কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: "বাংলার আবার এপার ওপার কী ? বাংলা একটাই ৷" এই কথা আজ থেকে প্রায় বহু যুগ আগে বলেছিলেন কিংবদন্তি চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক । সেই কথাই আরও একবার প্রমাণিত হল 46তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় । এ বছর থিম কান্ট্রি না হয়েও সবার উপরে যেন বাংলাদেশের স্টল । তাদের স্টল থেকে প্রায় 1 কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে এ বছরের বইমেলায় । সর্বক্ষণ স্টলে পাঠকদের ভিড় ।
বইমেলায় (Kolkata Book Fair 2023) ঢুকেই সবার চোখ বাংলাদেশের দিকে । সেখান থেকে পছন্দের সাহিত্যিকের বই সংগ্রহ করে নিয়েছেন অনেকেই । অনেকেরই হাতে উঠেছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইনের বই । নব্য প্রজন্মের এই সাহিত্যিকের কলম আজও বেঁধে রেখেছে দুই বাংলার মানুষকে । তাঁর প্রতি এপারের মানুষের ভালোবাসা চাক্ষুস করতে এ বারও বইমেলায় দেখা মিলল সাদাতের (Sadat Hossain Interview)৷ ইটিভি ভারতের সঙ্গে খোলামেলা গল্পে মাতলেন সাহিত্যিক ।
নিজেকে বারবার স্পন্টেনিয়াস লেখক বলে থাকেন সাদাত হোসাইন ৷ বলেন, যা জীবন দিয়ে শিখেছেন তা-ই চলে আসে কলমের আগায় ৷ সেই কারণেই তাঁর লেখা এত টানে পাঠকদের ৷ আরশিনগর, মানবজনম, আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই, নির্বাসন - এমন বহু লেখা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছে দুই বাংলার পাঠকের কাছে ৷ তবে এই মানুষটিই ছেলেবেলায় নিজের নাম সংবাদপত্রে তোলার স্বপ্ন দেখতেন ৷
তাঁর কথায়, "ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল সংবাদপত্রে নাম তোলার । তবে ইচ্ছা থাকলেও উপায় কী ?" সংবাদপত্র জোগাড় করে সেখান থেকেই অক্ষর কেটে কেটে তিনি লিখেছিলেন সংবাদমাধ্যমের অক্ষরে 'সাদাত হোসাইন'। তারপর কবিতা-গল্প লিখে সেগুলো পড়িয়ে ছিলেন স্কুলের বন্ধুদের । সেই থেকে আজ, লেখার প্রতি ভালোবাসায় এখন তিনি জনপ্রিয়তার শিখরে । হাসিমুখে সকাল-বিকেল পাঠকদের আবদার মিটিয়ে যাচ্ছেন ।
আরও পড়ুন: সার্থক বাঙালির বই প্রেম, বইমেলায় 25 কোটির রেকর্ড বিক্রি
বছরে সাদাত একবারই আসেন কলকাতায় । তবে বইমেলা ছাড়া তাঁর কিছুই দেখা হয়নি । তাঁর কথায়, "বহু শহর ঘুরেছি ৷ তবে যদি ঢাকার পর যদি কোনও শহর ভালো লাগে তবে সেটা কলকাতা । 2017 সালে যখন আমি প্রথম এই শহরে আসি, তখন বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছিলাম । তবে এখন বইমেলার কারণে একবারই আমার আসা হয় এখানে । কিন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোথাও ঘোরা হয় না ।"
শুধু ওপার বাংলা নয়, এ পারেও এই তরুণ সাহিত্যিকের লেখার প্রেমে পড়েছেন বহু পাঠক । তাই বইমেলায় বাংলাদেশের এই খ্যাতনামা সাহিত্যিককে দেখতে পেয়েই মুঠোফোনে আবদ্ধ করে রেখেছেন অনেকে ৷ কেউ আবার পছন্দের বইয়ে করেছেন সই সংগ্রহ । তবে তাতে কোনও ক্লান্তি নেই সাদাতের ৷
সাহিত্যিকের ভাষায়, "একজন লেখকের কাছে তাঁর লেখা এতটাই ভালোবাসার জিনিস যে, কেউ যদি সেটা গ্রহণ করেন, তখন আর তাঁকে পরিশ্রম বলে মনে হয় না, বরং আনন্দ লাগে । আমি দেখছি এই শহরে বহু পাঠক দূর-দূরান্ত থেকে বইমেলায় এসে আমার বই সংগ্রহ করে গিয়েছেন । এমনকী সেটা পড়েও শেষ করে ফেলেছেন । আজ এসেছেন তার দ্বিতীয় খণ্ড নিতে । পাঠকরা আমায় ভালোবেসে বই কিনছেন । আমি না হয় ভালোবেসে হাসিমুখে একটা ছবিই তুললাম । ক্ষতি কী ?"
এ বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় সাদাত হোসাইনের পুরোনোর পাশাপাশি নতুন দুটি বইও এসেছিল । একটি হল 'শঙ্খচূড়' ও দ্বিতীয়টি 'সে এসে বসুক পাশে'। তবে এই দুটোরই এমন চাহিদা যে, যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রকাশকেরা । এমনকী শেষ শুনেও ফিরে যেতে হয়েছে বহু পাঠককে । পছন্দের লেখককে সামনে পেয়েও তাই সই করানো বাকিই থেকে গিয়েছে অনেকের । তবে লেখক জানান, "এই শহর আমায় ভালোবাসা দিয়েছে । সব কিছুকে উপেক্ষা করা যায় ভালোবাসা ছাড়া । তাই যতবার তাঁরা আমায় ডাকবেন আমি বারবার ডাকে সাড়া দেব ।"