কলকাতা, 11 নভেম্বর : বুলবুলের তাণ্ডবে রীতিমতো ছন্নছাড়া রাজ্যের একাংশ । এই ঘূর্ণিঝড় প্রাণ কেড়েছে আটজনের । নবান্নের হিসেব, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা । প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্তর সংখ্যা চার লাখের বেশি । ইতিমধ্যেই 1 লাখ 78 হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে । 2473টি বাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত । 26 হাজারের বেশি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত । আজ দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
বুলবুল আসছে, এই আশঙ্কায় কোমর বেঁধে তৈরি হয়েছিল গোটা রাজ্য । সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল । একাধিক এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের । বাতিল করা হয়েছিল একাধিক সরকারি দপ্তরের ছুটি । কিন্তু এত কিছুর পরও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আটকানো গেল না । গতকাল নবান্নর তরফে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে 6টি NDRF ও 4টি STRF পরিস্থিতির মোকাবিলায় কাজ করছে । একই সঙ্গে কাজে নামানো হয়েছে 15 হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারকে । বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের মন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে রাজ্যে 9টি ক্যাম্প খোলা হয়েছে । যেখানে কয়েক হাজার গৃহহীন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ।
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, শুধুমাত্র উত্তর ২৪ পরগনাতেই মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের । কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে একজন করে মারা গেছেন । মৃতদের মধ্যে রেবা বিশ্বাস ও মইদুল গাজ়ি বসিরহাট, প্রকৃতি মিদ্দা ও সুচিত্রা মণ্ডল হিঙ্গলগঞ্জ, বিদেশি সরকার সন্দেশখালি-2, সুলতা দাস নন্দীগ্রাম-2 ও সঞ্জয় দাস দক্ষিণ 24 পরগনার বাসিন্দা । কলকাতায় বুলবুল আছড়ে পড়ার আগেই ঝোড়ো হাওয়ার গাছ উপড়ে মৃত্যু হয় CCFC ক্লাবের কর্মী শেখ সোহেলের ।
সরকারি দপ্তরের হিসেব, এখনও পর্যন্ত 70 হাজারের বেশি ত্রিপল দুর্গতদের বিতরণ করা হয়েছে । ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে কয়েক হাজার মোবাইল টাওয়ার কাজ করছে না । সেগুলি দ্রুত মেরামতের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে । বহু সাব পাওয়ার স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । এখনও পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে ।
রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে 24 ঘণ্টা মনিটর করছে কেন্দ্রীয় সরকারও । রাজ্যের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে পরিস্থিতির বিষয়ে খোঁজখবর করেন । বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তাঁদের মধ্যে ।
এদিকে, বুলবুলের বিপর্যয়ের জেরে 13 নভেম্বর কোচবিহার সফর বাতিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ । আজ সব কর্মসূচি বাতিল করে কাকদ্বীপ যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করবেন । বকখালি, নামখানাতেও যাওয়ার কথা তাঁর । বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রশাসনিক বৈঠকেরও কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর । অন্যদিকে, ড্রোনের সাহায্যে আক্রান্ত এলাকাতে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে প্রশাসন । সরকারের পাশাপাশি পোর্ট ট্রাস্টও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে খবর, কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, গোসাবা, কুলতলিতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । বুলবুল বাংলাদেশে চলে গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সবরকম পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছে রাজ্য প্রশাসন । ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাতে আর না বাড়ে সেই বিষয়টিতে নজর রাখা হচ্ছে । রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের দুর্গত এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বুলবুল চলে গেলেও তার প্রভাব 24 থেকে 48 ঘণ্টা থাকার সম্ভাবনা । সে কারণেই সতর্কতা এখনও জারি রেখেছে রাজ্য সরকার ।