কলকাতা, 18 জানুয়ারি: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে প্রসন্ন রায়ের ৷ বৃহস্পতিবার প্রসন্ন রায়ের পাশাপাশি তাঁর 'ঘনিষ্ঠ' বলে পরিচিত ব্যবসায়ী রোহিত ঝাঁ এবং প্রাক্তন কর্মচারী প্রদীপ সিংহের বাড়িতেও বৃহস্পতিবার তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ৷ ইডি সূত্রে খবর, রোহিতের ট্যুর অ্যান্ড ট্যাভেলসের ব্যবসা রয়েছে । তাঁর বাড়ি মুকুন্দপুরে। শিক্ষক নিয়োগের টাকা রোহিতের সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল। ইডি'র দাবি ঘটনার ব্লু প্রিন্ট সাজিয়েছিলেন প্রসন্ন রায়।
নিউটাউনে একই আবাসনে থাকেন প্রসন্ন রায় ও প্রদীপ সিংহ ৷ বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ইডি আধিকারিক নিউটাউনের ওই আবাসনে পৌঁছে যান ৷ সেখানে দু'জনের ফ্ল্যাটে অভিযান চালাচ্ছেন তাঁরা । এর পাশাপাশি নিউটাউনের একটি বিল্ডিংয়ে প্রসন্ন রায়ের অফিসেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে ৷ প্রসন্নর ওই অফিসে কাজ করতেন প্রদীপ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের হাতে প্রথমে প্রদীপ সিং গ্রেফতার হন ৷ এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রসন্ন রায়ের নাম উঠে আসে । এর ভিত্তিতে প্রসন্ন রায়ের ফ্ল্যাট ও অফিসে তল্লাশি চালিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, প্রসন্ন রায়ের ট্রাভেলসের ব্যবসায় প্রদীপ সিংহ গাড়ির চালক হিসাবে কাজ করতেন । প্রদীপ চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগযোগ করতেন এবং টাকা সংগ্রহ করতেন প্রসন্ন রায়ের হয়ে । সেই টাকা প্রসন্ন রায়ের নির্দেশ মতো পৌঁছে দেওয়ার কাজও করতেন তিনি । এমনকী প্রদীপ সিংহের ই-মেল ব্যবহার করে প্রসন্ন রায় বোর্ডের উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহার সঙ্গে যোগযোগ রাখতেন এবং প্রার্থী তালিকা পাঠাতেন । প্রদীপ সিংহের ওই আইডিতে থেকে 'ছোটু' নাম ব্যবহার করে ই-মেল করা হত শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে ।
নিউটাউন, মুকুন্দপুর-সহ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে বৃহস্পতিবার শহরের মোট চারটি জায়গায় হানা দিয়েছেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা । সাতসকালে প্রসন্ন রায়ের নিউটাউনের বাড়ি ও অফিসে পৌঁছে গিয়েছে ইডি ৷ সেখানে এখনও জারি তল্লাশি অভিযান ৷ এর সঙ্গে এবার প্রসন্ন রায় 'ঘনিষ্ঠ' ব্যবসায়ী রোহিত ঝাঁ ও প্রদীপ সিংহের বাড়িতেও হানা দিল ইডি ৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত প্রসন্ন রায় এর আগে সিবিআইয়ের হাতে 2022 সালে গ্রেফতার হন ৷ তবে পরে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে সেখান থেকে জামিন পেয়ে যান ৷ এতদিন জামিনেই বাইরে রয়েছেন প্রসন্ন রায় ৷
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, প্রথম দিকে প্রসন্ন রায়ের একটি রঙের ব্যবসা ছিল। তাঁর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না ৷ তিনি নিউটাউনে খুব সাধারণভাবে থাকতেন । কিন্তু এরপর আচমকাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের । সেই সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। তারপরেই রহস্যজনকভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের' ঘনিষ্ঠ' হয়ে ওঠেন নিউটাউন এলাকার বেতাজ বাদশা। দেখতে দেখতেই বছর খানেকের মধ্যেই ফুলে ফেঁপে ওঠে প্রসন্ন রায়ের ব্যবসা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সংস্থার দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের একটি সংস্থায় কাজ করতে শুরু করেছিলেন প্রসন্ন রায় । এরপরেই তাঁর এই প্রতিপত্তি ৷
উল্লেখ্য, রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআইয়ের তরফে ইতিমধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়েছে । সেখানে প্রদীপ সিংহ, প্রসন্ন রায় ও রোহিতে ঝাঁ'র নাম রয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার । এর আগে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে নেমে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একজোটে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । সেই সমস্ত জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে অনেক নথিপত্রও উদ্ধার হয়েছিল ৷ ওই সমস্ত নথিপত্র ভালোভাবে খতিয়ে দেখেই বৃহস্পতিবার সকালে রোহিতের বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে ইডি ।
আরও পড়ুন: