনও রোগীর ক্ষেত্রে সারা জীবন কাজ করে না । কয়েক বছর পরে এফেক্ট করে না । ব্রেন পেসমেকারের মাধ্যমেও চিকিৎসা হয় । তৃতীয় উপায় পাম্পের মাধ্যমে ইনজেকশন আকারে ওষুধ দেওয়া ।" তিনি বলেন, "বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই-তে এই পাম্পের ব্যবহার শুরু হয়েছে । কলকাতা তথা পূর্বভারতে এই প্রথম হল । পশ্চিমের দেশগুলিতে পারকিনসন্স দেখা যেত । এখন এদেশে পারকিনসন্সের অনেক রোগীর দেখা মিলছে । আগামী 20 বছরে পারকিনসন্সে আক্রান্তদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে । কলকাতায় অন্ততপক্ষে 15 থেকে 20 হাজার পারকিনসন্সের রোগী আছেন । এর মধ্যে 10 হাজারের রোগ নির্ণয় হয়নি ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "পারকিনসন্সের প্রাথমিক চিকিৎসায় ওরাল মেডিসিন সব থেকে ভালো । এরপরে মেডিসিন ভালো কাজ করে না । আধ ঘন্টা অথবা, এক ঘন্টা কাজ করে । প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর ওষুধ নেওয়া সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে এই পাম্প ভালো কাজ করে । যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ ওষুধ শরীরে যেতে থাকবে এই পাম্পের মাধ্যমে ।"

কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর: 10 বছর ধরে পারকিনসন্সে আক্রান্ত তিনি । চিকিৎসা চলছিল । একসময়, ওষুধে সেভাবে আর কাজ না হওয়ায়, ব্রেন পেসমেকার বসানো হয়েছিল তাঁর । সমস্যা দেখা দেয় তারপরেও । স্থির হয়ে থাকতে পারতেন না । অনেকটা নাচের মতো মুভমেন্ট । হাত, পা শক্ত হয়ে যেত । একসময় কথাও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর । কলকাতার বাসিন্দা বছর ৪৫-এর এই রোগী একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার । অবশেষে, মল্লিকবাজারে বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসায় এখন কথা বলতে পারছেন তিনি । অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও কিছুটা মিটেছে । ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে রোগীর শরীরে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন চিকিৎসকরা । তার জেরেই এই সাফল্য পেলেন তাঁরা । পারকিনসন্সের চিকিৎসায় এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার পূর্ব ভারতে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা । হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার জানিয়েছেন, এই ওষুধ ইঞ্জেকশনের মতো পাম্পের মাধ্যমে দেওয়া হয় । চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এই পাম্পে সেট করে দেওয়া হয় কত সময় ধরে এবং কতটা পরিমাণে ওষুধের প্রয়োজন । এই পাম্প থেকে একটি টিউবের মাধ্যমে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয় রোগীর শরীরে । টিউবের মাথায় রয়েছে নিডল । এই নিডল পেটে সেট করে দেওয়া হয় ।

বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক পূর্বা বসু বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তিনি 10 বছর ধরে পারকিনসন্সে ভুগছেন । ব্রেন সার্জারিও হয়েছিল । একটি স্টিক নিয়ে তাঁকে হাঁটতে হত । একা হাঁটতে পারতেন না । সমস্যায় পড়তে হতো । রোগীর তখন ডিস্কাইনেশিয়াও দেখা দিয়েছিল। অর্থাৎ, স্থিরভাবে তিনি থাকতে পারতেন না । সব সময় নড়াচড়া করতেন । নাচের মতো মুভমেন্ট । মাঝেমধ্যে হাত-পা শক্ত হয়ে যেত, কথা বলতে পারতেন না ।" তাঁর কথায়, "এই রোগীকে আমরা দু' বছর ধরে দেখছি । শেষবার যখন আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তাঁর 15 দিন আগে তাঁর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । গলার স্বর কমে আসে, কথা জড়িয়ে যায় ৷ এটি পারকিনসন্স রোগের একটি উপসর্গ । ধীরে ধীরে কথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছিল । তখন অ্যাপোমরফিন ইনজেকশন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।"

