কলকাতা, 18 অক্টোবর : দুর্গোৎসব শুরুর আগে শেষ রবিবার আজ । অন্য বছর এই দিনটিতে কলকাতার সব মার্কেটগুলিতেই পা ফেলার জায়গা থাকে না । শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ভিড় ঠেলেই এগিয়ে চলে মানুষ । কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতিতে এবার বিক্রিবাট্টা আগে থেকেই ছিল না । তার ছায়া পড়ল শেষ রবিবারেও । হাতিবাগান মার্কেট হোক বা গড়িয়াহাট মার্কেট, পুজোর আগের শেষ রবিবারের থিকথিকে ভিড়ের চেনা ছবিটা দেখা গেল না আজ ।
কোরোনা পরিস্থিতিতে এবার আর গত বছরের মতো ব্যবসার মুখ দেখতে পাননি ব্যবসায়ীরা । আশা ছিল, পুজো এগিয়ে এলে হয়তো ক্রেতাদের দেখা মিলবে । গত সপ্তাহে শুক্র, শনি ও রবিবার সেই আশা কিছুটা পূরণ হলেও তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ক্রেতাদের পরিমাণ কমতে থাকে । বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা আশায় ছিলেন ৷ তাঁরা ভেবেছিলেন, পুজোর আগের শেষ শনি ও রবিবার হয়তো চিত্রটা একটু বদলাবে । কিন্তু, গতকাল পুজোর আগের শেষ শনিবারও কার্যত খালিই ছিল বাজার । আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেল অন্য বছরের মতো ভিড় নেই সেখানে । এমনকী খান্নার হাটও প্রায় ফাঁকা বলা চলে । হাতিবাগান মার্কেটেরও একই অবস্থা । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটি করতে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়লেও তা বছরের অফ-সিজ়নের সময়কার মতোই । পুজোর আগের শেষ রবিবারের মার্কেটের চেনা ছবিটা দেখা গেল না কলকাতার কোনও জায়গাতেই । পুজোর আগের শেষ রবিবারের ব্যবসা নিয়ে হাতিবাগান মার্কেটে কুর্তির পসার নিয়ে বসা ব্যবসায়ী সন্ন্যাসী মণ্ডল বলেন, " অবস্থা খুবই খারাপ । গতকাল আশা করেছিলাম, পুজোর আগের শেষ শনিবার আমাদের বাজার হয় । কিন্তু এবছর একদম খারাপ । রবিবারের বাজার সকাল 8টায় দোকান খুলে এখনও কোনও গ্রাহকের দেখা পাইনি যে বউনি করব । আজ আর মানুষের ভিড় হবে বলে আশা নেই । "
ওই মার্কেটেরই আর এক ব্যাগ বিক্রেতা ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন, " বাজারের অবস্থা খুব খারাপ । সকাল 8টা থেকে দোকান খুলে এখনও বউনি করতে পারিনি । " এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী গোপাল সরকার বলেন, " অন্য বছরের মতো পুজোর বাজার এবছর একেবারেই নেই । গতবার বিকেলের দিকে মোটামুটি বিক্রি হয়েছিল ।" রঞ্জিত দাস বলেন, " কোরোনার জন্য খুব অবস্থা খারাপ । পুরো ফাঁকা । গতকাল তাও ভিড় ছিল । তবে গতবছরের থেকে অনেক পার্থক্য । অর্ধেকের কম বেচাকেনা হচ্ছে এবার । গত বছর পুজোতে এই সময়ে আমরা 28-30 হাজার টাকার দোকানদারি করেছি । এবছর 10 হাজারও হচ্ছে না । " মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা পাঁচু পাত্র বলেন, " কিচ্ছু নেই । এবারে আমরা পুরো শেষ । "
