মেমারি, 19 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ৷ এর মধ্যে আছেন শেখ নাসিম ৷ তিনি পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা ৷ তবে তাঁর গ্রেফতারির ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা ৷ এই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক তরুণ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছেন ৷ এ নিয়ে তাঁর জন্য এতদিন গর্ব বোধ করতেন এলাকার মানুষ ৷
গ্রামবাসীর মতে ছোট থেকে শান্ত স্বভাবের নাসিম ৷ কোনওদিন কারও সঙ্গে ঝগড়া-ঝামেলায় জড়াননি তিনি ৷ গ্রামের মানুষদের সম্মান করতেন ৷ এছাড়া পরিবারটির আর্থিক অবস্থা ভালো না-হলেও তাঁরা এলাকায় উচ্চশিক্ষিত বলেই পরিচিত ৷ তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করছিলেন ৷ জুলাই মাসে তাঁর চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয় ৷ তারপরেও তিনি হস্টেলে থাকছিলেন ৷
গ্রামবাসী নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, "নাসিমের পরিবারের অবস্থা মোটামুটি ৷ তাঁদের একটি দোকান ছিল ৷ কিন্তু ছেলেকে পড়াতে গিয়ে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় ৷ প্রতিমাসেই দেখি ধারদেনা করে ছেলেকে টাকা পাঠান ওঁর বাবা ৷" তিনি আরও জানালেন, নাসিমের মা অসুস্থ ৷ তাঁকে প্রতি বছর চেন্নাইতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হয় ৷ তবে নাসিমদের পরিবারের কাছে পড়াশোনা গুরুত্বপূর্ণ ৷ সন্তানদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন নাসিমের বাবা ।
আরও পড়ুন: যাদবপুর কাণ্ডে গ্রেফতার আরও 3, ধৃত বেড়ে 12
নাসিম সম্পর্কে নুর ইসলাম বলেন, "ছেলে হিসেবে নাসিম খুব ভালো ৷ তাঁকে রাজনীতি করতেও দেখিনি ৷ যাদবপুরে কী ঘটেছে, সেটা তো জানি না ৷ পুলিশ তদন্ত করছে। তবে গ্রামবাসী হিসেবে চাইব যদি সে দোষী না হয় তাহলে যেন ছাড়া পায় ৷"
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির প্রত্যন্ত বারারী গ্রামের বাসিন্দা শেখ নাসিম ৷ তাঁর বাবা মহসিন আক্তার কৃষক ৷ এছাড়া গ্রামে তাঁদের একটা দোকান ছিল ৷ মাধ্যমিক পাশ করে খড়গপুর আল আমিন মিশনে ভরতি হয় নাসিম ৷ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করতে যান গ্রামের সবার গর্ব নাসিম ৷
জানা গিয়েছে, 9 অগস্ট ঘটনার দিন তিনি যাদবপুরেই ছিলেন ৷ 10 অগস্ট সকালে তাঁর দাদুর মৃত্যু হয় ৷ সেই খবর পেয়ে তিনি মেমারির গ্রামে ফিরে আসেন ৷ এরপর বৃহস্পতিবার হস্টেল সুপারের ফোন পেয়ে তিনি যাদবপুরে যান ৷ সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ গ্রেফতার করে ৷
আরও পড়ুন: যাদবপুরে সিসিটিভি বসানো ঘিরে জারি তরজা, 'দেখছি-দেখবো' বক্তব্যেই কর্তৃপক্ষ
স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য শেখ বসিরউদ্দিন ইসলাম বলেন, "নাসিম আমাদের গ্রামের গর্ব ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ৷ একটা দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে ৷ তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ও এতে জড়িয়ে নেই ৷" তিনি আরও জানান, যাদবপুরে ছাত্রের দুর্ঘটনার পরদিন অর্থাৎ 10 অগস্ট তাঁর দাদুর মৃত্যু হয় ৷ তাই সেদিন বাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হন নাসিম ৷ তবে ছেলে হিসেবে খুব ভালো ৷ তিনি বলেন, "নাসিমকে আমরা যতটা চিনি, তাতে মনে হচ্ছে ভুলবশত পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে ৷ ও নির্দোষ ৷"
নাসিমের বোন সাহেরি আখতার জানায়, তার দাদা খুব ভালো ছাত্র ৷ তিনি বলেন, "গত পরশু রাতে হস্টেলের সুপার দাদাকে যেতে বলে ৷ গতকাল সকালে দাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায় ৷" বোনের অভিযোগ, দাদা নাসিম নির্দোষ ৷ তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে ৷ তিনিও জানালেন, 10 অগস্ট সকালে দাদুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন ৷ মা এমনিতেই অসুস্থ ৷ এরপর দাদার খবরে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৷
আরও পড়ুন: ‘মমতা-মনিটরিং’-এ যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর তদন্ত হলে ফল হবে শূন্য, তোপ শুভেন্দু অধিকারীর
নাসিমের মামা ইজাজুল হক সাহানারও বিশ্বাস নাসিম কোনও অপরাধ করেনি ৷ তিনি বলেন, "নাসিম কোনওভাবে দোষী নয় ৷ তাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ সে খুবই শান্ত স্বভাবের ভালো ছেলে ৷ ও নির্দোষ ৷ পুলিশ ওকে ছেড়ে দিক ৷ আমরা সেটা চাই ৷"