শুনুন চিকিৎসক পূর্বা বসু ও হৃষিকেশ কুমারের বক্তব্য

এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য পাম্প ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন? পূর্বাদেবী বলেন, "রোগীর বয়স কম । তার কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । অসুখের লক্ষণগুলি আগের ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না । ব্রেন পেসমেকার কাজ করলেও তাঁর কথা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছিল না ৷ আমাদের কাছে একটাই উপায় ছিল, পাম্পের মাধ্যমে রোগীর কথা ফিরিয়ে আনা যায় কি না । মূলত রোগীর কথা ফিরিয়ে আনার জন্যই এই পাম্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি রোগীর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার উন্নতির বিষয়টিও নজরে ছিল ।" তিনি জানান, পাম্পের মাধ্যমে ওষুধের ট্রায়াল দেওয়ার পর দেখা যায় রোগীর কথা ফিরে আসছে । এরপরে যাতে সব সময় কথা বলতে পারেন তিনি তার জন্য পাম্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ রোগী যতক্ষণ কাজকর্মের মধ্যে থাকেন, ততক্ষণ পাম্পের ব্যবহার করা হচ্ছে । যতক্ষণ পাম্প চালু থাকে ততক্ষণ স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছেন ।" পূর্বাদেবীর বক্তব্য, "ডিস্কাইনেশিয়াও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে । শরীরে ওষুধের কম-বেশি মাত্রার উপর ডিস্কাইনেশিয়ার সমস্যা দেখা দেয় । পাম্পের মাধ্যমে ওষুধ দিলে এই সমস্যা থাকে না ।"

পূর্বাদেবীর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন হাসপাতালের অপর চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার । তিনি বলেন, "গত ছয় মাস ধরে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না । এর পরে, নতুন একটি ওষুধ দেওয়ার ভাবনা চিন্তা করলাম আমরা । কয়েক মাস আগ থেকে এই ওষুধটি এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে । এই ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় ।" তিনি আরও বলেন, "পাম্পের মাধ্যমে এই ওষুধ আমরা দেওয়া শুরু করি । এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে এখন কথা বলতে পারছেন তিনি । হাঁটাচলাতেও উন্নতি হয়েছে । পূর্ব ভারতে এই ওষুধ এবং এই পাম্পের ব্যবহার এই প্রথম । দক্ষিণ ভারতে কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছে ।" রোগী কেমন আছেন এখন? এই চিকিৎসক বলেন, "আগের থেকে এখন অনেক ভালো আছেন । ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন । তাঁর হাঁটাচলায় উন্নতি হয়েছে ।"

সারাজীবন কি এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "পারকিনসন্স হল পার্মানেন্ট ডিজ়অর্ডার । নার্ভ ডিজেনারেশন । এই অসুখ সম্পূর্ণ সেরে যায় না । নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় । পারকিনসন্স চিকিৎসায় নতুন কিছু না আসা পর্যন্ত এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার এই রোগীকে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হবে ।" তিনি বলেন, "5-10% ক্ষেত্রে কম বয়সিদের মধ্যে দেখা যায় । এক্ষেত্রে রোগীর পারকিনসন্স যে বয়সে ধরা পড়েছে, সেটা আনকমন । সাধারণত ৬০-এর বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে পারকিনসন্স দেখা দিতে পারে । কিন্তু, 5 থেকে 10 শতাংশ ক্ষেত্রে অল্পবয়সিরা আক্রান্ত হতে পারেন ।"

অল্পবয়সে কেন পারকিনসন্স হতে পারে? তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত কারণ জানা যায়নি ৷ তবে কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে । জেনেটিক ফ্যাক্টর হতে পারে । জিনের অস্বাভাবিকতার কারণেও হতে পারে । এই ফ্যাক্টর আচমকা কাজ করতে পারে অথবা বংশগতভাবে হতে পারে । এক্ষেত্রে ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে পারকিনসন্স কারও নাও থাকতে পারে । জেনেটিক ফ্যাক্টর ছাড়া এখন দূষণের কারণে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে ।" তিনি বলেন, "এমন কিছু পার্টিকেলস আছে, দূষণের মাধ্যমে যেগুলি ব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে । এর ফলে পারকিনসন্স হতে পারে । খাবারের মাধ্যমেও পারকিনসন্স হতে পারে । খাবারের মধ্য দিয়ে কোনও খারাপ কেমিকাল শরীরে প্রবেশ করলে, পারকিনসন্স হতে পারে । পারকিনসন্সে চারটি উপসর্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । যার মধ্যে রয়েছে স্লোনেস । যে কাজ আধ ঘণ্টায় করেছিলেন ব্যক্তি, পারকিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে সেই কাজ করতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে । এর পরে রয়েছে ট্রেমর । এক্ষেত্রে হাত-পা কাঁপতে পারে । হাঁটাচলায় অসুবিধা হতে পারে, কথা জড়িয়ে যেতে পারে । রোগী খুব স্লো চলবেন । কথা জড়িয়ে যেতে পারে, রিসেন্ট মেমোরি কমে যেতে পারে । সকালে কী করেছেন, রোগী তা ভুলে যেতে পারেন বিকালে । আর রয়েছে স্টিফনেস । খুব স্টিফ হয়ে পড়তে পারে বডি ।"

