কলকাতা, 11 অক্টোবর: রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার মানিক ভট্টাচার্য । তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা । নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় এবার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করল ইডির গোয়েন্দারা (ED arrests Manik Bhattacharya) ।
কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থীর উত্তরপত্র রীতিমতো নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে পর্ষদের বিরুদ্ধে । এই দুর্নীতি কাণ্ডের 'কিং পিন' ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য, এমনটাই দাবি ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী আধিকারিকদের। অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করল ইডি। উল্লেখ্য, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (Bengal Teacher Recruitment Scam) আগেই নাম জড়িয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ৷ তাঁকে একাধিকবার জেরাও করেছে ইডি ৷ সূত্রের খবর, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর 'ঘনিষ্ঠ' অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে জেরা করে মানিক ভট্টাচার্যের নাম উঠে আসে ৷ এরপর মঙ্গলবার গ্রেফতার হলেন মানিক ।
সোমবার দুপুরে হাজিরার নির্দেশ পেয়ে ইডি দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য । সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা তাঁর বিষয়-সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চান । পাশাপাশি কী ভাবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট নষ্ট করা হয়েছিল, সে বিষয়েও তাঁর কাছ থেকে জানতে চান গোয়েন্দারা । কিন্তু একাধিক প্রশ্নের উত্তর আড়াল করছিলেন মানিক ভট্টাচার্য । দুপুর গড়িয়ে তখন রাত প্রায় 1টা ।
আরও পড়ুন: করোনাকালে ছাত্রপিছু 500 টাকা নিতেন মানিক, বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনল ইডি
ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা রাতেই যোগাযোগ করেন দিল্লির সদর দফতরে । মাঝপথে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব প্রায় থমকে গিয়েছিল । কিছু একটা হতে চলেছে তার আগাম আভাস পেয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য । রাত একটা নাগাদ মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতারি মেমোয় সই করিয়ে তাঁর বাড়িতে ফোন করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ।
ইডির দাবি, মানিক ভট্টাচার্য এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় যৌথ ভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার কাজ করতেন । এই গ্রেফতারির আগে বেশ কয়েকবার মানিক ভট্টাচার্যের বয়ান রেকর্ড করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা ৷ পাশাপাশি মানিক ভট্টাচার্যের বাড়িতে গিয়েও তাঁরা তল্লাশি অভিযান চালান । সেখান থেকে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের একাধিক নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করে এবং সেগুলি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার পরেই একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে তদন্তকারীদের হাতে ।
এই গ্রেফতারির আগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের গোয়েন্দারা দু'বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন । এই বিষয়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল যে মানিক ভট্টাচার্যের কোথায় কত সম্পত্তি রয়েছে, তার পুরো হিসেব আদালতে জমা দিতে হবে ৷ যে হিসেব তিনি আদালতে জমা দেবেন তার বাইরে অন্য কোনও সম্পত্তি মানিক ভট্টাচার্য দাবিও করতে পারবেন না । জানা গিয়েছে, যে সম্পত্তির তালিকা আদালতে জমা পড়েছিল, তা ইতিমধ্যে ইডির হাতে রয়েছে এবং সেই তালিকা মিলিয়ে গোয়েন্দারা অনুধাবন করেন যে মানিক ভট্টাচার্যের আয় বহির্ভূত একাধিক সম্পত্তি রয়েছে ।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পর্ষদের সভাপতিকে অপসারণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় । সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে মানিক ভট্টাচার্য ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করলেও বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই বহাল রাখে । তার বিরুদ্ধেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya appeals Supreme Court against Calcutta HC order) ৷ তাতে তৃণমূল বিধায়ককে রক্ষাকবচ দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত ।
আজ মানিক ভট্টাচার্যকে আদালতে পেশ করে নিজেদের হেফাজতে চাইবেন ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা । মূলত মানিক ভট্টাচার্যর সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কী যোগাযোগ ছিল ? তাঁরা কী ভাবে কাজ করতেন ? আর কে কে এই কাণ্ডে যুক্ত রয়েছেন, এই সব তথ্য পেতে চাইছেন গোয়েন্দারা ।
আরও পড়ুন: পর্ষদ সভাপতির পদ থেকে অপসারণের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মানিক ভট্টাচার্য