কলকাতা, 22 অক্টোবর : "মহুয়া মৈত্র ষড়যন্ত্রের শিকার" । নীরবতা ভেঙে এই ভাষাতেই দলীয় সাংসদের পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে কলকাতায় এদিন ফিরহাদ হাকিম বলেন,"যেহেতু মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে বেশি ভোকাল (সরব), তাই এরকম করা হচ্ছে ।" মূলত এখানেও প্রতিহিংসার রাজনীতির তত্ত্বই তুলে এনেছেন এই তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ৷ তবে এটা যে তাঁর ব্যক্তিগত মত তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফিরহাদ ৷ জানিয়েছেন, এটা দলগত মত নয়, কারণ তিনি দলের মুখপাত্র নন, বরং এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত।
রবিবার রাজ্যের প্রথম সারির এক সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। যেখানে তিনি খোলাখুলি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মহুয়া মৈত্রের পক্ষে । এদিন ফিরহাদ হাকিম বলেন, "তৃণমূলের বক্তব্য কী আমি জানি না। কারণ আমি তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র নই। আমার ব্যক্তিগত মত হল মহুয়া এমন কিছু প্রশ্ন করে যা মোদি সরকারকে বিপাকে ফেলে । তাই মহুয়াকে টাইট দেওয়া, সেটা ওদের একটা পরিকল্পনা। আমার নিজের মনে হয় সবটাই তদন্ত হলে সামনে আসবে। মহুয়া নিজেও বিষয়টি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে । ও যদি ভয় পেতো তাহলে চ্যালেঞ্জ করত না । মহুয়া নিজে যথেষ্ট সাবলীল এই বিষয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। আমি মনে করি যে পদক্ষেপ তাঁর নেওয়ার প্রয়োজন অবশ্যই তিনি নেবেন ।"
একই সঙ্গে রাজ্যের পুরমন্ত্রীর বক্তব্য, "আমি মনে করি, মহুয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মহুয়া যেহেতু ভোকাল বেশি তাই এ রকম করা হচ্ছে । মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বলেই তাঁকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে ।" বিজেপিকে আক্রমণ করে ফিরহাদ এদিন পালটা বলেন,"প্রথম বার নরেন্দ্র মোদির ভোট প্রচারের জন্য প্লেন, হেলিকপ্টার কারা দিয়েছিল ? বিজেপি সাংসদের আদানিকে বাঁচানোর ব্যাপারে এত উত্সাহ কেন ? নিশ্চিত ভাবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। "
প্রসঙ্গত, একটি শিল্পগোষ্ঠীকে সুবিধা পাইয়ে দিতে তাদের থেকে সুবিধা নিয়ে অর্থের বিনিময়ে সংসদে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ৷ গুরুতর এই অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে । স্পিকার এই অভিযোগের তদন্তভার লোকসভার এথিক্স কমিটির হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ ওই বিজেপি সাংসদের অভিযোগ ছিল, অর্থের বিনিময়ে আইনসভায় প্রশ্ন তুলে মহুয়া স্বাধিকার ভঙ্গ করেছেন এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রেও লিপ্ত হয়েছেন ।
আরও পড়ুন: সংসদীয় কমিটির সিদ্ধান্ত দেখেই মহুয়ার ক্ষেত্রে নির্ণয়, বার্তা ডেরেকের
জানা গিয়েছে, জয় অনন্ত দেহাদ্রাই নামে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী মহুয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে প্রথমে চিঠি লিখেছিলেন সিবিআইকে ৷ সেই চিঠিকে হাতিয়ার করেই মহুয়ার বিরুদ্ধে সরব হন নিশিকান্ত দুবে ৷ আরও জানা গিয়েছে, এই আইনজীবীর সঙ্গে নাকি বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল মহুয়ার, সম্প্পতি তাঁদের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে। এখানেই শেষ নয় শনিবার মহুয়ার বিরুদ্ধে লোকপালেও অভিযোগ করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে ।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহুয়া মৈত্র ৷ তাঁর দাবি আদানি গোষ্ঠীকে নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন বলেই চক্রান্ত করা হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে ৷ তিনি বিষয়টি নিয়ে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছেন, যা দিল্লি হাইকোর্টে বিচারাধীন । গত প্রায় এক সপ্তাহের এই ঘটনাপর্বে প্রথম দিকে তৃণমূলের তরফে নীরবতা বজায় রাখা হয়েছিল ৷ দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও জানিয়েছিলেন, এই নিয়ে দলের কিছু বলার নেই, যা বলার মহুয়া বলবেন ৷ তবে রবিবার সকালেই আবার তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান,মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তসাপেক্ষ। আগে তদন্ত হোক, তারপরেই দল উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে ৷ আর এসবের থেকে কিছুটা ভিন্ন অবস্থান নিয়ে সরাসরি মহুয়ার পাশে এদিন দাঁড়ালেন ফিরহাদ হাকিম ৷ এখন দেখার দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব এই ইস্যুতে কী অবস্থান নেয় ৷