চিকিৎসা বলতে কী রয়েছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত পারকিনসন্স সেরে ওঠে না । ধীরে ধীরে সমস্যা বাড়তে থাকে। সাময়িক উন্নতির জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে এটা সম্পূর্ণ সেরে ওঠে না । ব্রেনে ডোপামেন নামে কেমিকেলের অভাবে ব্রেন ড্রাই হতে থাকে । এ জন্য বাইরে থেকে ডোপামিন দিতে হয় ওষুধের মাধ্যমে । খাওয়ার ওষুধ অর্থাৎ, ওরাল ডোপামেন কোনও রোগীর ক্ষেত্রে সারা জীবন কাজ করে না । কয়েক বছর পরে এফেক্ট করে না । ব্রেন পেসমেকারের মাধ্যমেও চিকিৎসা হয় । তৃতীয় উপায় পাম্পের মাধ্যমে ইনজেকশন আকারে ওষুধ দেওয়া ।" তিনি বলেন, "বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই-তে এই পাম্পের ব্যবহার শুরু হয়েছে । কলকাতা তথা পূর্বভারতে এই প্রথম হল । পশ্চিমের দেশগুলিতে পারকিনসন্স দেখা যেত । এখন এদেশে পারকিনসন্সের অনেক রোগীর দেখা মিলছে । আগামী 20 বছরে পারকিনসন্সে আক্রান্তদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে । কলকাতায় অন্ততপক্ষে 15 থেকে 20 হাজার পারকিনসন্সের রোগী আছেন । এর মধ্যে 10 হাজারের রোগ নির্ণয় হয়নি ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "পারকিনসন্সের প্রাথমিক চিকিৎসায় ওরাল মেডিসিন সব থেকে ভালো । এরপরে মেডিসিন ভালো কাজ করে না । আধ ঘন্টা অথবা, এক ঘন্টা কাজ করে । প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর ওষুধ নেওয়া সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে এই পাম্প ভালো কাজ করে । যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ ওষুধ শরীরে যেতে থাকবে এই পাম্পের মাধ্যমে ।"

Intro:EXCLUSIVE

কলকাতা, ১৫ সেপ্টেম্বর: ১০ বছর ধরে পারকিনসন্সে আক্রান্ত তিনি। চিকিৎসা চলছিল। একসময়, ওষুধে সেভাবে আর কাজ না হওয়ায়, ব্রেন পেসমেকার বসানো হয়েছিল তাঁর। সমস্যা দেখা দেয় তার পরেও। স্থির হয়ে থাকতে পারতেন না। অনেকটা নাচের মতো মুভমেন্ট। হাত, পা শক্ত হয়ে যেত। একসময় কথাও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। কলকাতার বাসিন্দা বছর ৪৫-এর এই রোগী একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার। অবশেষে, মল্লিকবাজারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালের চিকিৎসায় কথা ফিরে পেলেন তিনি। পারকিনসন্সের কারণে শারীরিক অন্যান্য সমস্যারও উন্নতি হল। ইনজেকশন আকারে ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে রোগীর শরীরে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকরা। তার জেরেই এই সাফল্য পেলেন তাঁরা। পারকিনসন্সের চিকিৎসায় এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার পূর্ব ভারতে এই প্রথম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।


