কলকাতা, 21 অক্টোবর : অন্যদের মতো দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছেন শহরের রূপান্তরকামীরা । গত তিন বছর ধরে পুজোর আয়োজন করছেন রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিনহা ৷ হর-গৌরী বা অর্ধনারীশ্বর রূপে দুর্গার আরাধনা করেন তিনি ।
আনেকেই তাদের অন্য চোখে দেখে । কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় সবকিছু ভুলে আনন্দে মেতে থাকেন রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিনহারা ৷ হর-পার্বতীর সমন্বয়ে তৈরি অর্ধনারীশ্বর পুজো করেন তাঁরা । মেম্বার অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-এর প্রাক্তন সদস্য তিনি ।
একদিকে হলুদ রঙের দেবী দুর্গা ও অন্যদিকে নীল রঙের শিব । না সম্পূর্ণ রূপে পুরুষ না পরিপূর্ণ নারী । নর-নারীর এই মিলিত রূপের পুজোয় মেতেছেন এঁরা । সাধারণত এই রূপ বড় একটা পূজিত হয় না । তবে ঈশ্বরীর এই রূপের মাঝেই এঁরা নিজেদের খুঁজে পান । আল্পনা দেওয়া থেকে প্রতিমা সজ্জা, পুজোর জোগাড় ও ভোগ রান্না সবকিছুই করেন রঞ্জিতা ও তাঁর বন্ধুরা । এক রূপান্তরিত পুরুষ পুরোহিত করেন এই পুজো । তবে রঞ্জিতা নিজেই রং করে মাকে অর্ধনারীশ্বর রূপ দেন । একসময় সমাজে বাতিলের খাতায় নাম লেখানো একজনের হাতেই সৃষ্টি হয় স্বয়ং ঈশ্বরী ।
দুর্গাপুজো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমাদের মতো মানুষের কথা পুরান ও হিন্দু শাস্ত্রেও উল্লেখ রয়েছে ৷ তবে সমাজ সেই কথা ভুলে গিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে উপেক্ষা করেছে বারবার । আইন স্বীকৃতি দিলেও এই সমাজ এখনও স্বীকৃতি দেয়নি । আমরা বৈষ্ণব মতে মায়ের পুজো করি । আমরাও একই ঈশ্বরের সন্তান যিনি এই বিশ্ব চরাচরকে সৃষ্টি করেছেন । তাই নিজের মাকে আমাদের নিজেদের মতো করে পুজো করার অধিকার আমাদেরও রয়েছে ।"
তিনি যখন পুজোটা শুরু করেছিলেন তখন বিষয়টি নিয়ে অনেকেই নানা আপত্তি তোলেন । এখানেই শেষ নয়, তাদের নিজেদের সমাজের ভেতর থেকেও এসেছে আপত্তি । অনেকে বলেছেন, যে টাকা দিয়ে এতবড় পুজো হচ্ছে তা যদি তাঁদের উন্নতির কাজে লাগানো যায় তাহলে অনেক ভালো হতো । এই বিষয়ে রঞ্জিতা বলেন যে, "এই পুজোটা আমি একা করি না ৷ আমার বন্ধু-বান্ধব সবাই নিজেদের সাধ্যমতো খরচ দিয়ে এই পুজোকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলি ।"