হাতিবাগান মার্কেটের অধিকাংশ ফুটপাথের বিক্রেতারাই ক্রেতার মুখ দেখতে পাচ্ছেন না । তবে অন্য বছরের মতো না হলে অনেকেই কেনাকাটি করতে হাজির হয়েছেন মার্কেটে । যেমন - জোড়াবাগান থেকে হাতিবাগান মার্কেটে আসা নবনিতা প্রামাণিক বলেন, " টুকিটাকি কিনতে বেরিয়েছি । ইয়াররিংস, জুয়েলারি এইসব । কোরোনার ভয় তো আছেই । তাও বাঙালির পুজো মানেই তো আলাদা ব্যাপার না । " বেলঘরিয়া থেকে বাবা ও বোনের সঙ্গে আসা চন্দ্রিমা মজুমদার বলেন, " আজকে জিনস, টপ কিনতে এসেছি । আমি যেখানে থাকি সেখানে কিছুই নেই । তাই লাস্ট মোমেন্টে এখানে আসতে হল । "
আবার অনেকেই এসেছেন প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে । যেমন, শ্যামবাজারের শুভশ্রী বসাক । তিনি বলেন, " পুজোর জিনিস নয়, সব প্রয়োজনের জিনিস কিনতে বেরিয়েছি । মাস্ক কিনতে বেরিয়েছি । রবিবার ছাড়া সময় হয় না । পুজোর শপিং এবার হবে না । পুজোয় এবার বেরোনোর নেই । " গড়িয়াহাট মার্কেটেও দেখা গেল একই ছবি । নেই পুজোর আগের শেষ রবিবারের ভিড় । গড়িয়াহাটের ফুটপাথের এক ব্যবসায়ী বাপি ঘোষ বলেন, "আগের বছর পুজোর আগের রবিবার ও আজকের মধ্যে 75 শতাংশ পার্থক্য রয়েছে । আমাদের জুয়েলারি লাইনে ক্রেতা খুবই কম । আগের তুলনায় 40 শতাংশ বিক্রি হচ্ছে । " জামাকাপড় বিক্রেতা সমর ঘোষ বলেন , " কিছুই নেই । ট্রেন চলছে না, কিছু চলছে না । কাস্টোমার নেই । যা হচ্ছে টুকটাক । এ বাজার হওয়ার থেকে না হওয়া ভালো ৷ অফ-সিজ়নের মতোই । আহামরি কিছু নয় । " গড়িয়াহাটের এক শাড়ি ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন ধর বলেন, "খুব খারাপ বাজার । সকাল থেকে দোকান খুলেছি । এখনও পর্যন্ত মাত্র দু-পিস মাল বিক্রি হয়েছে । এক সপ্তাহ আগে শুক্র, শনি, রবি খারাপ ছিল না । আমাদের টুকটাক বিক্রি হয়েছে । কিন্তু, বাজারটা তারপর আস্তে আস্তে নেমে গেছে । বাজার খুব খারাপ হয়ে গেছে । শুধু আমার একার নয়, প্রতিটা দোকানদারেরই খারাপ বাজার । " প্রায় একই কথা গড়িয়াহাটের প্রতিটা ব্যবসায়ীর মুখে ।
তবে ভিড় যে মার্কেটে একদম নেই তা বলা ভুল । কোরোনা পরিস্থিতিতেও শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে মার্কেটে এসে হাজির হয়েছেন অনেকেই । কোরোনা সংক্রমণ নিয়ে সচেতন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই । সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব না হলেও মুখে মাস্ক ও ব্যাগে স্যানিটাইজ়ার নিয়ে পুজোর শপিংয়ে মেতেছেন তাঁরা । পিকনিক গার্ডেন থেকে মা ও মাসির হাত ধরে গড়িয়াহাটে এসেছে সায়ন্তিকা মজুমদার । জুতো ও ঠাকুরের শাড়ি কিনে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছে সে । কোরোনার সময়ে ভয় লাগছে না? প্রশ্নে সায়ন্তিকা বলে, " ভয় তো লাগছে কোরোনা হয়ে যেতে পারে । মাস্ক তো পরেছি । " অনলাইনে শপিংয়ের পর হাওড়া থেকে আজ মা-বাবার সঙ্গে গড়িয়াহাটে এসেছেন অয়ন্তিকা ভট্টাচার্য । সে বলে, "প্রোটেকশন নেওয়া আছে । মাস্ক আর স্যানিটাইজ়ার তো আছেই । মার্কেটে না এলে পুজোটা ঠিক হয় না । " সোনারপুর থেকে আসা সাথী সরকার বলেন, "ব্যাগে স্যানিটাইজ়ার আছে । কিছু করার নেই । পুজোর মাত্র আর তিনদিন বাকি । এই তিনদিনে যতটুকু হয় । " তবে, সবাই যে সচেতন তাও নয় । অনেকেই মাস্ক পরছেন না ৷ আবার মাস্ক এমনভাবে পরছেন তাতে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না ৷