Body:বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক পূর্বা বসু বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের কাছে আসেন, তখন তাঁর ১০ বছরের পারকিনসন্সের অসুস্থতা রয়েছে। ব্রেন সার্জারিও হয়েছিল। একটি স্টিক নিয়ে তাঁকে হাঁটতে হতো। একা হাঁটতে পারতেন না। যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হতো। এই রোগীর তখন ডিস্কাইনেশিয়াও দেখা দিয়েছিল। অর্থাৎ, স্থির ভাবে তিনি থাকতে পারতেন না। সব সময় নড়াচড়া করতেন। নাচের মতো এক মুভমেন্ট। মাঝেমধ্যে হাত-পা শক্ত হয়ে যেত, তিনি কথা বলতে পারতেন না।" তিনি বলেন, "এই রোগীকে আমরা দু' বছর ধরে দেখছি। শেষবার যখন আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তার ১৫ দিন আগে এই রোগীর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গলার স্বর কমে আসে, কথা জড়িয়ে যায় , এটা পারকিনসন্স রোগের একটি উপসর্গ। এরকম হতে হতে কথা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন অ্যাপোমরফিন ইনজেকশন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।" ইনজেকশন আকারের এই ওষুধ ব্যবহারের আগে রোগীর সম্মতি নেওয়া হয়। এর পরে ইনজেকশন প্রয়োগ করে দেখা হয় কাজ করছে কি না। কাজ করলে, কতটা করছে। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে কি না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে তা কতটা হচ্ছে। কেমন মাত্রায় কাজ হচ্ছে ওষুধের। এমন বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য ইনজেকশন আকারের এই ওষুধের ট্রায়াল দেওয়া হয় এই রোগীকে‌। এর পরে গত ২৬ অগাস্ট পাম্প সেট করে দেওয়া হয় রোগীর পেটে।

এই ওষুধ ব্যবহারের জন্য এই পাম্প ব্যবহারের বিষয়ে চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন? চিকিৎসক পূর্বা বসু বলেন, "কারণ, রোগীর বয়স কম। রোগী খুব ইন্টেলিজেন্ট। তার কাজকর্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এদিকে তাঁর অসুখের লক্ষণগুলি আগের ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যাচ্ছিল না। ব্রেন পেসমেকার কাজ করলেও রোগী কথা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছিল না।
রোগীর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে একটাই উপায় ছিল, এই পাম্পের মাধ্যমে রোগীর কথা ফিরিয়ে আনা যায় কি না।" তিনি বলেন, "মূলত রোগীর কথা ফিরিয়ে আনার জন্যই এই পাম্পের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এর পাশাপাশি রোগীর শারীরিক অন্যান্য সমস্যার উন্নতির বিষয়টিও ছিল।
ইনজেকশন আকারে ওষুধের ট্রায়ালে দেখা গেল রোগীর কথা ফিরে আসছে। এরপরে পাম্প ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে সব সময় কথা বলতে পারেন রোগী।" এই রোগী যতক্ষণ অ্যাকটিভ থাকেন অর্থাৎ কাজকর্মের মধ্যে থাকেন, ততক্ষণ পাম্পের ব্যবহার করা হচ্ছে। যতক্ষণ পাম্প চালু থাকে ততক্ষণ স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেন রোগী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন , এই পাম্প ব্যবহারের ফলে শুধুমাত্র যে কথা বলতে পারছেন এই রোগী তা নয়, তার ওভারঅল অন্যান্য সমস্যারও উন্নতি হয়েছে। রোগীকে তাঁরা একটি কোয়ালিটি লাইফ দিতে পেরেছেন। চিকিৎসক পূর্বা বসু বলেন, "ডিস্কাইনেশিয়াও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। শরীরে ওষুধের কমবেশি প্রবেশের উপর ডিস্কাইনেশিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। পাম্পের মাধ্যমে এই সমস্যা থাকে না। কারণ, পাম্পের মাধ্যমে ইনজেকশন আকারের ওষুধ প্রয়োজনমতো ধারাবাহিকভাবে শরীরে প্রবেশ করছে।"

বেসরকারি ওই হাসপাতালের চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "বহু বছর ধরে এই রোগীর চিকিৎসা চলছে। এই রোগীর বয়স এখন ৪৫ বছর। ১০ বছর ধরে তিনি পারকিন্সন্সে আক্রান্ত। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ ছিল। বহু ওষুধ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। ব্রেন সার্জারিও হয়েছে, পেসমেকার বসানোর জন্য। প্রতিটি চিকিৎসায় প্রাথমিক স্তরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরবর্তী সময়ে সেভাবে দেখা যাচ্ছিল না। এর পরে অবস্থার উন্নতি আর হচ্ছিল না। গত ছয় মাস ধরে এই রোগী কথা বলতে পারছিলেন না। এর পরে, নতুন একটি ওষুধ দেওয়ার ভাবনা চিন্তা করলাম আমরা। কয়েক মাস আগে এই ওষুধটি এদেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইনজেকশন আকারের এই ওষুধ পাম্পের মাধ্যমে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।" এই চিকিৎসক বলেন, "পাম্পের মাধ্যমে এই ওষুধ আমরা দেওয়া শুরু করি। এই ওষুধ ব্যবহারের ফলে এখন কথা বলতে পারছেন এই রোগী। তাঁর হাঁটা-চলাতেও উন্নতি হয়েছে। এটা দেখে আমাদের ভালো লাগছে যে, এই রোগীর জীবনের মান উন্নত হয়েছে এই ওষুধ ব‍্যবহারের ফলে। পূর্ব ভারতে এই ওষুধ এবং এই পাম্পের ব্যবহার এই প্রথম। দক্ষিণ ভারতে কয়েক মাস আগে শুরু হয়েছে।" রোগী কেমন আছেন এখন? এই চিকিৎসক বলেন, "আগের থেকে এখন অনেক ভালো আছেন। ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন। এই জন্য অত্যন্ত খুশি এই রোগী। তাঁর হাঁটাচলায় উন্নতি হয়েছে।" ইনজেকশন আকারের এই ওষুধ পাম্পের মধ্যে দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এই পাম্পে সেট করে দেওয়া হয় কত সময় ধরে এবং কতটা পরিমাণে ওষুধের প্রয়োজন। এই পাম্প থেকে একটি টিউবের মাধ্যমে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া রোগীর শরীরে। টিউবের মাথায় রয়েছে নিডল। এই নিডল পেটে সেট করে দেওয়া হয়।

সারাজীবন কি এই ওষুধ ব্যবহার করতে হবে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "দুর্ভাগ্যের বিষয়, পারকিনসন্স হল পার্মানেন্ট ডিজঅর্ডার। নার্ভ ডিজেনারেশন। এই অসুখ সম্পূর্ণ সেরে যায় না। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। পারকিনসন্স চিকিৎসায় নতুন কিছু না আসা পর্যন্ত এই ওষুধ এবং পাম্পের ব্যবহার এই রোগীকে সারাজীবন করে যেতে হবে।" তিনি বলেন, "পারকিনসন্স-এ অনেক ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। হাঁটাচলায় অসুবিধা হতে পারে। হাত কাঁপতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। কথা বলার বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পারকিনসন্স সাধারণত বেশি বয়সের অসুখ। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে অর্থাৎ, ৫-১০% ক্ষেত্রে কম বয়সিদের মধ্যে দেখা যায়। এটা কঠিন বিষয়। কম বয়সি কেউ আক্রান্ত হলে গোটা পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।" এই রোগীর বয়স এখন ৪৫ বছর। ১০ বছর আগে তাঁর পারকিনসন্স ধরা পড়েছে। এত কম বয়সে পারকিনসন্স দেখা দেয়? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "এত কম বয়সে পারকিনসন্স ধরা পড়েছে, এটা আনকমন। সাধারণত ৬০-এর বেশি বয়সিদের ক্ষেত্রে পারকিনসন্স দেখা দিতে পারে। কিন্তু, ৫ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে কম বয়সিরা আক্রান্ত হতে পারে। ২০, ২৫, ৪৫ বছর বয়সি পারকিনসন্স আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করছি। এটা খুব দুঃখের বিষয়। এত কম বয়সি রোগীদের পরিবারের কাছে কঠিন বিষয় হয়ে ওঠে।"

কম বয়সে কেন পারকিনসন্স হতে পারে? তিনি বলেন, "এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত এর সম্পূর্ণ কারণ জানে না। কিন্তু, কম বয়সে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে। জেনেটিক ফ্যাক্টর হতে পারে। জিনের অস্বাভাবিকতার কারণে এমন হতে পারে। এই ফ্যাক্টর আচমকা কাজ করতে পারে অথবা, বংশগত ভাবে হতে পারে। এক্ষেত্রে ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে পারকিনসন্স কারও নাও থাকতে পারে। জেনেটিক ফ্যাক্টর ছাড়া এখন দূষণের কারণে পারকিনসন্সে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।" তিনি বলেন, "এমন কিছু পার্টিকেলস আছে, দূষণের মাধ্যমে যেগুলি ব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে পারকিনসন্স হতে পারে। খাবারের মাধ্যমেও পারকিনসন্স হতে পারে। খাবারের মধ্য দিয়ে কোনও খারাপ কেমিক্যাল শরীরে প্রবেশ করলে, পারকিনসন্স হতে পারে।" এই চিকিৎসক বলেন, "পারকিনসন্সে কমবয়সিদের আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে জেনেটিক অথবা দূষণ, এর যে কোনও কারণ থাকতে পারে।" পারকিনসনসে চারটি উপসর্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "যার মধ্যে রয়েছে স্লোনেস। যে কাজ আধ ঘণ্টায় করেছিলেন, পারকিনসন্সে আক্রান্ত হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে সেই কাজ করতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। এর পরে রয়েছে ট্রেমার। এক্ষেত্রে হাত কাঁপতে পারে। হাঁটাচলায় অসুবিধা হতে পারে, কথা জড়িয়ে যেতে পারে। রোগী খুব স্লো চলছে। কথা জড়িয়ে যেতে পারে, রিসেন্ট মেমোরি কমে যেতে পারে। সকালে কী করেছেন, রোগী তা ভুলে যেতে পারেন বিকালে। আর রয়েছে স্টিফনেস। খুব স্টিফনেস হয়ে পড়তে পারে বডি।"


Conclusion:চিকিৎসা বলতে কী রয়েছে? চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমার বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত পারকিনসন্স সেরে ওঠে না। ধীরে ধীরে সমস্যা বাড়তে থাকে। সাময়িক উন্নতির জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটা সম্পূর্ণ সেরে ওঠে না।" তিনি বলেন, "ব্রেনে ডোপামেন নামের কেমিকেলের অভাবে ব্রেন ড্রাই হতে থাকে। এই জন্য বাইরে থেকে ডোপামিন দিতে হয় অর্থাৎ, ওষুধের মাধ্যমে। খাওয়ার ওষুধ অর্থাৎ, ওরাল ডোপামেন কোনও রোগীর ক্ষেত্রে সারা জীবন কাজ করে না। কয়েক বছর পরে এফেক্ট করে না। ব্রেন পেসমেকারের মাধ্যমেও চিকিৎসা হয়। এবং, তৃতীয় যে উপায় আছে সেটি হচ্ছে এই পাম্পের মাধ্যমে ইনজেকশন আকারে ওষুধ দেওয়া।" বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, মুম্বাই-তে এই পাম্পের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কলকাতা তথা পূর্বভারতে এই প্রথম হল। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "পশ্চিমের দেশগুলিতে পারকিনসন্স দেখা যেত। এখন এদেশে পারকিনসন্সের অনেক রোগীর দেখা মিলছে। মানুষের আয়ু বেড়ে গিয়েছে। এই কারণে বয়স্কদের এই অসুখ দেখা দিচ্ছে। দূষণও বেড়ে চলেছে।" আগামী ২০ বছরে পারকিনসন্সে আক্রান্তদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, "কলকাতায় অন্ততপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার পারকিনসন্সের রোগী আছেন। এর মধ্যে ১০ হাজারের রোগনির্ণয় হয়নি।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "পারকিনসন্সের প্রাথমিক চিকিৎসায় ওরাল মেডিসিন সব থেকে ভালো। এর পরে মেডিসিন ভালো কাজ করে না। আধ ঘন্টা অথবা, এক ঘন্টা কাজ করে। প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর ওষুধ নেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এই পাম্প ভালো কাজ করে। যতক্ষণ প্রয়োজন ততক্ষণ ওষুধ শরীরে যেতে থাকবে এই পাম্পের মাধ্যমে।"
_______



বাইট:
wb_kol_01a_parkinsons_speech_pump_bite_7203421 এবং,
wb_kol_01b_parkinsons_speech_pump_bite_7203421
চিকিৎসক হৃষিকেশ কুমারের বক্তব্য।

wb_kol_01c_parkinsons_speech_pump_bite_7203421
চিকিৎসক পূর্বা বসুর বক্তব্য।

WRAP-এ ছবি, ভিস‍্যুয়াল


ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.